পর্দা উঠল নানা জল্পনা-কল্পনার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির। ২০১৩ সালের পর শিরোপা ঘরে তুলল রোহিত শর্মার ভারত। গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে পারফরমারের অভাব ছিল না। তবে সত্যি বলতে, চ্যাম্পিয়ন্স ভারতের খেলোয়াড়রাই সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছেন। সেই সাথে নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটাররাও ছিলেন অনবদ্য।
তাইতো খেলা ৭১-এর গড়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির একাদশে এই দুই দলের খেলোয়াড়দেরই আধিক্য রয়েছে। বেশ কয়েকটি পজিশনে অবশ্য যদি-কিন্তু রয়েছে। তবুও এই ইম্প্যাক্ট বিবেচনায় সাজানো হয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেরা একাদশ।
- রাচিন রবীন্দ্র (নিউজিল্যান্ড)
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির একাদশে, টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়কে নিশ্চয়ই বাদ দেওয়া যায় না। তাইতো ওপেনার হিসেবে প্রথমেই থাকছেন রাচিন রবীন্দ্র। ২৬৩ রান করেছেন তিনি ব্যাট হাতে। দুইটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন তরুণ এই ব্যাটার। শুধু কি তাই? ফাইনালের মঞ্চে একটি উইকেটও শিকার করেছেন তিনি। মোট তিনখানা উইকেট রয়েছে তার ঝুলিতে। তবে হতাশ বদনেই রানার্সআপ হয়ে মাঠ ছেড়েছেন রাচিন।
- রোহিত শর্মা (ভারত)
রানের বিচারে হয়ত রোহিত শর্মাকে নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। কিন্তু ইম্প্যাক্ট বিবেচনায় তাকে ছাপিয়ে যেতে পারেনি কেউ। বেন ডাকেট হয়ত এগিয়ে রয়েছেন তার থেকে রানের বিচারে। ইব্রাহিম জাদরানেরও ইম্প্যাক্ট কম নয়। এসবকে পাশ কাটিয়ে রোহিতের ওই কুইক ফায়ারিং ইনিংসই ভারতের জয়ের রাস্তা করেছে মসৃণ।
পুরো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে একটি টসও জয়লাভ করতে পারেননি। তবুও দলকে বানিয়েছেন অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন্স। তাইতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির একাদশের অধিনায়ক তিনি। তাছাড়া ফাইনালে তার খেলা ৭৬ রানই গড়ে দিয়েছে সমস্ত পার্থক্য।
- বিরাট কোহলি (ভারত)
তিন নম্বরে পজিশনে বিরাট কোহলির চাইতে খুব বেশি ভাল করেছেন এমন খেলোয়াড় খুঁজে পাওয়া দায়। গুরুত্বপূর্ণ সব ম্যাচে তার ব্যাট জ্বলে উঠেছে আপন শক্তিতে। একটি ফিফটি ও একটি অনবদ্য সেঞ্চুরিতে ২১৮ রান করেছেন তিনি ভারতের পক্ষে। তাকেই তাই সামলাতে হচ্ছে এই একাদশের তিন নম্বর পজিশন।
- শ্রেয়াস আইয়ার (ভারত)
ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৪৩ রান এসেছে শ্রেয়াস আইয়ারের ব্যাট থেকে। কিন্তু স্রেফ রানের বিচারে তাকে মূল্যায়ন করা যাবে না। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের ব্যাটিংয়ের আস্থার স্তম্ভ হয়ে তিনি হাজির হয়েছেন। যখনই দল বিপদে পড়েছে, তিনি দু’হাতে আগলে রেখেছেন ব্যাটিং অর্ডারকে। সেঞ্চুরি না থাকলেও দু’টো মহাগুরুত্বপূর্ণ ফিফটি করেছেন তিনি। ফাইনালের তার ৪৮ রান ম্যাচ থেকে ভারতকে ছিটকে যাওয়া আটকে দিয়েছে।
- অক্ষর প্যাটেল (ভারত)
পাঁচ নম্বরে, ইম্প্যাক্ট বিবেচনায় অন্য কেউ সুযোগ পাচ্ছেন না এই একাদশে। প্রতিপক্ষের বোলিং লাইন পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছেন তিনি। কোন কোন ক্ষেত্রে ভারতের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সব জুটিতে রেখেছেন অবদান। এই পজিশনে একজন অলরাউন্ডারের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন। ব্যাটে ১০৯ রান করার পাশাপাশি, বল হাতে ৪.৩৫ ইকোনমিতে পাঁচটি উইকেটও বাগিয়েছেন তিনি।
