নড়বড়ে টপ অর্ডার ও বাঁহাতি চক্র
খালি চোখে এই সমস্যাটা হয়তো বোঝা যাচ্ছেনা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ভুগছে এই বাঁহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের কারণে। এই শেষ কয়েক টেস্টে প্রায় প্রতি ম্যাচেই বাংলাদেশ দ্রুত উইকেট হারিয়ে ফেলেছে। এর পিছনের কারণ হিসেবে অনেক কিছুকেই দায়ী করা হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বড় কারণ যেন অনেকটা চোখের আড়ালেই।
টেস্ট ক্রিকেটে এই মুহূর্তে বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় সমস্যা কী? এমন প্রশ্নের উত্তরে আপনি হয়তো বলবেন অধিনায়কত্ব। তবে সেই সমস্যার আপাতত একটা সামাধান করা গেছে। কিন্তু আরেকটি বড় সমস্যা অনেকদিন ধরেই পিছু নিয়েছে বাংলাদেশের টেস্ট দলে। সেটি হচ্ছে টপ অর্ডার ও বাঁহাতি ব্যাটার।
খালি চোখে এই সমস্যাটা হয়তো বোঝা যাচ্ছেনা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ভুগছে এই বাঁহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের কারণে। এই শেষ কয়েক টেস্টে প্রায় প্রতি ম্যাচেই বাংলাদেশ দ্রুত উইকেট হারিয়ে ফেলেছে। এর পিছনের কারণ হিসেবে অনেক কিছুকেই দায়ী করা হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বড় কারণ যেন অনেকটা চোখের আড়ালেই থেকে গেছে।
একটু খুলে বলা যাক। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম চারজন ব্যাটসম্যানের মধ্যে তিনজনই বাঁহাতি। আর এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা সহজ কথায় নতুন বলে প্রতিপক্ষ পেসারদের সামলাতে পারছেন না। বিশেষ করে ডানহাতি পেসারদের রাউন্ড দ্য উইকেটে করা বলগুলো সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে তামিম ইকবাল, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হকদের। কখনো কখনো সাকিব আল হাসানকেও।
এই যেমন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের কথাই ধরা যাক। প্রথম ইনিংসে মাত্র ২৪ রানেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। আর এরমধ্যে চারজনই ছিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। সাকিব, তামিম, শান্তরা নিজেদের উইকেট দিয়ে এসেছিলেন শ্রীলঙ্কার দুই ডানহাতি পেসার কাসুন রাজিথা ও আসিথা ফার্নান্দোর বলে।
ডানহাতি পেসারদের রাউন্ড দ্য উইকেটে এসে করা বলগুলোতে বাংলাদেশের বাঁহাতি ব্যাটসম্যানরা হয় বোল্ড হচ্ছেন , নাহয় এলবিডব্লু। আর এই দুটি কোনরকমে আটকানো গেলে আবার শিকার হচ্ছেন কট বিহাইন্ডের। এই সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ও সবার আগে থেকেই ভুগছেন বাংলাদেশের সফলতম ওপেনার তামিম ইকবাল। প্রায় সময়ই বিভিন্ন দলের ডানহাতি পেসাররা তামিমের এই দুর্বলতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গিয়েছেন।
এই যেমন গতবছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডানহাতি পেসার কেমার রোচ তামিমকে রীতিমত অসহায় করে তুলেছিলেন। এরপর এবছর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজেও দেখা গিয়েছে তামিমের এই অসাহায়ত্ব। আফগান পেসার ফজল হক ফারুকী তামিমকে সেই সিরিজে বাইশ গজে দাঁড়াইতেই দিচ্ছিলেন না।
তামিমের হয়তো ডানহাতি পেসারদের বিপক্ষে এই দুর্বলতা একটু বেশিই। তবে পৃথিবীর সব বাঁহাতি ব্যাটসম্যানই কম বেশি এই সমস্যায় পড়েছেন। টেস্ট ক্রিকেটে ডানহাতি পেসাররা এখন বাঁহাতি পেসার দেখলেই রাউন্ড দ্য উইকেটে বল করা শুরু করেন।
মূলত ২০০৫ সালে অ্যাশেজ সিরিজে রাউন্ড দ্য উইকেটে এসে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে বোলিং করেছিলেন ইংল্যান্ডের অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ। বাঁহাতি অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যান অ্যাডাম গিলক্রিস্টের বিপক্ষে সেটি দারুণ কাজে দেয়। এরপর থেকেই ক্রিকেট দুনিয়ায় এই রাউন্ড দ্য উইকেট বোলিং ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
একই সমস্যায় পড়ছেন মুমিনুল হক ও নাজমুল হোসেন শান্তরাও। ফলে বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা টেস্টে ভালো শুরু এনে দিতে পারছেন না। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে যেমন পাঁচ ও সাতে ব্যাট করতে নামা লিটন ও মুশফিককে হাল ধরতে হয়েছিল।
এছাড়া বাংলাদেশ আরো বেশি ভুগছে দুই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের অফ ফর্মের কারণে। মুমিনুল হক ও নাজমুল হোসেন শান্ত অনেকদিন ধরে রান করতে পারছেন না। ফলে তামিম কোন কারণে ব্যর্থ হলেই বড় বিপদে পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
তাই তিন ও চার নাম্বারে যেই দুজনই ব্যাট করুক তাঁদের থেকে রান আসাটা ভীষণ জরুরি। সদ্য বিদায়ি টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হককে অন্তত আরো একটি সিরিজ সুযোগ দিবে বাংলাদেশ। ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক যে এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের সেরা দের একজন।
ওদিকে টানা ব্যর্থ হয়ে চলেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ফলে তাঁকে খানিকটা বিরতি দিতে পারে বাংলাদেশ। ওদিকে সাকিবের জায়গায় খেলা ইয়াসির আলি রাব্বি সাদা পোশাকেও নিজেকে প্রমাণ করেছিলেন। ফলে টপ অর্ডারে রাব্বির সংযুক্তি হতে পারে এই মুহূর্তে সবচেয়ে ভালো সমাধান।