রঙ বদলের লড়াই জিতল বাংলাদেশ

বাংলাদেশের দেওয়া লক্ষ্যটা সহজ ছিলো না নিউজিল্যান্ডের জন্য। জিততে হলে স্বাগতিক বোলাদের সামনে দুর্দান্ত কিছুই করে দেখানো লাগতো কিউই ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু এক প্রান্তে টম লাথাম চেষ্টা করলেও ব্যর্থ ছিলেন বাকি ব্যাটসম্যানরা। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেও ৪ রানে হেরেছে নিউজিল্যান্ড।

সহজেই শেষ হতে যাওয়া ম্যাচ জমে গিয়েছিল শেষ ওভারে। জয়ের জন্য শেষ ওভারে নিউজিল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ২০ রান। আর শেষ দুই বলে প্রয়োজন ছিল ১৩ রান। এমন অবস্থায় থেকে বাংলাদেশ যখন জয় উৎযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো তখন মুস্তাফিজুর রহমানের একটি নো বলে লাথামের ব্যাটের কানায় লেগে বাউন্ডারি হলে বদলে যায় ম্যাচের দৃশ্যপট। শেষ দুই বলে নিউজিল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ৮ রান। মুস্তাফিজের দুই বলে লাথাম নিতে পারেন মাত্র তিন রান।

আজকের ম্যাচে জয়ের ফলে সিরিজে ২-০ তে এগিয়ে গেলো বাংলাদেশ। আজ ব্যাটিং ও বোলিং দুই বিভাগেই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। উদ্বোধনী জুটিতে দলকে দারুণ শুরু এনে দেন লিটন দাস ও নাঈম শেখ এবং শেষের দিকে কার্যকরি এক ইনিংস খেলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আর বল হাতে অনবদ্য ছিলেন সাকিব আল হাসান ও শেখ মেহেদী হাসান।

১৪২ রান তাড়া করতে নেমে শুরুটাই ভালো হয়নি নিউজিল্যান্ডের। ইনিংসের প্রথম দুই ওভার দেখে শুনে খেললেও তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই সাকিব আল হাসানকে ছক্কায় ওড়ান রাচিন রবীন্দ্র। পরের বলেই এই ওপেনারকে ফিরিয়ে দিয়ে কিউইদের ইনিংসে প্রথম আঘাত হানেন সাকিব। এই স্পিনারের নিচু হওয়া বল হাঁটু গেড়ে পুল করতে গিয়ে বোল্ড হন রবীন্দ্র।

প্রথম ম্যাচে রানের খাতা খুলতে না পারা রবীন্দ্র আজ করেন ৯ বলে ১০ রান। রবীন্দ্রর বিদায়ের পর উইকেটে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি আরেক ওপেনার টম ব্লান্ডেলও। শেখ মেহেদী হাসানকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে বলের লাইন মিস করেন ব্লান্ডেল। বল হাতে নিয়েই বেলস ফেলে দেন নুরুল হাসান সোহান। ৮ বলে ৬ রান আসে এই ওপেনারের ব্যাট থেকে।

১৮ রানে দুই ওপেনার ফিরে যাওয়ার পর দলের হাল ধরেন টম লাথাম ও উইল ইয়াঙ। তৃতীয় উইকেট জুটিতে দু’জন যোগ করেন ৪৩ রান। এই জুটি যখন ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে উঠছিল তখনই ত্রাতা হয়ে আসেন সাকিব; ফিরিয়ে দেন ইয়াঙকে। ২৮ বলে ২২ রান করে ইয়াঙ ফিরে যাওয়ার পর উইকেটে এসে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি কলিন ডি গ্রান্ডহোম।

নাসুম আহমেদকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে এই স্পিনারের প্রথম শিকার হয়ে ১০ বলে ৮ রান করে ফিরে যান গ্রান্ডহোম। এরপর মেহেদীর বলে হেনরি নিকোলস ফিরে যাওয়ার পর এক প্রান্তে লাথাম চেষ্টা করলেও দলকে জেতাতে পারেননি। লাথাম অপরাজিত থাকেন ৪৯ বলে ৬৭ রান করে। ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে নিউজিল্যান্ড সংগ্রহ করে ১৩৭ রান।

বাংলাদেশের বোলারদের ভিতর দুটি করে উইকেট শিকার করেন সাকিব আল হাসান ও শেখ মেহেদী হাসান। এছাড়া একটি উইকেট পেয়েছেন নাসুম আহমেদ।

এর আগে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশকে দারুণ শুরু এনে দেন লিটন দাস ও নাঈম শেখ। উদ্বোধনী জুটিতেই দুই ওপেনার তুলে ফেলেন ৫৯ রান। তবে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে শূন্য রানে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গিয়েছিলেন লিটন। জীবন ফিরে পাওয়ার পর আজাজ প্যাটেলকে টানা দুটি বাউন্ডারি মেরে রানের খাতা খোলেন এই ওপেনার।