- গ্লেন ফিলিপস (নিউজিল্যান্ড)
গ্লেন ফিলিপসকে বাদ দেবেন কিভাবে আপনি? সে তো ছিল সর্বত্র। ব্যাটিং, বোলিং ফিল্ডিং সবখানেই সুপারম্যানের মত হাজির হয়েছেন গ্লেন ফিলিপস। ১৭৭ এসেছে তার ব্যাট থেকে। বল হাতে স্রেফ দুইটি উইকেট পেলেও ছিলেন বেশ ইকোনমিক্যাল। বলে রাখা ভাল নিউজল্যান্ড তাদের অধিকাংশ ম্যাচই খেলেছে পাকিস্তানের ব্যাটিং উইকেটে, তাছাড়া ফিলিপস পার্টটাইম বোলার।
তবে তিনি সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছেন ফিল্ডিংয়ে। তার তালুবন্দী করা তিনটি ক্যাচ তো সকলের চোখে লেগে থাকবে বহুবছর। ফাইনালের মঞ্চে শুভমান গিলের ক্যাচ ধরে ম্যাচের মোমেন্টাম ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। মোট পাঁচটি ক্যাচ ধরেছেন ফিলিপস, এছাড়া রান বাঁচিয়েছেন অগণিত।
- আজমতউল্লাহ ওমরজাই (আফগানিস্তান)
ভারত, নিউজিল্যান্ড বাদে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেরা একাদশে জায়গা পাচ্ছেন আফগানিস্তানের আজমতউল্লাহ ওমরজাই। আফগানিস্তান যতক্ষণ অবধি টুর্নামেন্টে টিকে ছিল, আজমতউল্লাহ ব্যাট আর বলে পারফরম করেছেন। এখানে তর্ক হতে পারে হার্দিক পান্ডিয়াকে নিয়ে।
তবে ওমরাজাই ইম্প্যাক্ট বিবেচনায় এগিয়ে থাকছেন খানিকটা। আফগানিস্তানের পক্ষে ১২৬ রান করেছেন ওমরজাই। বল হাতেও রয়েছে তার সাতটি উইকেট। পরাশক্তি ইংল্যান্ডকে ধরাশায়ী করা ম্যাচে তিনি নিয়েছিলেন ফাইফার। ওই ম্যাচে ওমরজাইয়ের ৩১ বলে ৪১ রানের ঝড়ো ইনিংস আফগানিস্তানের সেমিফাইনালের আশা বাঁচিয়ে তুলেছিল।
- মিচেল স্যান্টনার (নিউজিল্যান্ড)
পরাজিত সেনাপতিরও ঠাই হচ্ছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেরা একাদশে। না হওয়ার বিশেষ কারণ তো নেই। দলকে ফাইনালে তুলতে তিনি অবদান রেখেছেন সামনে থেকেই। নিউজিল্যান্ডের জার্সিতে স্রেফ ৪.৮০ ইকোনমিতে নয় খানা উইকেট বাগিয়েছেন স্যান্টনার। নিউজিল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, এমনকি টুর্নামেন্টেরও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার স্যান্টনার।
- বরুণ চক্রবর্তী (ভারত)
একেবারে শেষ মুহূর্তে ভারতের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলের সংযুক্ত হয়েছিলেন বরুণ চক্রবর্তী। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসেও তিনি ছড়ি ঘুরিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ম্যাচ। স্যান্টনারের সমান নয়টি উইকেট তিনিও শিকার করেছেন। কিন্তু ম্যাচ খেলেছেন একটি কম। তাছাড়া যখনই ভারতের উইকেটের প্রয়োজন হয়েছে, তখনই তিনি উইকেট শিকার করেছেন। একটা ফাইফারও রয়েছে তার এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে।
- ম্যাট হেনরি (নিউজিল্যান্ড)
ফাইনালে নিউজিল্যান্ড হয়ত সবচেয়ে বেশি মিস করেছে ম্যাট হেনরিকে। কেননা তিনিই যেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। দশ খানা উইকেট নিজের করে নিতে পেরেছিলেন তিনি ইনজুরিতে পড়ার আগে। নিউজিল্যান্ডের ফাইনাল অবধি যাত্রায় তার অবদান অনস্বীকার্য।
- মোহাম্মদ শামি (ভারত)
বরুণ, স্যান্টনারের পর মোহাম্মদ শামির পকেটেও রয়েছে নয়টি উইকেট। ভারতের একাদশে একমাত্র পেসার হিসেবে তিনি খেলেছেন ফাইনাল পর্যন্ত সবগুলো ম্যাচ। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে পাঁচ উইকেটও পেয়েছিলেন বর্ষীয়ান এই পেসার। তাকে রেখে তাই কোন ধরণের একাদশ সাজানো প্রায় অসম্ভব।