বাঘ কিংবা বাবর

‘বাঘ’ শব্দটা শুনলেই মাথায় কোনো এক দানবীয় প্রাণির চিত্র ভেসে ওঠে। কি হিংস্র তাঁর চাহনী! সে চাহনীতে যেন ভয়ে থরথর করে কাঁপে জঙ্গলের প্রতিটি প্রাণি। বাঘ শব্দের আরও একটা প্রতিশব্দ রয়েছে। খুব সম্ভবত ফার্সি শব্দ। শব্দটা ‘বাবর’। এই উপমহাদেশে মুঘল সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন করেছিলেন বাবর।

আর এখন সেই বাঘ হয়েই আর একজন শাসন করছেন বিশ্ব ক্রিকেট। তিনি পাকিস্তানের বাবর আজম। পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। তবে সে অধিনায়ক সত্ত্বা ছাড়িয়ে তিনি যেন আলোক রশ্মি ছড়াচ্ছেন সময়ের সেরা ব্যাটার হয়ে। তাঁর ব্যাটে রান যেন বর্ষার দিনে ফুলে-ফেঁপে ওঠা কোনো এক ঝর্ণা। অবিরত জলধারার নেই যেন কোনো শেষ।

গেল বছর থেকেই ছিলেন ফর্মে। সংস্করণ যেন স্রেফ এক শব্দ। বড় কিংবা ছোট – সব সংস্করণেই বাবর খেলেন বাঘের মত। তিনি দৃপ্তপায়ে হেঁটে যান আপন ছন্দে। এই ছন্দ এখন কাঁপন ধরায় প্রতিপক্ষের মনে। চাহনীতে হিংস্রতা নেই। তবে ব্যাট যেন এক খোলা তরবারি। আঘাতে কুপোকাত হওয়া অবধারিত। নিজের ফর্মে একেবারে তুঙ্গে রয়েছেন বাবর আজম।

সাদা বলের ক্রিকেটটায় যেন তাঁর ফর্ম বাকি সবার থেকেই আলাদা। এখানটায় তিনি একটি রেকর্ড ছুঁয়ে দেখার দ্বারপ্রান্তে ছিলেন। তবে আর সেটা হয়ে ওঠেনি। টানা চার খানা শতকের রেকর্ডে একচ্ছত্র আধিপত্য লঙ্কান ক্রিকেটার কুমার সাঙ্গাকারার। সে রেকর্ডটা ছোঁয়া হয়নি মাত্র ২৩ রানের জন্যে। একটা আক্ষেপের জন্ম তিনি দিলেন ঠিকই। তবে আরও একটি রেকর্ড ভাঙ্গা তাঁর পক্ষে এখনও সম্ভব।

সেটা নয় ম্যাচে অর্ধশতকের। আর মাত্র তিনখানা প্রয়োজন। সে রেকর্ডটা আবার নিজের দখলে রেখেছেন পাকিস্তানের আরেক ক্রিকেটার জাভেদ মিয়াঁদাদ। অগ্রজের সে রেকর্ডে নিশ্চয়ই ভাগ বসাবেন তিনি। তাঁর ফর্ম তো সে দিকটাই ইঙ্গিত করছে। নতুন পঞ্জিকা বর্ষে টেস্ট ও ওয়ানডে মিলিয়ে তিনি ম্যাচ খেলেছেন আটটি। যার চারটিতে রয়েছে তাঁর সেঞ্চুরি।

সাদা বলের ক্রিকেটটায় এবার যেন অদম্য ফর্ম তাঁর অব্যাহত। সেখানে পাঁচ ম্যাচ খেলে টানা তিন ম্যাচে করেছেন শতক। মোট মিলিয়ে রঙিন পোশাকে তাঁর রান এখন ৪৫৬। গড় দেখে চোখ ছানাবড়া হওয়া যেন নিশ্চিত। প্রায় ১১৪। সেটা আবার তাঁর ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান। এমন অসাধারণ ফর্মের দেখা সচরাচর তো আর মেলে না। দলের দায়ভার সামলে নিজের স্বাভাবিক খেলাটা ক’জনই বা খেলতে পারে।

বাবর আজম পারেন। তিনি করেও দেখান। দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্বভার তাঁর ব্যক্তিগত পারফরমেন্সে বিন্দুমাত্র তারতম্য ঘটায় না। তিনি দেন না। বরং তিনি দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন ব্যাট হাতে। এই তো গেল বছর তিনি দলকে ব্যাট এবং অধিনায়কত্বের সমন্বয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বারপ্রান্তে। তাঁর রানের ফোয়ারা যেন বন্ধ হওয়ার কোন নামই নিচ্ছে না।

সামনেই আরও একটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেখানটায় নিশ্চয়ই আবার পারফর্ম করতে মুখিয়ে রয়েছেন বাবর আজম। ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং র‍্যাংকিংয়ে তিনি রয়েছে্ন সবার উপরে। বাবর ঠিক যেন মুঘল সম্রাট বাবরের ন্যায় তাঁর রাজত্ব বিস্তারে মুখিয়ে রয়েছেন। তিনি যেন চাইছেন গোটা বিশ্ব ক্রিকেটের শাসনকর্তা হতে। তিনি সে পথেই হাঁটছেন তাঁর ব্যাট হাতে।

সেটাই যেন পরিণত হয়েছে তাঁর তরবারিতে। তিনি সে তরবারি চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রশ্ন জাগে, তাঁকে রুখবে কে? ঠিক রুখতে পারাটাও কি সম্ভব হবে? সে প্রশ্নের উত্তর হয়ত সময় বলে দেবে। তবে বাবর আজমের এই ফর্ম নিশ্চয়ই বেশ উপভোগের এক কারণ। তাঁর কভার ড্রাইভ গুলো হচ্ছে আরও দারুণ। তিনি এমন করেই হয়ত মুগ্ধতা ছড়িয়ে যাবেন যতদিন করবেন বিচরণ ক্রিকেটে্র সবুজ প্রাঙ্গণে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link