উত্থান আর পতনে ভরা ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ইংলিশ অলরাউন্ডার বেঞ্জামিন অ্যান্ড্রু স্টোকস অনেকবারই মুগ্ধ করেছেন পুরো ক্রিকেট বিশ্বকে। ব্যাট হাতে কিংবা বল হাতে, যেখানে সুযোগ পেয়েছেন সেখান থেকেই দলের জন্য সবটুকু করেছেন। পুরোটা সময় বাইশ গজের পারফরম্যান্সে স্তব্ধ করে দেয়া স্টোকস, এবার আকস্মিক অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে অবাক করলেন সবাইকে।
নিজের ঘরের মাঠ সিট ইউনিক রিভারসাইড স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজের শেষ ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন বেন স্টোকস। অবশ্য নিজের শেষ ম্যাচটি রাঙিয়ে রাখতে পারেননি এই অলরাউন্ডার। বল হাতে উইকেট শূন্য আর ব্যাটিংয়ে মাত্র পাঁচ রান করেই একদিনের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন তিনি।
কিন্তু তাই বলে ইংলিশদের টেস্ট অধিনায়কের ওয়ানডে ক্যারিয়ারকে ছোট করে দেখার কিছু নেই। আন্তজার্তিক ক্রিকেটে স্টোকসকে অমরত্ব দিয়েছে এই ওয়ানডে ক্রিকেটই। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনালে তার বিস্ময়কর পারফরম্যান্স ইংল্যান্ড তাদের বহুল আকাঙ্খিত সোনালী ট্রফি জিতেছিল। ক্যারিয়ারের বিদায়লগ্নে পঞ্চাশ ওভারের ফরম্যাটে স্টোকসের রেকর্ড আর কার্যকারিতায় নজর দেয়া যাক।
নিজের আলোচিত এক ওয়ানডে অধ্যায়ে সর্বমোট ১০৫ বার ইংলিশ জার্সিতে মাঠে নেমেছিলেন বেন স্টোকস। তার খেলা ম্যাচগুলোতে ৬০টি ম্যাচে জয়ের দেখা পেয়েছে ইংল্যান্ড, অন্যদিকে হেরে গিয়েছে ৩৮ বার। এছাড়া দুইটি ম্যাচ ড্র এবং বাকি পাঁচ ম্যাচ কোন ফলাফল ছাড়াই শেষ হয়েছে।
সিট ইউনিক রিভারসাইড স্টেডিয়ামে নিজের ঘরের মাঠের শেষ ইনিংস সহ মোট ৯০ ইনিংস ব্যাট হাতে নেমেছেন বেন স্টোকস। এই সময় তিনি প্রায় ৩৯ ব্যাটিং গড়ে ২৯২৪ রান করেছিলেন। এছাড়া ওয়ানডে ফরম্যাটেও রান করেছেন ৯৫.০৮ স্ট্রাইক রেট বজায় রেখে।
এছাড়াও বেন স্টোকসকে তাঁর ক্যারিয়ারে সবমিলিয়ে ৮৮ বার বল হাতে দেখা গিয়েছে। আন্তজার্তিক ওয়ানডেতে তিনি ৪২.৩৯ গড়ে ৭৪টি উইকেট নিয়েছেন। এবং একজন ফিল্ডার হিসেবে ৪৯টি ক্যাচ ধরেছিলেন স্টোকস।
নিজের ক্যারিয়ারে অধিকাংশ সময় পাঁচ নম্বর কিংবা তারও নিচে ব্যাট করতে হয়েছে বেন স্টোকসকে। আর তাই দুর্দান্ত ব্যাটিং প্রতিভা হওয়ার পরও পরিসংখ্যানে তার ছাপ খুব একটা ফেলতে পারেননি। তবু তাঁর নামের পাশে তিনটি সেঞ্চুরি আছে; বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১০১ রানের দুইটি ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। এবং ক্যারিয়ার সেরা ১০২ রানের নকটি এসেছিলো প্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।
