কোপা আমেরিকা কাপের ফাইনালের উত্তেজনার প্রায় কুড়ি ঘন্টা পর ইউরো ২০২০ এর ফাইনালে মাঠে নামতে যাচ্ছে ইতালী ও ইংল্যান্ড। প্রথমবার ফাইনালে খেলে শিরোপা জয় করতে চায় স্বাগতিক ইংলিশরা। লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে নিশ্চয়ই জয় পেতে চাইবে দুই দলই।
বিশ্ব ফুটবলে ইংল্যান্ড ও ইতালির লড়াই বেশ পুরনো। ১৯৩৩ সালে সর্বপ্রথম এক প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ইউরোপের এই দুই পরাশক্তি। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ২৭ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে তারা। অনেকের কাছেই সংখ্যাটি খুব কম। এর মধ্যে সেরা পাচঁটি ম্যাচের গল্প আজকে পাঠকরা জানবেন।
- ১৫ জুন ১৯৮০: ইতালি ১-০ ইংল্যান্ড
১৯৮০ সালের ইউরো কাপের স্বাগতিক ছিল ইতালি। মাত্র ৮ দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় টুর্নামেন্টটি। গ্রুপপর্ব পার হওয়ার পর দুটি ম্যাচ জিতলেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ ছিল তাদের সামনে। গ্রুপপর্বের ম্যাচে ইতালি ১-০ গোলে ইংল্যান্ডকে পরাজিত করে।
টুর্নামেন্টে গ্রুপপর্বে শুধু এই ইতালীর কাছেই পরাজয়ের স্বাদ পেয়েছিল ইংলিশরা। এক ড্র ও এক জয়ে ৩ পয়েন্টে তৃতীয় স্থানে থেকে আসর শেষ করেছিল ইংল্যান্ড। তখন ম্যাচ জয়ে ছিল ২ পয়েন্ট করে পেত বিজয়ীরা। ইতালি ৪ পয়েন্ট নিয়ে উঠে যায় সেমিফাইনালে।
- ১ জুলাই ১৯৯০: ইতালি ২-১ ইংল্যান্ড
ইউরোর পর আরেকটি স্বরণীয় ম্যাচে মাঠে নামে ইতালি-ইংল্যান্ড। ১৯৯০ সালের ফুটবল বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল দেশ দুটি। সেবার স্বাগতিক ছিল ইতালি। স্থান নির্ধারণী সেই খেলায় আজ্জুরিরা ২-১ গোলে হারায় ইংল্যান্ডকে।
ম্যাচের ৭১ মিনিটে রবার্তো ব্যাজ্জিও প্রথম গোল করে স্বাগতিকদের এগিয়ে দেন। ১০ মিনিট পর ইংল্যান্ডের ডেভিড প্যাট গোল করে দলকে খেলায় ফিরিয়ে আনেন। ৮৬ মিনিটের সময় পেনাল্টি থেকে জয়সূচক গোলটি করেন সালভাতর শিলাচি। ১৯৯০ এর বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোল স্কোরার ছিলেন এই শিলাচি। পাশাপাশি সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও জিতেছিলেন।
- ১১ অক্টোবর ১৯৯৭: ইতালি ১-১ ইংল্যান্ড
১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে ব্রাজিলের কাছে পরাজয়ের পর ১৯৯৬ সালের ইউরোর সেমিফাইনালে ইংলিশদের স্বপ্ন ভাঙে টাইব্রেকারে জার্মানির কাছে হেরে। ১৯৯৮ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে একই গ্রুপে ছিল ইতালী-ইংল্যান্ড। গ্রুপপর্বে দুই দলের শেষ ম্যাচটি ছিল ১৯৯৭ সালেল ১১ অক্টোবর। ইতালি রোমে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ম্যাচের আগে ১৮ পয়েন্ট ছিল ইংলিশদের, অন্যদিকে ইতালির ছিল ১৭।
পরিস্থিতি এমন ছিল যে, এ ম্যাচের পর যে দল শীর্ষে থাকবে তারা সরাসরি বিশ্বকাপে অংশ নেবার সুযোগ পাবে। পরাজিত দল গ্রুপে দ্বিতীয় হয়ে প্লে¬-অফ রাউন্ড খেলতে হবে। ম্যাচটি গোলশূন্যভাবে শেষ হয়। তাতে করে সরাসরি ১৯৯৮ বিশ্বকাপে জায়গা করে নেয় ইংল্যান্ড। এ ম্যাচটি ড্র করার পর ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ইটস কামিং হোম গানে যোগ হয় ‘অ্যান্ড দেন ওয়ান নাইট ইন রোম উই আর স্ট্রং উই হ্যাড গ্রন’ লাইনটি।
- ২৪ জুন ২০১২: ইতালি ৪-২ ইংল্যান্ড (টাইব্রেকারে)
দুটি দলের মধ্যে কম ম্যাচ হলেও পরিস্কার ব্যবধানে কেউই জয়েল মুখ দেখেনি। স্বরণীয় তৃতীয় ম্যাচটির ফলাফল আসে টাইব্রেকারের মাধ্যমে। ২০১২ ইউরোতে অংশগ্রহন করেছিল ১৬টি দল। গ্রুপপর্বের পরই সরাসরি কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে দলগুলো। আসরে শেষ আটে মুখোমুখি হয়েছিল ইতালি ও ইংল্যান্ড। ম্যাচের নির্ধারিত এবং অতিরিক্ত সময়ে কোন গোল করতে পারেনি কোন দলই।
এরপর টাইব্রেকারে প্রথম দুটি শটে বল জালে জড়ায় ইংলিশরা। ইতালি দুই শটের একটি থেকে গোল পায়। ইংলিশরা তৃতীয় ও চতুর্থ শট দুটিতে আবার গোল পায়নি। টাইব্রেকারে ইতালীর তৃতীয় শটটি নিয়েছিলেন আন্দ্রে পিরলো। তার দারুণ পেনেনকা শটই দু’দলের মধ্যে ব্যবধান গড়ে দিয়েছিল সেদিন। ইতালী চতুর্থ ও পঞ্চম শটেও গোল করলে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয় ইংলিশরা। তারা আরো একবারের মতো হতাশ হয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করে।
- ১৪ জুন ২০১৪: ইতালি ২-১ ইংল্যান্ড
ইউরোর দু’বছর পর আবারো মুখোমুখি হয় ইতালি ও ইংল্যান্ড। ২০১৪ বিশ্বকাপে আবার একই গ্রুপে ছিল দল দুটি। ব্রাজিল বিশ্বকাপে গ্রুপপর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ইতালি ২-১ গোলে পরাজিত করে ইংল্যান্ডকে। শুরুতে হারের ধাক্কা সমলে উঠতে পারেনি বারবার ব্যর্থ হওয়া ইংলিশরা।
সেবার তারা গ্রুপপর্ব থেকেই বাদ পড়ে হতাশ করে। খেলা যখন ১-১ গোলে সমতায় ছিল, ঠিক তখনি ম্যাচের ৫০ মিনিটের সময় মারিও বালোতেল্লির গোলে এগিয়ে যায় ইতালী। ওই গোলেই ম্যাচ জিতে যায় আজ্জুরিরা।