পরাজয়েও অম্লান যে বিশ্বাস

নিজের মেধা আর অসাধারণ বুদ্ধিদীপ্ত কৌশলে লঙ্কানদের মাটিতে দ্বিতীয় সারির দল নিয়েও সিরিজ জয় করে নিয়েছেন তিনি। তিনি যে জাতীয় দলের কোচ হতে সবদিক দিয়েই যোগ্য সেটার প্রমাণ অবশ্য এই সিরিজেই দিয়েছেন। অনূর্ধ্ব -১৯ থেকে জাতীয় দল নিজের কোচিং দক্ষতা, অভিজ্ঞতা সবকিছুর ছাপ বেশ ভালোভাবে লেপ্টে দিচ্ছেন দ্রাবিড়। এই দ্রাবিড়ই আগাম ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন, যাদের তিনি নিয়ে যাবেন - প্রত্যেককেই অন্তত এক ম্যাচ হলেও সুযোগ দেবেন। সেই কথা রাখলেন তিনি।

একের পর এক ম্যাচে হার, সিরিজ হারে বিধ্বস্ত শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট। কোনো কিছুতেই যেন হারের চলন্ত ট্রেন থামানো যাচ্ছিলোনা। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে প্রায়। সদ্য সমাপ্ত ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ২-০ তে পিছিয়ে থেকে অবশেষে শেষ ম্যাচে জয়ের দেখা পেলো লঙ্কানরা। সিরিজ হাত থেকে ফসকে গেলেও বহুল প্রতিক্ষিত জয় পেয়ে অন্তত হারের মিছিলটা থামালো লঙ্কা বাহিনীরা।

ভারতের দ্বিতীয় সারির দল হলেও এই দল বিশ্বের যেকোনো ক্রিকেট দলকেই হারাতে সক্ষম। সেটা অবশ্য সিরিজের প্রথম দুই ওয়ানডেতেই তাঁরা প্রমাণ করেছে। মূল দলের বেশ কিছু সিনিয়র ও অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ছাড়াই এই দলের সামনে নাকানিচুবানি খেয়েছে লঙ্কান ক্রিকেটাররা। তবে স্বস্তির ব্যাপার হলো শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের ক্রমাগত পতনটা অবশেষে জয়ের গোঁড়ায় এসে ঠেকলো।

সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। প্রথমে ব্যাট করে এদিন বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ২২৫ রানেই গুড়িয়ে যায় সফরকারীরা। জয়াবিক্রমা আর আকিলা ধনঞ্জয়ার দুর্দান্ত বোলিংয়ে এদিন বড় স্কোর সংগ্রহ করতে পারেনি ভারত। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ওপেনিং জুটিতে ৩৫ রান করে লঙ্কানরা। দ্বিতীয় উইকেটে আভিস্কা ফার্নান্দো ও মিনোদ ভানুকার ১০৯ রানের জুটিই দলকে জয়ের ভীত গড়ে দেয়!

দলের অবস্থা তখন ১ উইকেটে ১৪৩ রান। জয়ের জন্য প্রয়োজন ৮৩ রান, হাতে ৯ উইকেট। এই সহজ সমীকরণ টপকাতে লঙ্কানরা শেষ পর্যন্ত সাত উইকেট হারায়। আভিস্কার ৭৬ আর মিনোদ ভানুকার ৬৫ রানেই ৩ উইকেটের জয় পায় লঙ্কানরা।

তবে, এর আগে আজকের ম্যাচে এক অনন্য কান্ড ঘটায় ভার‍ত। ভারতের একাদশে আজকে পাঁচজন খেলোয়াড় অভিষিক্ত হন! মোট ৬ পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামে ভারত। যেখানে সাঞ্জু স্যামসন, রাহুল চাহার, চেতন সাকারিয়া, নীতিশ রানা আর কৃষ্ণাপ্পা গৌতম ওয়ানডে ক্যাপ পান।

এর মধ্যে দিয়ে এক অনন্য রেকর্ডও হলো। নিজেদের ইতিহাসের প্রথম ওয়ানডে ছাড়া একই ম্যাচে পাঁচ ভারতীয়র ওয়ানডে অভিষেক হলো দ্বিতীয়বারের মতো। এর আগের ঘটনাটা আজ থেকে ৪০ বছর পুরনো। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৯৮০ সালে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) অভিষেক হয়েছিল একসাথে পাঁচ ভারতীয় ক্রিকেটারের। যার মধ্যে ছিলেন দিলীপ দোশি, কীর্তি আজাদ, সন্দ্বীপ পাতিল, রজার বিনি আর তিরুমালাই শ্রীনিবাসনের।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভারতের ওয়ানডে সিরিজের স্কোয়াডের প্রায় বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই একাদশে নিজেদের প্রমাণের সুযোগ পেয়েছেন। এছাড়া প্রথম দুই ম্যাচেই অসাধারণ জয়ে সিরিজে আধিপত্য দেখায় ভারত। এর পেছনে সবচেয়ে বেশি যে মানুষটির অবদান তিনি এই দ্বিতীয় সারির দলের প্রধান কোচ রাহুল দ্রাবিড়।

নিজের মেধা আর অসাধারণ বুদ্ধিদীপ্ত কৌশলে লঙ্কানদের মাটিতে দ্বিতীয় সারির দল নিয়েও সিরিজ জয় করে নিয়েছেন তিনি। তিনি যে জাতীয় দলের কোচ হতে সবদিক দিয়েই যোগ্য সেটার প্রমাণ অবশ্য এই সিরিজেই দিয়েছেন। অনূর্ধ্ব -১৯ থেকে জাতীয় দল নিজের কোচিং দক্ষতা, অভিজ্ঞতা সবকিছুর ছাপ বেশ ভালোভাবে লেপ্টে দিচ্ছেন দ্রাবিড়। এই দ্রাবিড়ই আগাম ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন, যাদের তিনি নিয়ে যাবেন – প্রত্যেককেই অন্তত এক ম্যাচ হলেও সুযোগ দেবেন। সেই কথা রাখলেন তিনি।

যদিও শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের এমন দুর্দিনে এই সিরিজে ভারতকে খুব বেশি পরীক্ষায় পড়তে হয়নি। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের দুর্দিন মনে পড়লেই মনে আসে সাবেকদের কথা। সনাথ জয়াসুরিয়া, মাহেলা জয়াবর্ধনে, কুমার সাঙ্গাকারাদের রেখে যাওয়া দলের এমন বেহাল অবস্থা হবে তাঁরা হয়তো কখনো দু:স্বপ্নেও কল্পনা করেনি।

সবশেষ ১১১ ওয়ানডে ম্যাচে মাত্র ৩৫ জয়! ভারতের বিপক্ষে জয়ে সেটি এখন ৩৬ এ ঠেকেছে! তবে এই জয় দিয়েই কি আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে লঙ্কানরা? নাকি এই জয় নিছকই এক আক্ষেপ। আজকের জয়ে কালো মেঘে ঢাকা লঙ্কান ক্রিকেটে সূর্যের রেখা উঁকি দিলো বলে! তবে, জমাট বাধা কালো এই মেঘের ঘনঘটায় শেষ পর্যন্ত সূর্যের দেখা মিলবে কিনা সে নিয়ে রয়েছে বড় সংশয়।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...