ফুটবলের মোহনায় মিলেছে বাংলাদেশ-আর্জেন্টিনা

আর্জেন্টিনা এবং বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্কটা তাই অন্যরকম। কেবল ফুটবলের টানে দুই মহাদেশের দুই দেশের মানুষের এমন বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ঘটনা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। আর্জেন্টিনার প্রতি বাংলাদেশিদের আবেদন কখনোই কমবে না। একেই বোধহয় বলে ‘ফুটবলের শক্তি’।

চার বছর পরপর আয়োজিত বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে উন্মাদনার কমতি নেই বিশ্ববাসীর মাঝে। বাংলাদেশও তাঁর ব্যতিক্রম নয়, নিজেরা বিশ্বকাপে না খেললেও বিশ্বকাপ নিয়ে সবচেয়ে উন্মত্ত জাতি বাঙালিরা। দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ পুরো দেশজুড়েই সৃষ্টি করেছে উৎসবমুখর এক পরিবেশের। 

বিশ্বজুড়ে নানা দেশের সমর্থকরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও বাংলাদেশে দুই লাতিন দেশ ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার সমর্থকের সংখ্যাই বেশি। নিজেদের বিশ্বকাপে অংশ নেয়ার আক্ষেপ যেন দূর করতে চায় এই দুই দেশের সমর্থনে। এছাড়াও গুটিকয়েক জার্মানি, স্পেন সমর্থকের দেখাও মেলে এদেশের ফুটবল পাড়ায়। তবে নিজেদের হৃদয়টা বাঙালি দিয়েছে ওই পেলে-ম্যারাডোনার দেশ ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনাকেই। 

বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে বাংলাদেশিদের এই উন্মদনা ইতোমধ্যেই নজর কেড়েছে গোটা বিশ্বের। বিশেষ করে আর্জেন্টিনার গোলের পর আর্জেন্টআইন সমর্থকদের উন্মাতাল উদযাপনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

শুরুটা হয়েছিল ফিফার অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টের এক ভিডিও পোস্টের মাধ্যমে। ভিডিওতে দেখা যায় গ্রুপপর্বে মেক্সিকোর বিপক্ষে মেসির গোলের পর একত্রে উদযাপন করছে হাজারো বাংলাদেশি আর্জেন্টাইন সমর্থক। মূহুর্তেই নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়ে সেই ভিডিও। এমনকি ইংল্যান্ড কিংবদন্তি সাবেক স্ট্রাইকার গ্যারি লিনেকার সেই ভিডিওতে কমেন্ট করেন। 

ভিডিও ভাইরাল হবার পর সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন বাংলাদেশি সমর্থকরা। জার্সিপরিহিত সমর্থক, ছাদজুড়ে পতাকা, দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার, গ্রাফিতি, র‍্যালি সবকিছুর ছবি-ভিডিও প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে গোটা বিশ্বের সামনে। এছাড়া মধ্যরাতে একত্রে বসে বড় পর্দায় আর্জেন্টিনার ম্যাচ দেখার বিষয়টিও নজরে আসে সবার। 

আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে এই খবর। পত্রিকাগুলো প্রকাশ করতে থাকে সাত সমুদ্র তেরো নদী ওপারের এক দেশের মানুষের ভালোবাসার গল্প। এমনকি আর্জেন্টাইন ফুটবল ফেডারেশনের অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকেও বাংলাদেশিদের ধন্যবাদ জানিয়ে টুইট করা হয়। তাঁরা লিখেন, ‘আমাদের দলকে সমর্থন করার জন্য ধন্যবাদ! তাঁরাও আমাদের মতো পাগল।’

এমনকি আর্জেন্টাইন সাধারণ জনগণও বাংলাদেশিদের এহেন সমর্থনে বেজায় খুশি। পৃথিবীর অন্য প্রান্তে থাকা দেশটির মানুষের তাঁদের ফুটবল দলের প্রতি ভালোবাসা দেখে তাঁরা বেশ আপ্লুত। কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যায় আর্জেন্টিনার সাধারণ জনগণ বাংলাদেশ, বাংলাদেশ স্লোগান দিচ্ছে। অনেকের মনে প্রশ জাগে বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার এত সমর্থক হলো কিভাবে? কবে থেকেই বা তাঁরা আজেন্টিনা সমর্থন করেন?

বাংলাদেশের আর্জেন্টিনা সমর্থনের ধারাটা শুরু হয়ে ১৯৮৬ বিশ্বকাপের পর থেকেই। সেবারের মেক্সিকো বিশ্বকাপে দিয়েগো ম্যারাডোনার নামক এক জাদুকরের পায়ের জাদুতে গোটা বিশ্বের পাশাপাশি মোহিত হয় বাংলাদেশিরাও। সেই সাদা-কালো টিভি কিংবা রেডিও যুগ পেরিয়েছে অনেক আগেই, তবুও বাংলাদেশিরা বেরোতে পারেনি ম্যারাডোনার সেই মোহমায়া ছেড়ে।

এ যেন প্রথম প্রেমে পড়ার মতো, সবকিছু ভুলে যাওয়া যায় কিন্তু প্রথম প্রেম নয়। ম্যারাডোনার অবসরের পরও তাই আর্জেন্টিনাকে ভুলতে পারেনি বাংলাদেশিরা। বরং তাঁর জায়গাটা নিয়েছেন লিওনেল মেসি, তাঁর প্রতিটা গোলের পর সমর্থকরা ফেটে পড়েন বুনো উল্লাসে। 

আর্জেন্টিনা এবং বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্কটা তাই অন্যরকম। কেবল ফুটবলের টানে দুই মহাদেশের দুই দেশের মানুষের এমন বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ঘটনা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। আর্জেন্টিনার প্রতি বাংলাদেশিদের আবেদন কখনোই কমবে না। একেই বোধহয় বলে ‘ফুটবলের শক্তি’।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...