টানা তিন সিরিজে জিতে আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলতে যাবে বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রস্তুতি খুব একটা ভালো হয়নি। করোনার কারণে বিশ্বকাপ প্রস্তুতির অনেক পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করতে পারেননি তাঁরা।
করোনার কারণে গত বছরের মার্চ থেকে দীর্ঘ দিন মাঠের বাইরে ছিলো বাংলাদেশের সব ধরণের ক্রিকেট। করোনার কারণেই মাঠে গড়ায়নি বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। এছাড়া করোনার কারণে বাতিল হয়েছে অনেক ঘরোয়া টুর্নামেন্ট সহ আন্তর্জাতিক সিরিজ।
কিন্তু আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে সব কিছু নিয়েই বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল বিসিবি। বিসিবি সভাপতি মনে করছেন এগুলো বাতিল হওয়াতেই সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেননি তাঁরা। আজ ম্যাচ শেষে গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে পাপন জানিয়েছেন সব না পারলেও যে টুকু পেরেছেন ভালো ভাবেই পেরেছেন।
পাপন বলেন, ‘বিশ্বকাপের আগে আমাদের যে পরিকল্পনা ছিলো তা করতে পারিনি। অনেক দেশ পেরেছে। করোনাতেই এক বছর চলে গেছে। লম্বা সময় বিরতি ছিলো। আমি বলবো যে আমাদের প্রস্তুতি খুব একটা ভালো হয়নি। আমাদের যে পরিকল্পনা ছিলো সেই অনুযায়ী হয়নি। এরপরেও কিছুটা করতে পেরেছি আমরা। ভালো ভাবেই পেরেছি।’
পরিকল্পনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হলেও বিশ্বকাপের আগে তিনটি সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। পাপন জানিয়েছেন বিশ্বকাপের সম্ভবনা নিয়ে সাকিব আল হাসানের সাথে কথা হয়েছে তাঁর। সাকিব তাকে জানিয়েছে এবারের বিশ্বকাপে ভালো সম্ভবনা রয়েছে তাঁর। সাকিবের মতো ক্রিকেটার বলেছে দেখেই পাপনের কাছে এটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সেরা ওপেনার তামিম, সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিক আর সেরা ক্রিকেটার সাকিব। রিয়াদও অনেক ম্যাচ জিতিয়েছে। সাকিবের সাথে কথা হচ্ছিলো সাকিব আমাকে বলছে ভালো সুযোগ আছে। সাকিবের মতো ক্রিকেটার যখন বলে ভালো সুযোগ আছে এর মানে দলের প্রতি তো ওর আত্মবিশ্বাস আছে। এটা গুরুত্বপূর্ণ।’
বিশ্বকাপে ভালো করা নিয়ে আত্ববিশ্বাস থাকলেও পাপন জানিয়েছেন টি-টোয়েন্টিতে যে রকম দল হওয়ার প্রয়োজন বাংলাদেশ এখনো সে রকম দল না। পাপন জানিয়েছেন টি-টোয়েন্টিতে সেরা দল হতে এখনো তাঁরা তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষার ভিতর রয়েছেন।
বোর্ড সভাপতি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘টি-টোয়েন্টি দল যে রকম হওয়া দরকার আমাদের দলটা আসলে সে রকম না। আমরা তরুণ কিছু ছেলেদের দেখছি। আমরা এখনো পরীক্ষার ভিতরেই আছে। তার ভিতর প্রথম ছয় ওভারের সুযোগটাই নিতে পারছি না।’
এই পরীক্ষা নিরীক্ষার অংশ হিসাবেই আজ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচে নিয়মিত পারফরমারদের বিশ্রাম দিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে ফলাফল পক্ষে আনতে পারেনি স্বাগতিকরা। পাপন জানিয়েছেন তাদের সেরা ক্রিকেটাররা না থাকাতেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে নিউজিল্যান্ড। আজকের ম্যাচে হারের জন্য পাপন দায়ী করেছেন পাওয়ার প্লে কাজে লাগাতে না পারাকেও।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বকাপের স্কোয়াডে আছে, কিন্তু আগের ম্যাচ গুলোতে সুযোগ পায়নি আজ তাঁরা খেলেছে। যারা ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করেছে তাঁরা বিশ্রামে ছিলো। এর ভিতর মুস্তাফিজ সেরা বোলার। সাকিবের মতো ক্রিকেটার নেই। এছাড়া সাইফউদ্দিন নেই, ও কিন্তু নিয়মিত উইকেট নিয়েছে। এই তিন জনের না থাকাটা প্রতিপক্ষকে কাজটা সহজ করে দিয়েছে। নিউজিল্যান্ড সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে। আমরা পাওয়ার প্লেতেও পিছিয়ে গিয়েছে।’
গতকাল দেশের একটা গণমাধ্যমে খবর বেড়িয়েছে টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও ওয়ানডে অধিনায়ক তামিমের ভিতর একটা দ্বন্দ্ব চলছে। আর এই কারণেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে নিজকে সরিয়ে নিয়েছেন তামিম। তবে বোর্ড সভাপতি জানিয়েছেন দলের সিনিয়র দুই ক্রিকেটারের ভিতর কোন সমস্য নেই।
বোর্ড সভাপতি বলেন, ‘আপনারা বলছেন মাহমুদউল্লাহ ও তামিমের কোন সমস্য হয়েছে কিনা। আমি বলবো কোন সমস্য নেই। ববি ভাই গিয়েছিল দলের সাথে। সে বলেছে সমস্য নেই। এই বিষয় নিয়ে বলার কোন কারণই আমি দেখছিনা।’
দীর্ঘ দিন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে দূরে থাকার কারণেই বিশ্বকাপের দল থেকে নিজকে সরিয়ে নিয়েছেন তামিম ইকবাল। এরপর সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়েছিল অভিজ্ঞ এই ওপেনারকে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে নিতে তাঁর সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বোর্ড সভাপতি। তবে পাপন আজ জানিয়েছেন এটা পুরোপুরি ভুল তথ্য।
তিনি বলেন, ‘তামিমকে আমি ওর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বলেছি এরকম কোন ঘটনায় ঘটেনি। এটা সম্পূর্ন ভুল তথ্য। কারণ এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমার সাথে আলাপ করেই নিয়েছে। সেখানে আমি আবার কী ভাবে বলবো। আমি তো সম্মতি দিয়েছি তাঁকে।’
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে আর উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে চান না মুশফিকুর রহিম। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি শেষে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো। পাপন জানিয়েছেন এই বিষয়ে তিনি কোন কিছু জানেন না। যা হয়েছে সেটা কোচ এবং মুশফিকই ভালো বলতে পারবেন।
পাপন বলেন, ‘এটা কোচের সাথে কথা হয়েছে। আমার শোনা কথা। এটা বলতে পারবে কোচ। আমি যতো টুকু জানি কোচ মুশফিককে বলেছিল দুইটা ম্যাচ সোহান আর দুইটা ম্যাচে তুমি করাবা, এটাতে কোন সমস্যা আছে। এরপর দুই ম্যাচ পর যখন বলা হইছে ও বলছে না। কি হয়েছে ওরা দু’জনই ভালো বলতে পারবে।’