এরপর দারুণ খেলছিলেন দুই ওপেনার। নবম ওভারে রাচিন রবীন্দ্রর প্রথম বলে সিরিজের প্রথম ছয়ও আসে লিটনের ব্যাট থেকে। কিন্তু রবীন্দ্রর অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে করা পরের বলই ঠিক মতো খেলতে না পেরে স্ট্যাম্পে টেনে এনে বোল্ড হয়ে যান লিটন। ২৯ বলে ৩৩ রান করে লিটন ফিরে যাওয়ার পরের বলেই তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামা মুশফিকুর রহিম এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন।

শূন্য রানে মুশফিক ফিরে গেলে হ্যাটট্রিকের সুযোগ আসে রবীন্দ্রর সামনে। তবে চারে ব্যাট করতে নামা সাকিব আল হাসান হ্যাটট্রিক করার সুযোগ দেননি এই স্পিনারকে। পরের ওভারে দুই বাউন্ডারি মেরে দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেন সাকিব। কিন্তু দ্রুত রানের গতি বাড়াতে গিয়ে বেশিক্ষণ উইকেটে থাকতে পারেননি এই অলরাউন্ডার। ম্যাককঞ্চিকে ছয় মারার চেষ্টায় লং অফে ধরা পড়ে ফিরে যান সাকিব।

দলীয় ৭২ রানে ৭ বলে ১২ রান করে সাকিব ফিরে গেলেও থেমে যায়নি বাংলাদেশের রানের গতি। উইকেটে এসেই দ্রুত রান তুলতে থাকেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। হাত খোলেন নাঈমও। বেন সিয়ার্সকে টানা দুটি বাউন্ডারি মারেন নাঈম। রবীন্দ্রকে বাউন্ডারি মেরে রানের খাতা খোলার পরের ওভারে ডগ ব্রেসওয়েলকে দুটি বাউন্ডারি মারেন মাহমুদউল্লাহও।

১৫তম ওভারের পঞ্চম বলে দলীয় শতরান পূর্ন হয় বাংলাদেশের। তবে এরপর আর বেশিক্ষণ উইকেটে থাকতে পারেননি নাঈম। রবীন্দ্রকে ছয় মারার চেষ্টায় লং অনে টম ব্লান্ডেলের হাতে ধরা পড়ে ফিরে যান এই ওপেনার। নাঈমের ব্যাট থেকে আসে ৩৯ বলে ৩৯ রান। ১০৬ রানে নাঈম ফিরে যাওয়ার পরের ওভারেই দ্রুত রান তুলতে গিয়ে সীমানায় ধরা পড়েন আফিফ হোসেন ধ্রুবও।

৩ বলে ৩ রান করে আফিফ ফিরে যাওয়ার পর শেষের মাহমুদউল্লাহর ঝড়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪১ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। ৩২ বলে ৩৭ রান করে অপরাজিত থাকেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। তাঁর ইনিংসে ছয় না থাকলেও চার ছিল পাঁচটি। আর ইনিংসের শেষ বলে আউট হওয়ার আগে নুরুল হাসান সোহান করেন ৯ বলে ১৩ রান।

নিউজিল্যান্ডের বোলারদের ভিতর সবচেয়ে সফল ছিলেন রাচিন রবীন্দ্র। এই স্পিনার চার ওভারে মাত্র ২২ রান দিয়ে শিকার করেন তিন উইকেট। এছাড়া কোল ম্যাককঞ্চি, আজাজ প্যাটেল ও হামিশ বেনেট শিকার করেন একটি করে উইকেট।

  • সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ: ১৪৫/৬ (ওভার: ২০; লিটন- ৩৩, নাঈম- ৩৯, মুশফিক- ০, মাহমুদউল্লাহ- ১৮, সোহান- ) (রবীন্দ্র- ৪-০-২২-৩, ম্যাককঞ্চি- ৪-০-২৪-১, প্যাটেল- ৪-০-২১-১)

নিউজিল্যান্ড: ১১০/৭ (ওভার: ২০; রবীন্দ্র- ১০, ব্লান্ডেল- ৬, ইয়াঙ- ২২, লাথাম- ৬৭*, গ্রান্ডহোম- ৮, নিকোলস- ৬, ম্যাককঞ্চি- ১৫* ) (সাকিব- ৪-০-২৯-২, মেহেদী- ৪-০-১২-২, নাসুম- ৩-০-১৭-১)

ফলাফল: বাংলাদেশ ৪ রানে জয়ী।

সিরিজ: বাংলাদেশ ২-০ তে এগিয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link