নন্দনকাননের তিন বীর

বিশ্বে আরও ছয় জনের এই রেকর্ড আছে। তারা হলেন ইংল্যান্ডের জিওফ বয়কট, অ্যালান ল্যাম্ব ও অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ, অস্ট্রেলিয়ার কিম হিউজ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের আদ্রিয়ান গ্রিফিথ আর দক্ষিণ আফ্রিকার আলভিরো পিটারসন।

টেস্ট ক্রিকেট সম্বন্ধে ইংলিশ মিডিয়ামে একটা লাইন পড়ে ফেলছিলাম বাংলা মিডিয়ামে বেড়ে ওঠা আমি, অনেকদিন আগে। সেটা ছিল এরকম – ‘Test Cricket is not about how much boundaries you hit in an over but it is all about for how long you can stay on the pitch.’

টেস্ট ক্রিকেটে সেই ‘Stay on the pitch’ নিয়ে এই লেখাটা। ১৯৩২-এর অমর সিং থেকে ২০১৯-এর শাহবাজ নাদিম, মোট ২৯৬ জন ক্রিকেটার আজ অবধি ভারতের হয়ে টেস্ট ক্যাপ পড়েছেন। আজ অবধি এদের মধ্যে মাত্র তিনজন (সেই উইকি তালিকা অনুযায়ী ক্রম সংখ্যা ৯১, ১৫১ আর ২৬৬) এক বিরল রেকর্ডের অধিকারী।

তারা হলেন যথাক্রমে – মোটগানহাল্লি জয়সীমা, রবিশঙ্কর জয়াদৃথ শাস্ত্রী আর চেতেশ্বর অরবিন্দ পুজারা। তারা তিনজন একটা টেস্টের পাঁচদিনই কোন না কোন সময়ে ব্যাটিং করেছেন, মানে রোজই ব্যাট হাতে মাঠে ছিলেন।এবং কি আশ্চর্য, তিনটি ঘটনাই ঘটেছিল কলকাতার ইডেন উদ্যানে।

  • মোটগানহাল্লি জয়সীমা

১৯৬০ সালের ২৩-২৮ জানুয়ারি, এই পাঁচদিনই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে কলকাতা টেস্টে ব্যাট করেছিলেন তিনি। প্রথম দিনের শেষে ২ রানে অপরাজিত ছিলেন। দ্বিতীয় দিন তিনি ২০ রানে অপরাজিত অবস্থায় প্রথম ইনিংস শেষ করেছিল ভারত। তৃতীয় দিনের একদম শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে এসে শূন্য রানে অপরাজিত ছিলেন জয়সীমা।

চতুর্থ দিন সারাদিন ব্যাট করে দিনের শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ৫৯ রানে অপরাজিত ছিলেন। শেষ দিনে জয়সীমা ৭৪ রান করে আউট হন। প্রথম ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে জয়সীমার টেস্টে পাঁচ দিনই কোন না কোন সময়ে ব্যাট করা কলকাতা টেস্টটি ড্র হয়েছিল শেষ পর্যন্ত। ক্রিকেট ইতিহাসেও সেটা একই ব্যাটসম্যানের পাঁচদিন ব্যাট করার প্রথম নজীর। এটি ছিল সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টেস্ট। জয়সীমা ১৯৫৯ থেকে ১৯৭১ অবধি ৩৯টি টেস্ট খেলে তিনটি সেঞ্চুরি আর ১২টি হাফ সেঞ্চুরি-সহ ২০৫৬ রান করেছিলেন।

  • রবিশঙ্কর জয়াধৃত শাস্ত্রী

১৯৮৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ১৯৮৫-এর ৫ জানুয়ারি, এই পাঁচদিনই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে কলকাতায় সিরিজের তৃতীয় টেস্টে ব্যাট করেছিলেন তিনি। প্রথম দিনের শেষে প্রথম ইনিংসে ২৬ রানে অপরাজিত ছিলেন শাস্ত্রী। বৃষ্টিবিঘ্নিত দ্বিতীয় দিনের শেষেও ওই ২৬ রানেই অপরাজিত ছিলেন তিনি। তৃতীয় দিনেও সারাদিন ব্যাট করে ১০৬ রানে অপরাজিত ছিলেন শাস্ত্রী। চতুর্থ দিন তিনি আউট হন ১১১ রান করে, ভারত তখন প্রথম ইনিংসে ৩৫৬/৬। শেষ পর্যন্ত তারা করেছিল ৪৩৭/৭ ডিক্লেয়ার।

শেষ দিনে ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস শের করে ২৭৬ রানে। সেদিন নিষ্প্রাণ খেলায় মনোজ প্রভাকরের সঙ্গে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেন শাস্ত্রী ও সাত রানে নট আউট থেকে যান। দ্বিতীয় ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে পাঁচ দিনই কোন না কোন সময়ে ব্যাট করেছিলে শাস্ত্রী। নিষ্প্রাণ কলকাতা টেস্টটি ড্র হয়েছিল শেষ পর্যন্ত। জয়সীমা ১৯৮১ থেকে ১৯৯২ অবধি ৮০টি টেস্ট খেলে একটি ডাবল সেঞ্চুরি সমেত ১১ টি সেঞ্চুরি আর ১২টি হাফ সেঞ্চুরি-সহ ৩৮৩০ রান করেছিলেন।

  • চেতেশ্বর অরবিন্দ পূজারা

২০১৭ সালের ১৬-২০ নভেম্বর, এই পাঁচদিনই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে কলকাতা টেস্টে ব্যাট করেছিলেন পূজারা। এটি ছিল সিরিজের প্রথম টেস্ট এবং অত্যন্ত বৃষ্টিবিঘ্নিত। প্রথম দিনের শেষে ভারতের ১৭/৩ স্কোরে তিনি আট রানে অপরাজিত ছিলেন। দ্বিতীয় দিনের শেষে ভারতের ৭৪/৫ স্কোরে তিনি ৪৭ রানে অপরাজিত ছিলেন। তৃতীয় দিন ১ম ইনিংস শেষ করেছিল ভারত ১৭২ রানে আর পূজারা আউট হন ৫২ রানে।

চতুর্থ দিনের একদম শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে এসে ২ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি, ভারত ছিল ১৭১/১। পঞ্চম ও শেষ দিনে পুজারা ২২ রান করে আউট হন। তৃতীয় ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে পুজারার টেস্টে পাঁচদিনই কোন না কোন সময়ে ব্যাট করা কলকাতা টেস্টটি ড্র হয়েছিল শেষ পর্যন্ত। ২০১০ থেকে এখনো অবধি পুজারা ৭৭ টি টেস্ট খেলে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি সমেত ১৮ টি সেঞ্চুরি আর ২৫ টি হাফ সেঞ্চুরি-সহ ৫৮৪০ রান করেছেন।

বিশ্বে আরও ছয় জনের এই রেকর্ড আছে। তারা হলেন ইংল্যান্ডের জিওফ বয়কট, অ্যালান ল্যাম্ব ও অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ, অস্ট্রেলিয়ার কিম হিউজ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের আদ্রিয়ান গ্রিফিথ আর দক্ষিণ আফ্রিকার আলভিরো পিটারসন।

আজকের চটজলদি ক্রিকেটের দমবন্ধ পরিস্থিতিতে এখনো একঝলক ঠাণ্ডা হাওয়া টেস্ট ক্রিকেটই। ব্যাটসম্যানের (এবং বোলারেরও) আসল কঠিন পরীক্ষাটা হয় ওখানেই, কেননা ওটা ক্রিজে টিকে থাকার প্রাণপণ লড়াই।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...