তিনটি শতক ছাড়াও ২১টি অর্ধশতক করেছেন বেন স্টোকস। ২০১১ সালের আগষ্টে বেন স্টোকসের অভিষেক হয়েছিল। এরপর থেকে রানের হিসেবে স্টোকসের আগে আছেন জো রুট, সদ্য অবসর নেওয়া সতীর্থ ইয়ন মরগান, বর্তমান অধিনায়ক জস বাটলার, জেসন রয় এবং জনি বেয়ারস্টোর। বাটলার ছাড়া বাকিরা সবাই অধিকাংশ সময় ব্যাটিং করেছেন ওপেনিং, তিন এবং চার নম্বরে।
নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসগুলো নিঃসন্দেহে ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপেই খেলেছিলেন বেন স্টোকস। ফাইনালে অপরাজিত ৮৪ করার পাশাপাশি আটটি বাউন্ডারি এসেছিল স্টোকসের ব্যাট থেকে, যা ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপ জিততে সাহায্য করেছিল।
ফাইনালের নায়কোচিত এই কীর্তি ছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৮৯ রানের দুইটি নক খেলেছিলেন। সবমিলিয়ে পুরো টুর্নামেন্টে ৬৬.৪২ গড়ে এবং ৯৩.১৮ স্ট্রাইক রেটে ৪৬৫ রান করেছিলেন।
বেন স্টোকস মূলত ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে নিয়মিত বোলিং করতেন, এরপর ধীরে ধীরে দলের মিডল অর্ডার সামলানো তাঁর কাঁধে আসায় বল হাতে অনিয়মিত হয়ে যান তিনি। এজন্য স্টোকসের ক্যারিয়ার সেরা স্পেল গুলো এসেছে শুরুর দিকে। তার একমাত্র ফাইভ উইকেট হল এবং একমাত্র চার উইকেট হল এসেছিল মাত্র ১৪ ম্যাচের মধ্যেই।
২০১৯ বিশ্বকাপ শুরুর পর থেকে ২১ ম্যাচে মাত্র ১১ উইকেট পেয়েছেন ইংলিশ অলরাউন্ডার। তার সর্বশেষ দুইটি তিন উইকেটের স্পেল এসেছে পুনেতে ভারতের বিপক্ষে এবং বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে। অবশ্য স্টোকসের অভিষেকের পর থেকে সর্বোচ্চ উইকেট নিয়েছে এমন ইংলিশ বোলাদের তালিকায় স্টোকসের অবস্থান সাত নম্বরে।
মাত্র ৩১ বছর বয়সেই ইংল্যান্ড ওয়ানডে দলের জার্সি খুলে রেখেছেন বেন স্টোকস, এমনটা মানা যায় না। অন্য অনেকের মতই মানতে পারেননি নাসের হুসেইন, মাইকেল ভনের মত কিংবদন্তিরা। এমন অবেলায় অবসর না নিলে হয়তো নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ার অর্জনের ঝুলিতে আরো অনেক কিছু যোগ করতে পারতেন বেন স্টোকস।
তারপরও সংখ্যা দিয়ে আসলে এমন ক্রিকেট তারকাকে বিচার করা যায় না। তিনি পরিসংখ্যানে নয়, বরং ফুটে ওঠেন ইম্প্যাক্টফুল পারফরম্যান্সের মধ্যদিয়ে। তাই ব্যাট হাতে তিন হাজারে মত রান দেখে সাদামাটা মনে হতে পারে কিন্তু এই অল্প রান করার মধ্য দিয়েই তিনি ইংরেজ জাতির নায়ক বনে গিয়েছেন। অবিসংবাদিতভাবেই আধুনিক ক্রিকেটের সবচেয়ে কার্যকরী খেলোয়াড়দের একজন ছিলেন বেঞ্জামিন স্টোকস৷