ম্যাচের প্রথম মিনিটেই গোলরক্ষক মোহাম্মদ আসিফের ভুল। টানটান উত্তেজনাকর ফাইনালের প্রথম মিনিটেই পেনাল্টি পেয়ে যায় ভারত। শুরুতেই পিছিয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। সত্যি হতেও সময় নেয়নি। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা গুরকিরাত সিং কোনরকম ভুল ছাড়াই বল জড়ায় জালে।
শুরুতেই পিছিয়ে যায় বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-২০ দলের ছেলেরা। খানিকটা হতাশার বিস্তার ঘটে পুরো দলের মাঝেই। তবে খেলার তখনও একটা লম্বা সময় বাকি। বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা নিজেদের সামলে নিলেন। একের পর এক আক্রমণ চলতে থাকে দুই দলের পক্ষ থেকেই।
দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে বাংলাদেশ বনাম ভারত যেন এখন পরিণত হয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে। সেটা যে পর্যায়েই হোক। এই দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ের জন্যে মুখিয়ে থাকে দুই দেশের দর্শকেরা। দর্শকদের মন বাসনা পূরণ করতেই সাফ অনূর্ধ্ব-২০ এর ফাইনালে মুখোমুখি বাংলাদেশ-ভারত।
শুরুতেই এগিয়ে গেলেও ভারতের যুবারা নিজেদের লিড ধরে রাখতে পারেনি। প্রথমার্ধের একেবারে শেষের দিকে গোল হজম করে তাঁরা। বাংলাদেশকে সমতায় ফেরান রাজন হাওলাদার। রিবাউন্ড করা বলে সজোরে শট চালান রাজন। আর তাতেই সমতা ফেরে ম্যাচে। ১-১ সমতায় দুই দল চলে যায় বিরতিতে।
বিরতিতে নিজের শীর্ষ্যদের কোন এক জাদুর মন্ত্র নিশ্চয়ই শিখিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের কোচ পল স্মলি। ৪৮ মিনিটের মাথায় ২-১ গোল ব্যবধানে এগিয়ে যায় টাইগার যুবারা। ব্যাস! ম্যাচের উত্তেজনা যেন বেড়ে যায় কয়েকগুণ। বাংলাদেশের গোলরক্ষণ শাহীন মিয়া অসাধরণ টাচে প্রথম ভারতের রক্ষণের খেলোয়াড়কে পরাস্ত করেন। এরপর পা-পায়ের শটে বল জালে জড়ান।
দুই দলের আক্রমণ চলতে থাকে সমানতালে। বাংলাদেশের যুবারা নিশ্চয়ই শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দিয়েছিল। তবে স্বপ্নটা প্রলম্বিত হয় আবারও সেই গুরকিরাত সিংয়ের গোলে। ডি-বক্সের বাইরে থেকে দূর্দান্ত এক শটে নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন গুরকিরাত। ৬০ মিনিটের মাথায় ২-২ গোলের সমতা।
একের পর এক আক্রমণেও তখন আর গোলদ্বার উন্মুক্ত হচ্ছিল না। দুই দলই বেশ কিছু সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে না পারায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। অতিরিক্ত সময়ের প্রথম মিনিটে ডিফেন্স চেড়া পাসে আবারও বাংলাদেশের যুবাদের হতাশার সাগরে ঠেলে দেন হিমাংশু ঝাংরা। এর পরের মিনিটেই ব্যবধান দ্বিগুণ করেন সেই গুরকিরাত সিং।
গুরকিরাতের হ্যাট্রিকে ম্যাচ থেকে একপ্রকার ছিটকে যায় বাংলাদেশের যুবারা। ম্যাচে ফিরে আসার আর কোন সুযোগই যেন রাখতে চাননি গুরকিরাত সিং। ম্যাচের ৯৮ মিনিটে ডি-বক্সের বেশ খানিকটা বাইরে থেকে অপ্রতিরোধ্য শটে বল জালে জড়ান। বাংলাদেশের গোলরক্ষক আসিফের কিছুই করার ছিল না। ব্যবধান গিয়ে দাঁড়ায় ৫-২ এ।
সেখান থেকে আর ম্যাচের ফেরার শক্তিটুকু অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশ। সেই ৫-২ গোলের ব্যবধানেই ফাইনাল হেরে দুঃখের সাগরে ভাসে বাংলাদেশের যুবারা। অথচ প্রথম রাউন্ডে এই ইন্ডিয়াকেই ১-০ গোলের ব্যবধারে হারিয়েছিল মিরাজুল, নোভারা। অপরাজিত থেকে ফাইনালে ওঠা টাইগার যুবাদের স্বপ্ন আট মিনিটে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। একবুক বিষন্নতায় আরও একটি সাফ মিশনের সমাপ্তি ঘটে বাংলাদেশের।