নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ম্যাচেও বোলারদের নৈপুণ্যে লক্ষ্যটা নাগালের ভিতরই ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু আগের ম্যাচেই রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার হুমড়ি খেয়ে ভেঙে পড়ায় আজও এই মন্থর ও টার্নিং উইকেটে জয় নিয়ে শঙ্কাতো একটা ছিলই। তবে আজ আর হতাশ হতে হয়নি স্বাগতিকদের। সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ছয় উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
আজকের ম্যাচে জয়ের ফলে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। কিউইদের বিপক্ষে এর আগে দুই বার ওয়ানডে সিরিজ জিতলেও টি-টোয়েন্টিতে তাদের বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ জয়।
সিরিজ জয়ের ম্যাচে প্রথম ইনিংসেই জয়ের সুর বেঁধে দিয়েছিলেন বোলাররা। আরো নির্দিষ্ট করে বললে নাসুম আহমেদ। এই বাঁহাতি স্পিনার তাঁর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং করেন আজ। নাসুম চার ওভারে দুই মেইডেন সহ মাত্র ১০ রান দিয়ে শিকার করেন চারটি উইকেট। গত মাসে এই মাঠেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৯ রান দিয়ে চার উইকেট নিয়েছিলেন নাসুম।
নাসুমের সাথে আজ দারুণ বোলিং করেছেন মুস্তাফিজুর রহমানও। এই পেসার ৩.৩ ওভারে মাত্র ১২ রান দিয়ে শিকার করেন চারটি উইকেট। আর ব্যাট হাতে দলের জয়ে ভূমিকা রাখেন নাঈম শেখ ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ২৯ রান আসে নাঈমের ব্যাট থেকে। আর ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলে মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত থাকেন ৪৮ বলে ৪৩ রান করে।
তবে ৯৪ রানের ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই কোল ম্যাককঞ্চিকে স্লগ সুইপ করে মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান লিটন দাস। ১১ বলে ৬ রান করে এই ওপেনার ফিরে যাওয়ার পর উইকেটে এসে চার মেরে দারুণ শুরু করেন সাকিব আল হাসান। চার দিয়ে রানের খাতা খোলার পর নাঈম শেখকে সাথে নিয়ে ভালো ভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন সাকিব।
কিন্তু হঠাৎ করেই ছন্দ পতন হয় সাকিবের। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে আজাজ প্যাটেলকে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে স্টাম্পিং হয়ে ফিরে যান সাকিব। ৮ বলে ৮ রান করে সাকিব ফিরে যাওয়ার দুই বল পরেই দুটি ডট খেলে স্লগ করে বোল্ড হয়ে যান মুশফিক। দুই ব্যাটিং ভরসা ফিরে যাওয়ার পর নাঈমকে সাথে নিয়ে ৩২ রানে তিন উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
চতুর্থ উইকেটে দু’জন যোগ করেন ৩৫ রান। এই জুটিতেই জয়ের অনেকটাই কাছে চলে আসে বাংলাদেশ। এই জুটিতে যখন জয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো স্বাগতিকরা তখনই রান আউটের ফাঁদে পড়ে ফিরে যান নাঈম। ৩৫ বলে ২৯ রান আসে এই ওপেনারের ব্যাট থেকে। নাঈম যখন ফিরে যান তখনো জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিলো ২৭ রান।
আফিফ হোসেন ধ্রুবকে সাথে নিয়ে বাকি কাজটা শেষ করেন মাহমুদউল্লাহ। ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলে বাংলাদেশের অধিনায়ক অপরাজিত থাকেন ৪৮ বলে ৪৩ রান করে। আফিফ অপরাজিত থাকেন ১০ বলে ৬ রান করে। নিউজিল্যান্ডের বোলারদের ভিতর দুটি উইকেট শিকার করেন আজাজ প্যাটেল। এছাড়া একটি উইকেট পেয়েছেন কোল ম্যাককঞ্চি।
