বিদায়ের বাঁশি বাজে! এক সাথে!

তিন জন মহাতারকা একই দিনে টেস্ট ক্রিকেট ছেড়েছেন - এমন ঘটনার তিনটা নজীর পাওয়া যায়। প্রথমটি ঘটে ১৯৮৪ সালে। পরের দু’টি যথাক্রমে ১৯৯১ ও ২০০৭ সালে। প্রতিটি ঘটনাই নাড়িয়ে দিয়েছিল ক্রিকেট বিশ্বকে।

স্যার গ্যারি সোবার্স যাকে অনেকেই একবাক্যে স্বীকার করে নেবে সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার। সব্যসাচী এই এই ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার ক্রিকেট ইতিহাসেরই অংশ।বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে শেষটা রাঙাতে পারেননি। নিজের শেষ টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ইনিংস মিলিয়ে করেছিলেন মোটেই ২০ রান।

সোবার্সের বিদায়ী টেস্টে আরেক ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তিও ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন তিনি রোহান কানহাই। পোর্ট অব স্পেনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচে কানহাই দুই ইনিংস মিলিয়ে করেছিলেন ৯ রান। ম্যাচটিও ওয়েস্ট ইন্ডিজ হেরেছিল ২৬ রানে। সোবার্স খেলেছেন ৯৩ টেস্ট আর কানহাই খেলেছেন ৭৯ টেস্ট।

সেই সময় পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও ছিলেন এই দুজন। সোবার্সের ৮০৩২ রানের বিপরীতে কানহায়য়ের ছিল ৬২৭৭ রান। আর উইকেট শিকারের দিক থেকে সোবার্সের উপরে ছিল কেবল ল্যান্স গিবস। ১৯৭৪ সালে পোর্ট অব স্পেনে একই দিনে ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন সোবার্স এবং কানহাই।

১৯৮৪ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিডনি টেস্টে একসাথে ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন ৭০-৮০ এর দশকের অস্ট্রেলিয়ার তিন মহারথী। তারা ছিলেন গ্রেগ চ্যাপেল, ডেনিস লিলি, রডনি মার্শ। অবসর নেওয়ার সময় অজিদের হয়ে সর্বোচ্চ রান ছিল চ্যাপেলের। ৮৭ ম্যাচে করেছিলেন ৭১১০ রান। ডেনিস লিলি ক্যারিয়ার শেষ করেছিলেন ৩৫৫ উইকেট নিয়ে মজার ব্যাপার সমান সংখ্যক ডিসমালের মালিক রডনি মার্শ।

তবে সোবার্স, কানহাইয়ের মত শেষটা ছিল না এই তিন অজি ক্রিকেটারের। তিন জনই ব্যক্তিগত কিছু মাইলফলক ছুয়েছিলেন শেষ টেস্টে। যেমন গ্রেগ চ্যাপেল জীবনের শেষ ইনিংসে ১৮২ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলার মধ্য দিয়ে ডন ব্রাডম্যানের ৬৯৯৬ রান ছারিয়ে যান। লিলি দুই ইনিংসেই চারটি করে মোট ৮ উইকেট নিয়ে প্রথম টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে ৩৫০ উইকেটের ল্যান্ডমার্ক স্পর্শ করেন।

আর রড মার্শ উইকেটরক্ষক হিসেবে সর্বোচ্চ টেস্ট কেলার কীর্তিত্ব অর্জন করেন পিছনে ফেলেন ইংলিশ উইকেটরক্ষক অ্যাল্যান নটকে। এই তিন কিংবদন্তি স্মরনীয় পারফরমেন্সের উপর ভর করে অজিরা টেস্ট জিতে নেয় ১০ উইকেটের ব্যবধানে।

দ্য ওভাল টেস্ট, ১৯৯১। মুখোমুখি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ড। এই টেস্ট ম্যাচের মধ্য দিয়ে ক্রিকেট আকাশ থেকে খসে পরেছিল তিন তারকা। তিনজনই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের স্বর্ণযুগের স্বপ্নসারথি। মূলত তাদের বিদায়ের মধ্য দিয়ে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের একটা যুগের সমাপ্তি ঘটে। ভিভ রিচার্ডস, ম্যালকম মার্শাল, জেফ ডুজন – এগুলো কেবল নাম নয় ওয়েস্ট ক্রিকেটের এককেকটা ইতিহাস।

অবসত নেওয়ার সয় দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক, সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি, সর্বোচ্চ ডিসমাল নামগুলো যথাক্রমে ভিভ, মার্শাল আর ডুজন। এই একটা পরিসংখ্যানই তাদের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য যথেষ্ট। তবে শেষ টেস্টে ব্যাট, বল এবং গ্লাভহাতে কেউই নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেন নি। দলকেও জেতাতে পারেননি।

সিডনি, ২০০৭। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার অ্যাশেজ সিরিজের শেষ ম্যাচ ছিল শেন ওয়ার্ন, গ্লেন ম্যাকগ্রা এবং জাস্টিন ল্যাঙ্গারের শেষ ম্যাচ। নিজেদের মাটিতে ৫-০ তে অ্যাশেজ জিতে শেষটা রাঙিয়ে দিয়েছিলেন তারা। আরেকটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল, ক্রিকেট ইতিহাসের সেটিই ছিল প্রথম ঘটনা বিদায়ী টেস্টের তিন ক্রিকেটারই ১০০ এর বেশি টেস্ট খেলেছেন।

এরকম একই দিনে একের অধিক নক্ষত্র পতনের আরো কিছু উদাহরণ আছে ২০১২ সালের অ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একসাথে ব্যাট, প্যাড তুলে রেখেছিলেন রাহুল দ্রাবিড় এবং ভিভিএস লক্ষ্মণ। রাহুল দ্রাবিড়ের টেস্টে শুরুটা আবার হয়েছিল সৌরভ গাঙ্গুলির সাথে একই দিনে।

এর ঠিক ৫ বছর পর অর্থাৎ ২০১৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একসাথে ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন পাকিস্তানের দুই ব্যাটিং জিনিয়াস ইউনুস খান এবং মিসবাহ উল হক। তারা ইদানিং কালে আবারো জুটি বেঁধেছেন। মিসবাহ পাকিস্তান দলের কোচ, আর ইউনুস খান আছেন ব্যাটিং কোচের দায়িত্বে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...