Social Media

Light
Dark

বাস্তিয়ান শোয়েনস্টেইগার: এক জার্মান যোদ্ধার গল্প

বাস্তিয়ান শোয়েনস্টেইগার। জার্মানির ইতিহাসের সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার। মিউনিখের অদূরে রোজেনহাইমে জন্ম ও বেড়ে ওঠা তার। ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময়ই কাটিয়েছেন বায়ার্ন মিউনিখে। তিন বছর বয়সে প্রথমবার ফুটবলে কিক নেয়া বাস্তি ১৪ বছর বয়সে ইয়ুথ প্রোগ্রামের মাধ্যমে বায়ার্ন মিউনিখ শিবিরে যোগ দেন। ওই ক্লাবেই ২০০২ সালে, ১৮ বছর বয়সে ফুটবল ক্যারিয়ারের প্রথম চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন তিনি।

২০০২ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত বায়ার্ন মিউনিখের মূল দলে মোট ৫০০টি ম্যাচ খেলেছেন। সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হলেও, গোলের সাথে নিয়মিত সখ্য ছিল তার। তাই তো বায়ার্নের জার্সিতে গোলের সংখ্যা ৬৮। জিতেছেন আটটি বুন্দেসলিগা, সাতটি জার্মান কাপ, একটি লিগ কাপ। তবে একটি শিরোপা বহুদিন ধরে অধরা রয়ে যাচ্ছিল তার। সেটি হলো চ্যাম্পিয়নস লিগ। কিন্তু ২০১৩ সালে সেটিও জেতেন তিনি এবং ওই বছর ঐতিহাসিক ট্রেবল জয় করে জার্মানির ইতিহাসের সফলতম ক্লাবটি।

জার্মানির জাতীয় দলেও নিয়মিত মুখ ছিলেন শোয়েনস্টেইগার। অবশ্য সেখানে তার শুরুটা যে খুব সুখকর ছিল, তা বলা যাবে না। ২০০৪ সালের ৬ জুন, ১৯ বছর বয়সে প্রিয় বন্ধু লুকাস পোডলস্কি ও তিনি একসাথে জাতীয় দলে অভিষিক্ত হন। সেটি ছিল ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে হাঙ্গেরির বিপক্ষে একটি ওয়ার্ম-আপ ম্যাচ। ২-০ গোলে সেই ম্যাচে হেরে যায় জার্মানি। এরপর পর্তুগালে ইউরো ২০০৪-এও গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় তাঁরা।

জাতীয় দলে শোয়েনস্টেইগারের আরেকটি বেদনাময় সময় আসে ২০০৬ বিশ্বকাপে। ততদিনে তিনি ও তার বন্ধু পোডলস্কি দুজনেই জার্মান দলে নিজেদের জায়গা পাকা করে নিয়েছেন। স্বপ্ন দেখছেন নিজেদের প্রথম ও জার্মানির চতুর্থ বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইটালির বিপক্ষে সেমিফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে হার মানতে হয় তাদের। সেই ম্যাচে ৭৩তম মিনিটে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন শোয়েনস্টেইগার, কিন্তু দলের শেষ রক্ষা করতে পারেননি।

এর বছর দুয়েক পরেই প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের অধিনায়ক হওয়ার গৌরব অর্জন করেন শোয়েনস্টেইগার। ২০০৮ সালের আগস্টে বেলজিয়ামের বিপক্ষে একটি ফ্রেন্ডলি ম্যাচের হাফ টাইম শেষে বিশ্রামের সিদ্ধান্ত নেন মিরোস্লাভ ক্লোসা। তখনই শোয়েনস্টেইগারকে ক্যাপটেন’স আর্মব্যান্ডটি পরিয়ে দেন তিনি। ২৪ বছর বয়সী শোয়েনস্টেইগার উপলক্ষ্যটিকে স্মরণীয় করে রাখেন পেনাল্টি স্পট থেকে গোল করে জার্মানিকে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে নেয়ার মাধ্যমে।

সব মিলিয়ে জাতীয় দলের হয়ে ১২১টি ম্যাচ খেলেন শোয়েনস্টেইগার। তবে ২০১৪ বিশ্বকাপের স্কোয়াডে তার অন্তর্ভুক্তি নিয়ে অনেকের মনেই ছিল সংশয়। কেননা তাদের ধারণা ছিল, ইতোমধ্যেই নিজের সেরা সময়টা পেছনে ফেলে এসেছেন তিনি। কিন্তু সকল সংশয়বাদীর মুখে চুনকালি মাখিয়ে দিয়ে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ফাইনালে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখান তিনি। জার্মানি যে অবশেষে চতুর্থবারের মতো বিশ্বজয় করে, এক্ষেত্রে তাই শোয়েনস্টেইগারেরও ছিল অপরিমেয় অবদান।

ওই বিশ্বকাপ শেষে তার বায়ার্ন সতীর্থ ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু ফিলিপ লাম অবসর নেন। তাই ইউরো ২০১৬ এর বাছাই পর্বের আগে শোয়েনস্টেইগারকে দেয়া হয় জার্মানির স্থায়ী অধিনায়কের দায়িত্ব। ইউরো ২০১৬ তার জন্য অম্লমধুর স্মৃতি হয়েই থাকবে। কেননা একাধারে যেমন তিনি ওই টুর্নামেন্টে পরিণত হয়েছিলেন ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলা জার্মান ফুটবলার, তেমনই আবার ব্যর্থ হয়েছিলেন দলকে ফাইনালে তুলতে। সব মিলিয়ে গড়পড়তা একটি টুর্নামেন্ট শেষে প্রতিযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় বলে দেন তিনি। বিদায়ের আগে নিজের ঝুলিতে জমা করেন সর্বমোট ২৪টি গোল।

এদিকে দীর্ঘ ১৩ বছর বায়ার্ন মিউনিখের মূল দলে কাটানোর পর ২০১৫ সালে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান বাস্তি। যোগ দেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। সেখানে সিংহভাগ সময় ইনজুরির সাথে লড়াই করতে হয় তাকে। সুযোগ পান ৩৫টি ম্যাচে, যার মধ্যে প্রিমিয়ার লিগ ম্যাচ ছিল স্রেফ ১৮টি। তারপরও ইংলিশ দলটির হয়ে তিনি জিতে নেন এফএ কাপ এবং ইউরোপা লিগ। এছাড়া সেখানে সতীর্থদের থেকে একটি নতুন ডাকনামও জোটে তাঁর, ‘Mr. Calm’!

২০১৭ সালে শোয়েনস্টেইগারের নতুন ঠিকানা হয় যুক্তরাষ্ট্রে মেজর লিগ সকারের দল শিকাগো ফায়ার। ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ফায়ারের হয়ে ৯২ ম্যাচ খেলে গোল পান আটটি, যার মধ্যে অষ্টমটি আসে তাঁর সর্বশেষ ম্যাচে। এরপরই পেশাদার ফুটবল ক্যারিয়ারকে বিদায় বলে দেন তিনি।

জার্মান কোচ জোয়াকিম লো’র মতে, ‘শোয়েনস্টেইগার শেষ দিন পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়া এক যোদ্ধা।’ ক্যারিয়ারে সম্ভাব্য সবকিছুই তিনি জিতেছেন। বিশেষত ২০১৪ সালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে বিশ্বকাপ ফাইনালে তাঁর রক্তাক্ত চেহারাটা চিরকাল ভাস্বর হয়ে রইবে ফুটবলপ্রেমীদের মনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link