এর আগে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামা নিউজিল্যান্ডের শুরুটা ভালো হয়নি। ইনিংসের প্রথম ওভারেই উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন নাসুম আহমেদ। এই স্পিনারের প্রথম চার বলে রান নিতে ব্যর্থ হয়ে পঞ্চম বলে সুইপ করে শর্ট ফাইন লেগে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান রাচিন রবীন্দ্র। শূন্য রানে এই ওপেনার ফিরে যাওয়ার পর দ্বিতীয় ওভারে সাকিব আল হাসানকে ছয় মেরে ঝড়ো শুরুর আভাস দেন ফিন অ্যালেন।
তবে তাকেও উইকেটে বেশিক্ষণ থাকতে দেননি নাসুম। নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসে ফিন অ্যালেনকে ফিরিয়ে দেন তিনি। এই বাঁহাতি স্পিনারকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ৮ বলে ১২ রান করে ফিরে যান এই ওপেনার। এবারো ক্যাচ নেন সাইফউদ্দিন। ১৬ রানে দুই ওপেনার ফিরে যাওয়ার পর দলের হাল ধরেন টম লাথাম ও উইল ইয়াঙ।
বাংলাদেশের বোলারদের দেখে শুনে খেলে মন্থর উইকেটেও দারুণ একটি জুটি গড়ে তুলেছিলেন দু’জন। তবে এই জুটিকে বেশি দূর যেতে দেননি শেখ মেহেদী হাসান। এই স্পিনারকে বেড়িয়ে এসে খেলতে গিয়ে বলের লাইন মিস করেন লাথাম। বল চলে যায় নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভসে। সহজেই বাকি কাজটা শেষ করেন সোহান। ২৬ বলে ২১ রান করে লাথাম ফিরে গেলে ভাঙে ৪৭ বলে ৩৫ রানের জুটি।
এই জুটি ভাঙার পরের ওভারেই আবার দৃশ্যপটে আসেন নাসুম। এবার এই স্পিনারের জোড়া আঘাতে ফিরে যান হেনরি নিকোলস ও কলিন ডি গ্রান্ডহোম। নিকোলস করেন ১ রান এবং রানের খাতায় খুলতে পারেননি গ্রান্ডহোম। এরপর মুস্তাফিজুর রহমানের জোড়া আঘাতে টম ব্লান্ডেল কোল ম্যাককঞ্চি ফিরে গেলে ৭৪ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে নিউজিল্যান্ড।
এরপর সাইফউদ্দিন আজাজ প্যাটেলকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর আবার মুস্তাফিজের জোড়া আঘাতে ইয়াঙ ও ব্লেয়ার টিকনার ফিরে গেলে তিন বল হাতে রেখেই মাত্র ৯৩ রানে গুটিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। ৪৮ বলে বলে ৪৬ রান আসে ইয়াঙের ব্যাট থেকে।
বাংলাদেশের বোলারদের ভিতর সবচেয়ে সফল ছিলেন নাসুম আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান। নাসুম চার ওভারে দুই মেইডেন সহ মাত্র ১০ রান দিয়ে চারটি ও মুস্তাফিজ ৩.৩ ওভারে ১২ রান দিয়ে চারটি উইকেট শিকার করেন। এছাড়া একটি করে উইকেট পেয়েছেন শেখ মেহেদী হাসান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
- সংক্ষিপ্ত স্কোর
নিউজিল্যান্ড: ৯৩/১০ (ওভার: ১৯.৩; রবীন্দ্র- ০, অ্যালেন- ১২, লাথাম- ২১, ইয়ঙ- ৪৬, নিকোলস- ১, ব্লান্ডেল- ৪) (নাসুম- ৪-২-১০-৪, মেহেদী- ৪-০-২১-১, মুস্তাফিজুর- ৩.৩-০-১২-৪ ,সাইফউদ্দিন- ৩-০-১৬-১
বাংলাদেশ: ৯৪/৪ (ওভার: ১৯.১; লিটন- ৬, নাঈম- ২৯, সাকিব- ৮, মুশফিকুর- ০, মাহমুদউল্লাহ- ৪৩*, আফিফ- ৬*) (প্যাটেল- ৪-০-৯-২, ম্যাককঞ্চি- ৩-০-৩০-১)
ফলাফল: বাংলাদেশ ছয় উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: বাংলাদেশ ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে।