ম্যাচের শুরুতেও ব্যাকফুটে ছিল। ব্যাকফুটে ছিল শেষের দিকেও। প্রথমে ভারতের পেসারারা, আর শেষে রোহিত শর্মার শো। কিন্তু, এর বাদে বাকি সময়টা যে ছিল বাংলাদেশের। আর এরই মিশেলে মিরপুরে দারুণ একটা থ্রিলার জিতল লিটন দাসের দল। ২০১৫ সালের পর আবারও দেশের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ দল।
শুরুটা নড়বড়ে ছিল বাংলাদেশের। এনামুল হক বিজয় ভাল শুরু করলেও নয় বলে ১১ রান করে ফিরে যান সাজঘরে। দলীয় রানও তখন ১১। বাংলাদেশের উইকেট পতনের মিছিল শুরু হয় সেখান থেকেই। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে স্বাগতিকরা।
মিরপুরে ৩৯ রানের মাথায় দ্বিতীয়, ৫২ রানে তৃতীয় ও ৬৬ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় বাংলাদেশ দল। এরপর ১৯ তম ওভারে পরপর দু’বলে সাজঘরে ফিরেন মুশফিকুর রহিম ও আফিফ হোসেন ধ্রুব। মাত্র ৬৯ রানে প্রথম ছয় উইকেট হারায়। সেখান থেকে সম্মানজনক রান করতে পারাটাই বড় ব্যাপার ছিল।
তবে, ম্যাচে বাংলাদেশের ইনিংসের চিত্রনাট্যটা আসলে এখান থেকেই নতুন করে লেখা হয়। অনন্য এক জুটি গড়েন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মেহেদী হাসান মিরাজ। ১৪৮ রানের জুটি গড়েন মিরাজ ও রিয়াদ। এটা অষ্টম উইকেটে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে যেকোনো দলের সেরা জুটি। আর যেকোনো উইকেটে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সেরা জুটি।
৯৬ বলে ৭৭ রান করে রিয়াদ ফিরে গেলেও শেষ পর্যন্ত ছিলেন মিরাজ। তিনি ইনিংসের শেষ বলে নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পেয়ে যান। ৮৩ বলে ১০০ রান করে অপরাজিত ছিলেন তিনি। এমনকি নবম উইকেট জুটিতেও বাংলাদেশ ৫৪ রান যোগ করে, তাও আবার মাত্র ২৩ বলে। নাসুম আহমেদ ১১ বলে ১৮ রানে অপরাজিত ছিলেন।
এই উইকেটে ২৭১ রান তাড়া করা সহজ নয়। আর ভারতের বিপদ বাড়ায় বাংলাদেশের পেসাররা। রোহিত শর্মার জায়গায় ওপেনিংয়ে নামা বিরাট কোহলি ও শিখর ধাওয়ান দ্রুতই ফিরে যান সাজঘরে। ১৩ রানের মাথায় দুই উইকেট নেই ভারতের। এরপর ৩৯ রানের মাথায় তৃতীয় ও ৬৫ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় ভারত।
এখান থেকে ভারতের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পের সূচনা হয়। ১০১ বলে ১০৭ রানের জুটি গড়েন শ্রেয়াস আইয়ার ও অক্ষর প্যাটেল। ১০২ বলে ৮২ রান করেন আইয়ার। অক্ষর প্যাটেল ৫৬ বলে ৫৬ রান করেন। তবে, এই দু’জন পর পর আউট হয়ে যান। মিরাজ ফেরান আইয়ারকে। আর এবাদত সাজঘরে পাঠান অক্ষরকে। আবারও রংবদল ম্যাচে। এই দু’জনের পর শার্দুল ঠাকুরও ফিরে গেলে বাধ্য হয়ে আঙুলে চোট নিয়েই নামতে হয় অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে। ক্রিস গেইলের পর দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৫০০ টি ছক্কার মাইলফলকও ছুঁয়ে ফেলেন তিনি।
শেষ অবধি ছিলেন ভারতের অধিনায়ক। শেষ দুুই ওভারে জয়ের জন্য ভারতের দরকার ছিল ৪১ রান। রোহিত ৪৯ তম ওভারে নেন ২১ রান। শেষ ওভারে জিততে দরকার ছিল ২০ রান। প্রথম পাঁচ বলে ১৪ রান করেন রোহিত। শেষ বলে জিততে দরকার ছিল একটি ছক্কার। কিন্তু, সেখানে মুস্তাফিজুর রহমানের ইয়র্কারে পারেননি রোহিত।
তবে, রোহিতের ইনিংস কৃতিত্বের দাবি রাখে। আঙুলে ব্যান্ডেজ নিয়ে তিনি ২৮ বলে ৫১ রানের ইনিংস খেলে অপারাজিত থাকেন। কারও সঙ্গ পেলে হয়ত ফলাফলটা ভিন্ন হতে পারত।
বাংলাদেশ জিতে পাঁচ রানে। এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ পকেটে। বাংলাদেশের ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয় অধিনায়ক হিসেবে অধিনায়কত্বের অভিষেক সিরিজটাই জিতে নিলেন লিটন দাস।