দুর্ভাগ্যের ঘেরাটোপ ছিড়বে বাংলাদেশ

দুঃসময়ের ঘেরাটোপে আটকে আছে বাংলাদেশ। যেই মুহূর্তেই মনে হতে শুরু করেছে সবকিছু ঠিকঠাক, তখনই কোন না কোন দু:সংবাদ এসে বিষাদের জন্ম দিয়েছে। সেই তামিম ইকবালের অবসর, ইনজুরি। এরপর ক্রমান্বয়ে এক এক করে নতুন রুপে প্রতিবার ব্যাকফুটে গিয়েছে বাংলাদেশ।

সর্বশেষ সংযোজন নাজমুল হোসেন শান্তর এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে যাওয়া। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছে শ্রীলঙ্কার কাছে। শুরুটাই হয়েছে একেবারেই মুখ লুকানোর মত করে। সেই ম্যাচেও একাই লড়েছিলেন শান্ত। খেলেছিলেন ৮৯ রানে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস।

পরের যে ম্যাচে বাংলাদেশ বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করল, সেই ম্যাচেও শান্তর ব্যাটে ছিল রান ফোয়ারা। ১০৪ রানে তিনি থেমেছিলেন। তবে তা দুর্ভাগ্যজনকভাবে। ঠিক সেখান থেকেই আবার শুরু হয় দুশ্চিন্তার। চিন্তা যেন পিছুই ছাড়তে চায় না বাংলাদেশ ক্রিকেটের।

বুধবার এই টুর্নামেন্টের অন্যতম শক্তিশালী দল পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের পেস ত্রয়ী ভারতের দক্ষ আর অভিজ্ঞ ব্যাটিং দূর্গকে ধসিয়ে দিয়েছে। এমন এক বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে শান্তকে নিশ্চিতরুপেই দলে প্রয়োজন ছিল। কিন্তু হতাশ হওয়া ছাড়া আর তেমন কিছুই করার যেন নেই।

আবারও সেই ওপেনিং নিয়ে প্রশ্ন জেগেছে সবার মনে। মেকশিফট ওপেনার মেহেদী হাসান মিরাজ আগের দিন ক্লিক করেছেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে তিনি সেই পারফরমেন্সের প্রতিচ্ছবি ঘটাতে পারবেন, সেটার কোন নিশ্চয়তা নেই। তা অবশ্য কারো ক্ষেত্রেই নেই। কিন্তু ওপেনিংয়ে বরং দু’জন বা-হাতি বেশ কাজে আসতে পারে বাংলাদেশের জন্যে।

নতুন বলে শাহীন শাহ আফ্রিদি সুইং করাতে পারেন দারুণ। ডানহাতি ব্যাটারদের ক্ষেত্রে সুইংটা ভেতরের দিকে হয়। আর তাতে রোহিত শর্মার মত ব্যাটারদেরও উইকেট উড়ে যায়। অন্যদিকে বা-হাতি ব্যাটারদের বিপক্ষে শাহীন শাহ আফ্রিদির স্ট্রাইকরেট তুলনামূলক বেশি। সেদিক থেকে বাংলাদেশ আবারও তরুণ তানজিদ তামিমের উপর ভরসা করতে পারে। কিংবা নতুন কোন মেকশিফট ওপেনারকে দেখা যেতে পারে।

যেহেতু লিটন দাস দলের সাথে যুক্ত হয়েছেন, তার মানে দাঁড়ায় তিনি একাদশে যুক্ত হবেন। আপাতদৃষ্টিতে সদ্যই অসুস্থতা কাটিয়ে ওঠা লিটনকেই নিতে হবে ওপেনিংয়ের দায়িত্ব। সেদিক বিবেচনায় আবার ওপেনিংয়ে দু’জন ডানহাতি খেলাতে চাইবে না বাংলাদেশ দল। তাতে করে মিরাজকে ওপেনিংয়ে দেখার সম্ভাবনা একটু ক্ষীণ।

দুশ্চিন্তার অবশ্য শেষ নেই। বাংলাদেশ দলের ইনফর্ম নম্বর তিন ব্যাটার শান্ত নেই। স্বাভাবিকভাবেই সেই জায়গাটা হয়েছে ফাকা। সেখানটায় খেলবে কে? সহজ সমাধান অবশ্য অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। কেননা তিনে ব্যাট করবার অভিজ্ঞতা রয়েছে সাকিবের। টপ অর্ডার নিয়ে হাজারটা দুশ্চিন্তা থাকলেও বাংলাদেশের মিডল অর্ডার বেশ সলিড।

তাওহীদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিমরা সেই জায়গাটা সলিড রেখেছেন। যদি সাকিবই তিন নম্বরে খেলেন, তবে আফিফ হোসেনকে দেখা যেতে পারে মিডল অর্ডারে। শেষের দিকে দ্রুত রান তোলার প্রতিশ্রুতি অবশ্য শামীম হোসেন পাটোয়ারি দিয়েই রেখেছেন। নিজের অভিষেক ম্যাচের শুরুটাই করেছিলেন তিনি দূর্দান্ত এক ফ্লিক শটে। রান আউটে কাটা না পড়লে নিশ্চিতভাবেই তিনি দলকে দ্রুত কিছু রান তুলে দিতে পারতেন।

তাছাড়া লোয়ার মিডেল অর্ডারে মিরাজও দ্রুত কিছু রান তুলে নিতে পটু। সুতরাং দলে স্রেফ লিটনের অন্তর্ভুক্তি হতে পারে পাকিস্তানের বিপক্ষে। পরিবর্তন আসলে তা আসবে ব্যাটিং অর্ডারে। তাছাড়া বোলিং আক্রমণটা একই রকম রাখতে চাইবেন বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট। তাছাড়া শামীম আফিফের অন্তর্ভুক্তিতে ষষ্ঠ বোলারেরে ঘাটতিও ঘুচে যায়।

আবার যেহেতু পাকিস্তান দলে ডানহাতি ব্যাটারদের আধিক্য বেশি, সেদিক থেকে নাসুম আহমেদকে একাদশে দেখতে পাওয়ার কিঞ্চিৎ সম্ভাবনা থেকেই যায়। কিন্তু সেদিক বিবেচনায় বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপটা সংক্ষিপ্ত হয়। সেটাও আবার খানিকটা ঝুঁকির। অবশ্য সাকিব আল হাসান তো ঝুঁকি নিতেই পছন্দ করেন।

এতসব দুশ্চিন্তা আর দুর্ভাগ্যের মাঝেও বাংলাদেশ দল হিসেবে পারফরম করছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে সুপার ফোরেও নিশ্চয়ই লড়াইটা করতে চাইবে। তবে লড়াইটা স্রেফ পাকিস্তানের বিপক্ষে নয়, লাহোরের তীব্র গরমের বিপক্ষেও করতে হবে বাংলাদেশকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link