বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। তবে এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ফুটবলের গৌরবময় সকল স্মৃতি রচনায় ব্যস্ত দেশের নারী ফুটবলাররা। জাতীয় দলের পর এবার অনূর্ধ্ব-২০ জাতীয় দলও রয়েছে এএফসি এশিয়ান কাপ খেলার দ্বারপ্রান্তে। সমীকরণ আছে, তবে সমীকরণের মধ্যেও সম্ভাবনার পাল্লাই ভারি।
এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের গ্রুপ এইচ-এর শীর্ষে রয়েছে সাগরিকারা। প্রথম ম্যাচে জিতেছিল স্বাগতিক লাওসের বিপক্ষে ৩-১ ব্যবধানে। এরপর তো পূর্ব তিমুরকে রীতিমত বিধ্বস্ত করেছে তৃষ্ণা রাণীরা। ৮-০ গোল ব্যবধানে জিতেছে বাংলাদেশের তরুণিরা। ছয় পয়েন্ট ও গোল ব্যবধানে এগিয়ে সবার উপরে এখন বাংলাদেশের অবস্থান।
পরবর্তী ম্যাচ শক্ত প্রতিপক্ষ দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে। এশিয়ার অন্যতম পরাশক্তিদের বিরুদ্ধে ম্যাচটা বেজায় কঠিন হতে চলেছে। তাইতো হিসেবের খাতা খুলে বসতেই হচ্ছে। সহজ ও সরল সমীকরণ হচ্ছে জয়। জিততে পারলে ভাবতে হবে না আর কোন কিছুই। এমনকি ড্র করলেও বাংলাদেশ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে চলে যাবে মূল পর্বে। কেননা বাংলাদেশ গোল করেছে ১১টি, অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়া গোল দিয়ে ১০টি।
ড্র হলেও বাংলাদেশ এক গোল বেশি করায় এগিয়ে থেকেই চলে যাবে পরবর্তী রাউন্ডে। কিন্তু যদি হেরে যায়, তাহলে হয়ত নানা সমীকরণের মারপ্যাচ শুরু হবে। এখানেও বরং বাংলাদেশের দুশ্চিন্তা খানিকটা কম। কারণ সেই ১১ গোল। বাছাইপর্বের আট গ্রুপের গ্রুপ চ্যাম্পিয়নরা যাবে পরবর্তী রাউন্ডে। এরপর আরও তিনটি সেরা রানার্সআপ দল সুযোগ পাবে মূল পর্ব খেলার।
সেই হিসেবে বাংলাদেশ বেশ শক্ত অবস্থানেই রয়েছে। ছয় পয়েন্ট সাথে ১০ গোল ব্যবধান। তবে বাংলাদেশের নজর রাখতে হবে চাইনিজ তাইপে, ইরান ও জর্ডানের দিকে। তাদেরও সম্ভাবনা রয়েছে বটে, কিন্তু ততটাও সহজ নয়। কেননা চাইনিজ তাইপের পরবর্তী প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। যারা ইতোমধ্যে ১৭ খানা গোল দিয়েছে তাদের বাকি দুই প্রতিপক্ষকে।
অতএব অজিদের বিরুদ্ধে জয় কঠিন হবে, এমনকি গোল ব্যবধান বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগও একেবারে সামান্য। একই ঘটনা ইরানের ক্ষেত্রেও। তাদের প্রতিপক্ষ জাপান। যারা কি-না গোল করেছে ২১টি। একটাও গোল হজম করেনি। দাপট তাই স্পষ্ট। ইরানের জয়ও কঠিন। কিন্তু মূল প্রতিপক্ষ জর্ডান কিংবা উজবেকিস্তান।
এই দুই দল প্রায় সমকক্ষ। তাদের পয়েন্ট সমান। আর এই দুই দলই গোল ব্যবধানে বাংলাদেশের চাইতে এগিয়ে। অতএব জয় পরাজয় ছাপিয়ে এই দুই দলই পরবর্তী রাউন্ডে যাবে, একদল গ্রুপের সেরা হয়ে আরেকদল সেরা তিন রানার্সআপ দল হয়ে। তবে যেহেতু ইরান, জর্ডান, চাইনিজ তাইপে- তিন দলেরই পয়েন্ট ছয়, সেহেতু এই তিন দলের পরবর্তী ম্যাচ কোন কারণে ড্র হলে তাদের পয়েন্ট হবে সাত।
বাংলাদশ যদি দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে হেরে যায়, তাহলে অন্য তিন ম্যাচের ড্র ফলাফল কাল হয়ে দাঁড়াবে কৃষ্ণা-সাগরিকাদের জন্যে। অতএব নিদেনপক্ষে একটা ড্র প্রয়োজন বাংলাদেশের। দক্ষিণ কোরিয়া বেশ কঠিন প্রতিপক্ষ হলেও ড্র আদায় করে নেওয়া অসম্ভব কিছু নয়। ঠিকঠাক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে আর ভাগ্য সহায় হলে জয়ও পেতে পারে টাইগ্রেসরা।