বাংলাদেশ সম্ভবত একটু সঙ্কিত। হবারই কথা। পরবর্তী ম্যাচ যে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। এবারের টুর্নামেন্টে প্রোটিয়া ব্যাটাররা রীতিমত প্রতিপক্ষদের বোলারদের নিয়ে করছেন ছেলে খেলা। চার ম্যাচের তিনটিতে জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তিন জয়ের প্রতিটিতেই স্কোরবোর্ডে ৩০০ এর বেশি রান তুলেছে এনরিখ ক্লাসেনরা।
এই যখন অবস্থা তখন তো একটু দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়াই স্বাভাবিক। তবে বাংলাদেশের কিন্তু সুখস্মৃতি রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। ফিরে যাওয়া যাক ২০০৭ বিশ্বকাপে। বিশ্বকাপের বাংলাদেশের সুখস্মৃতির যা কিছু আছে, তার একটা হাইলাইটস হলে ২০০৭ বিশ্বকাপ বিপুল জায়গা জুড়েই থাকবে।
সত্যিকারের অঘটন সেবার বাংলাদেশ ঘটিয়েছিল দু’বার। ভারতকে হারিয়ে। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকাকেও বোতল বন্দী করে। সেবার বাংলাদেশের দেওয়া ২৫১ রান টপকে যেতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। থেমেছিল ১৮৪ রানে। এরপর গেল বিশ্বকাপেও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর সুখস্মৃতি রয়েছে বাংলাদেশের।
সে ম্যাচে বাংলাদেশ লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েছিল ৩৩১ রানের। সেই লক্ষ্য পেরিয়ে জয় পাওয়া হয়নি প্রোটিয়াদের। ২১ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল টাইগাররা। বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে চার দেখায় সমান দুইটি করে জয় পরাজয় রয়েছে বাংলাদেশের।
এইগুলোই সম্ভবত পুঁজি বাংলাদেশের। তাছাড়া লক্ষ্য ছুড়ে দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে আটকে দেওয়ার স্মৃতিই খানিকটা স্বস্তি দিচ্ছে বাংলাদেশকে। কারণ এবারের বিশ্বকাপে যে একটি ম্যাচ হেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, সেই ম্যাচটিতেও রান তাড়ায় ব্যর্থ হয়েছেন কুইন্টন ডি কক-রা। নেদারল্যান্ডস তাদের হারিয়ে জন্ম দিয়েছে অঘটনের।
এই একটি জায়াগায় মাত দেওয়া যেতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। তাইতো সাকিব আল হাসান ম্যাচ পূর্ববর্তী ম্যাচে বলেই বসলেন, ‘দোয়া কইরেন কালকে যেন টস জিতি।’ ঠিক এখানটায় বাংলাদেশের পরিকল্পনা বেশ স্পষ্ট। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশ যে করেই হোক আগে ব্যাটিং করবার সিদ্ধান্তই নেওয়ার চেষ্টা করবে। দক্ষিণ আফ্রিকাকে রান তোলার চাপে ফেলতে চাইবে।
তাছাড়া আগে বোলিং করা বাংলাদেশের জন্য হতে পারে প্রাণঘাতি। কেননা প্রথম ইনিংসে নির্ভার প্রোটিয়া ব্যাটাররা বেদম প্রহারে পিছপা হন না। তাতে দ্বিতীয় ইনিংসের আগেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যেতে পারে বাংলাদেশ। তাছাড়া মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম বেশ ছোট এবং রানপ্রসবা। এমন উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার আগেই ব্যাটিং করা মানেই বাংলাদেশের চতুর্থ পরাজয় প্রায় অবধারিত।
তবে লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েও বাংলাদেশ ঠিক কতটা আটকে রাখতে পারবে এইডেন মার্করামদের তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ প্রকাশ করাই যায়। কেননা বাংলাদেশের বোলাররা খুব একটা ভাল ফর্মে নেই। হোক সেটা পেস ইউনিট কিংবা স্পিন ডিপার্টমেন্ট। এমনকি ব্যাট হাতেও যে খুব ভাল সময় পার করছেন টাইগার ব্যাটাররা তেমনটিও নয়।
প্রায় প্রতিটি ম্যাচে ৩০০ ছোঁয়া রান করছে দলগুলো। অন্যদিকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ২৫৬ রান। এই যখন অবস্থা তখন নিশ্চিতরুপেই বাংলাদেশ ঢের পিছিয়ে। যদিও এইডেন মার্করাম সমীহই করেছেন বাংলাদেশকে। তিনি জানেন নিজেদের দিনে বাংলাদেশ যেকোন প্রতিপক্ষকে হারিয়ে দেওয়ার সক্ষমতা রাখে। তাছাড়া বিশ্বকাপের পরিসংখ্যানে খুব একটা দাপুটে অবস্থানে নেই প্রোটিয়ারা।
অন্যদিকে সাকিব আল হাসান ব্যাটারদের ফর্ম নিয়ে খুব একটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত নন। তিনি তার বোলারদেরই দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে জোর দিয়েছেন। শেষ অবধি আরও একটি একপেশে ম্যাচের সাক্ষী হতে হবে কি-না সেটা বরং ওয়াংখেড়ের দশমীর রাতই বলে দেবে।