বাংলাদেশের লেগস্পিনার ও লেগস্পিন সংকট

লেগস্পিনের বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতার কথা কারোরই অজানা নয়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম দুই ওয়ানডেতেও বদলায়নি সে দৃশ্য, আদিল রশিদ একাই শিকার করেছেন ছয় উইকেট। অতীতেও কুলদীপ যাদব, রশিদ খান, ইয়াসির শাহ এবং অ্যাডাম জাম্পাদের বিপক্ষে ভুগতে হয়েছে বাংলাদেশকে। 

লেগস্পিনের বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতার কথা কারোরই অজানা নয়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম দুই ওয়ানডেতেও বদলায়নি সে দৃশ্য, আদিল রশিদ একাই শিকার করেছেন ছয় উইকেট। অতীতেও কুলদীপ যাদব, রশিদ খান, ইয়াসির শাহ এবং অ্যাডাম জাম্পাদের বিপক্ষে ভুগতে হয়েছে বাংলাদেশকে। 

আদিল রশিদ দ্বিতীয় ওডিয়াইতে একাই গুঁড়িয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের মিডল অর্ডারকে। একে একে সাজঘরে ফিরিয়েছেন সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, আফিফ হোসেন এবং মেহেদি হাসান মিরাজকে। স্যাম কারানের শুরুর আঘাতের পর রশিদের বিধ্বংসী বোলিংয়ের ফলেই আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি টাইগাররা। এছাড়া প্রথম ওডিয়াইতেও ৪৭ রানে দুই উইকেট তুলে নিয়ে ইংলিশদের ম্যাচে ফিরিয়েছিলেন এই লেগস্পিনারই। 

লেগস্পিনারদের বিপক্ষে বাংলাদেশি ব্যাটারদের দুর্বলতার কথা কারোরই অজানা নয়। এর আগে ২০২২ সালে চট্টগ্রামে কুলদীপ যাদব, ২০২১ সালে টি-টোয়েন্টি সিরিজে জাম্পা এবং ২০১৯ সালে রশিদ খানের কাছে রীতিমত অসহায় আত্নসমর্পন করেছেন টাইগার ব্যাটাররা। 

বাংলাদেশ থেকে লেগস্পিনার খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর এক ঘটনা। জুবায়ের হোসেন ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলা মাত্র দ্বিতীয় লেগস্পিনার। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে ম্যাচ খেলার অভাবে তাঁর প্রতিভা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়েছে। বর্তমানে বেশিরভাগ সময়েই তাঁকে দেখা যায় বিভিন্ন সিরিজে নেট বোলার হিসেবে। 

আমিনুল ইসলাম বিপ্লব অবশ্য নিয়মিত লেগস্পিনার না হলেও বেশ কিছুদিন জাতীয় দলে খেলেছেন। বিপ্লব অবশ্য ছিলেন মূলত ব্যাটিং অলরাউন্ডার। কিন্তু বছর তিনেক আগে নেটে তাঁর বোলিং মনে ধরে নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু এবং কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর। বিপ্লব অবশ্য বর্তমানে ঘরোয়া ক্রিকেটে রান পেলেও লেগস্পিনের তেমন উন্নতি হয়নি। 

বাংলাদেশের নতুন ক্রিকেটার উঠে আসার পাইপলাইন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট কেন্দ্রিক, যাদের কোচ এবং ম্যানেজমেন্ট লেগস্পিনারদের উপর ভরসা করতে পারেন না। তাঁরা বরং একজন লেগির চাইতে বাঁ-হাতি স্পিনারকে খেলাতেই বেশি আগ্রহী। ফলে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে একজন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান কেবলমাত্র কয়েক ওভারই লেগস্পিনের বিপক্ষে ব্যাট করার সুযোগ পান।  

বাংলাদেশ অবশ্য চেষ্টা করছে তাঁদের এই সংস্কৃতিতে পরিবর্তনের জন্য। প্রায় এক দশক আগে ইংল্যান্ডও ভুগেছে একই সমস্যায়। ২০১৫ সালে বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর কোচ ট্রেভর বেইলিস এবং অধিনায়ক এডউইন মরগ্যান আদিল রশিদকে জাতীয় দলে নিয়ে আসেন উইকেট টেকিং বোলার হিসেবে। রশিদও আস্থার প্রতিদান দেন দারুণভাবে, ফলে আরো একবার লেগস্পিনে ভরসা করতে শুরু করে ইংলিশরা। 

