সিনিয়র ক্রিকেটারদের ছায়াতলেই সমৃদ্ধির পথে হাঁটেন উঠতি ক্রিকেটাররা। এরপর এক সময় সিনিয়র ক্রিকেটারের শূন্য জায়গা পূর্ণ হয় সেই সব উঠতি ক্রিকেটার দ্বারাই। ক্রিকেটের স্রোতটাই ঠিক এমন।
সুনীল গাভাস্কারের পর ভারতীয় ক্রিকেট শচীন যেমন এসেছে, তেমনি শচীনের উত্তরসূরি হয়ে শ্রেষ্ঠত্বের পথে হেঁটেছেন বিরাট কোহলিও। কিংবা ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটে গ্যারি সোবার্স থেকে ব্রায়ান লারা। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে স্টিভ ওয়াহ থেকে রিকি পন্টিং, স্টিভ স্মিথ।
ইংলিশদের ক্রিকেটে গ্রাহাম গুচ থেকে অ্যালিস্টার কুক- এমন শ্রেষ্ঠত্বের ব্যাটন বদলের ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে বাইশ গজের ক্রিকেটে। বাংলাদেশেও কি সেই ব্যাটন বদলের সংস্কৃতি তৈরি হতে শুরু করেছে?
মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক, রিয়াদ- অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই বাংলাদেশ ক্রিকেটে তাদের অবদান অনেক। তবে এই পাঁচটা নামই তো শুধু বাংলাদেশ ক্রিকেটের সমার্থক হতে পারে না।
ক্রিকেট এগিয়ে যাবে, সেই সাথে এগোবে বাংলাদেশও। এভাবে ইতিহাসের অংশ হবেন সাকিব তামিমরা। আর সময়ের সাথে বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবে তরুণরা।
বিশ্ব ক্রিকেট ঠিক এভাবেই চলে। এবার বাংলাদেশও সেই পথে হাঁটছে। সিলেট টেস্টের কথাই ধরা যাক। দলে নেই সাকিব, তামিম। আগেই এই ফরম্যাট থেকে অবসর নিয়েছেন রিয়াদ।
এবারের দলে সিনিয়র ক্রিকেটারদের মধ্যে ছিলেন শুধু মুশফিক। তারুণ্য উদ্দামে পূর্ণ দলটা ঠিকই কিন্তু ম্যাচটি জিতে নিয়েছে। সিনিয়র ক্রিকেটার ছাড়া অচল বাংলাদেশ- এমন একটা বদনাম যেন এই ম্যাচ দিয়েই ঘুচাল নাজমুল হোসেন শান্ত নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ।
কাছাকাছি সময়ে আরেকটি টেস্ট জয়ের কথাও সামনে আসে। মাউন্ট মঙ্গানুইতে কিউইবধ। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তাদেরকেই হারানো, তাও আবার বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্বলতম ফরম্যাট টেস্টে।
এমনটাও কি কেউ ভেবেছিল? এমন ভাবনার উর্ধ্বে গিয়ে সেবার ম্যাচ জয়ের নেপথ্যে ছিল তরুণ ক্রিকেটাররাই। কাকতালীয় ব্যাপার হলো, সিলেট টেস্টের মতো সেবারও দলে ছিলেন না সাকিব-তামিম।
সাকিব-তামিম, এ দুই ক্রিকেটারই বাংলাদেশ ক্রিকেটের দুই দিকপাল। তবে এটাও নির্জল সত্য যে, তাঁরা দুজনই রয়েছেন ক্যারিয়ারের অন্তিম লগ্নে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ যাত্রায় তাই সাকিব, তামিমদের উত্তরসূরি তৈরি করার মোক্ষম সময় এটাই। একই সাথে সিনিয়র ক্রিকেটার বাদে জয়ের অভ্যাস গড়ে তোলার প্রয়োজন।
স্বস্তির ব্যাপার হচ্ছে, বিশ্বকাপে ভরাডুবির পরও নতুন অধিনায়কের নেতৃত্বে শুরুটা জয় দিয়ে করা গিয়েছে। আরো সুখকর ব্যাপার হচ্ছে, এ সময়ে সাফল্যের তৃপ্ততাই শেষ কথা নয়। প্রয়োজন সাফল্যের ধারাবাহিকতা।
সিলেট টেস্টে কিউইবধের পর টাইগার কাপ্তান শান্তর কন্ঠে সেই তেজোদীপ্ত ভাবনাটাই উঠে এসেছে। তাঁর দৃষ্টিতে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এ ম্যাচ জয়ে উল্লাসে ভাসতে চান না তিনি, জিততে চান পরের ম্যাচটিও।
দিন বদলের গল্প তো লিখতে হয় এভাবেই। সাকিব-তামিমরা একদিন থেমে যাবেন। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট তো চলতে থাকবে আপন গতিতে। আর সেই গতি অটুট রাখতেই প্রয়োজন উঠতি ক্রিকেটারদের বড় দায়িত্ব নেওয়ার স্বতঃস্ফূর্ততা। শান্তর অধীনে সেই শুরুটা অন্তত হচ্ছে। ধারাবাহিকতায় শুধু এখন একমাত্র চাওয়া।