রশিদের সাফল্যের পর গত বছরদুয়েকে আরো কয়েকজন তরুণ লেগস্পিনারকে বাজিয়ে দেখছে ইংল্যান্ড। সেই তালিকার সর্বশেষ সংযোজন হলেন ১৮ বছর বয়সী রেহান আহমেদ। চট্টগ্রামে তৃতীয় ওডিয়াইতে অভিষেকের অপেক্ষায় আছেন এই তরুণ। 

২০১৪ সালে চান্দিকা হাতুরুসিংহে রীতিমতো লড়াই করে জাতীয় দলে সুযোগ করে দিয়েছিলেন জুবায়ের হোসেনকে। কিন্তু পর্যাপ্ত ম্যাচ খেলার অভাবে হারিয়ে গেছেন এই তরুণ। বর্তমানে গোটা বিশ্বে লেগস্পিনারদের প্রাধান্য দেয়া হলেও বাংলাদেশ ক্রিকেটের কাছে এর কোনো জবাব নেই। প্রতিভাবান কোনো তারকা উঠে আসার সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। টাইগারদের স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথের অধীনে অবশ্য চারজন লেগস্পিনার নিয়মিত ট্রেনিং করছেন। 

হেরাথ বলেন, ‘সব কিছুরই একটা প্রসেস আছে, সেই কারণেই রিশাদ এবং বিপ্লব জাতীয় দলের সাথেই আছে। দলের সাথে অনুশীলন করার সাথে সাথে তাঁরা নিজেদের বোলিংয়ে উন্নতি আনছেন। আমাদেরকে দেখতে হবে আমাদের হাতে কারা আছেন। যদি কেউ না থাকে, তাহলে সীমিত সামর্থ্যের মাঝে থেকেও সেরাটা বের করে আনতে হবে। সেই কারণেই রিশাদ এবং বিপ্লবকে প্রস্তুত করা হচ্ছে পরবর্তী পর্যায়ের জন্য।’

হেরাথের ভাষ্যমতে বাংলাদেশি ব্যাটারদের লেগস্পিনের বিরুদ্ধে আরো ভালো ব্যাট করতে হবে, সেটা উইকেট হারানো ঝুঁকি নিয়ে হলেও। হেরাথ বলেন, ‘আমাদের কেবল উইকেট নিয়ে ভাবলে চলবে না, বরং রান করার উপায় বের করতে হবে। মইন আলি এবং আদিল রশিদ দুজনেই ভালো মানের স্পিনার। তাঁরা অভিজ্ঞ এবং ফ্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের সুবাদে উপমহাদেশের কন্ডিশন সম্পর্কে জানে। তাঁরা সেই সুবিধাই নিচ্ছে।’

হেরাথের মতে, বাংলাদেশি বোলারদের ব্যাটিং নির্ভর পিচে আরো ভালো বল করার কৌশল আয়ত্ত্ব করতে হবে। দ্বিতীয় ওডিয়াই শেষে অধিনায়ক তামিম ইকবালও সেই সুরেই তাল মিলিয়েছেন। হেরাথ বলেন, ‘আপনাকে সব সময় ব্যাটারকে আক্রমণ করতে হবে না। কখনো কখনো ডিফেন্সিভ স্টাইলেও বোলিং করতে হবে। তাঁদেরকে এই ব্যাপারগুলো বুঝতে হবে।’

তামিমের মতে, ২০২৩ বিশ্বকাপের শেষ চারে জায়গা করে নিতে বাংলাদেশি বোলারদের আরো বেশি রক্ষণাত্নক বোলিং করতে জানতে হবে। তিনি বলেন, ‘সব সময়েই উন্নতির জায়গা থাকে। আমরা জানি যখন স্পিনাররা উইকেট থেকে সাহায্য পাবে না, তখন পেসারদের উপর নির্ভর করতে হবে। আমাদের তখন রক্ষণাত্নক বোলিং করতে হবে, যদি আমরা বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল কিংবা ফাইনাল খেলতে চাই।’

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...