নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে যে জেদ জমা হয়েছিল ইংল্যান্ডের হৃদয়ে, সেটা রীতিমতো টর্নেডোতে রূপান্তরিত হয়েছে বাংলাদেশের সাথে। আর সেই টর্নেডোর সামনে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছে টাইগাররা – আগ্রাসী ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রতিরোধই করা যায়নি। ফলাফল, ১৩৭ রানের বড় পরাজয়।
টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নামা ইংলিশরা শুরু থেকেই ছিল আগ্রাসী। টাইগার বোলারদের কোন রূপ ছাড় দেননি দুই ওপেনার ডেভিড মালান এবং জনি বেয়ারস্টো। ওপেনিং জুটিতে ভর করেই মাত্র ১৫.৩ বলে দলীয় শতক পূর্ণ করে ইংলিশরা। এরপর আরো মারমুখী হওয়ার চেষ্টা করলেও অধিনায়ক সাকিব ব্রেক থ্রু এনে দেয়ায় সাময়িক রক্ষা পায় বাংলাদেশ।
৫২ রানের মাথায় বেয়ারস্টো ফিরে গেলেও দীর্ঘমেয়াদে তেমন লাভ হয়নি। তিনে নামা জো রুট, মালানকে সঙ্গে নিয়ে তান্ডব শুরু করেন মিরাজ, তাসকিনদের ওপর। দুজনের ২০ ওভারের জুটিতেই ১৫১ রান জমা হয় স্কোরবোর্ডে; ততক্ষণে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছে যান বাঁ-হাতি ইংরেজ ওপেনার। শেখ মেহেদির বলে বোল্ড হওয়ার আগে ১০৭ বলে ১৪০ রানের অতিমানবীয় এক ইনিংস খেলেছিলেন তিনি।
এরপর অবশ্য শরিফুল ইসলাম খানিকটা হলেও স্বস্তি দেন বাংলাদেশ দলকে। নিজের টানা দুই ওভারে রুট, বাটলার আর লিভিংস্টোনকে আউট করেন তিনি। এই বাঁ-হাতি পেসারের সৃষ্ট মোমেন্টাম কাজে লাগিয়ে ডেথ ওভারে ইংল্যান্ডকে চাপে রাখে টাইগার বোলাররা। মেহেদি আর শরিফুলের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে শেষ দশ ওভারে ৬৬ রান তুলতে পারে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
সবমিলিয়ে পঞ্চাশ ওভারে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ দাঁড়ায় নয় উইকেটে ৩৬৪ রান। ব্যাটিং নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকা বাংলাদেশের জন্য এমন টার্গেট সাঁতরে নদী পার হওয়ার মতই কঠিন।
প্রায় অসম্ভব কাজটা আরো অসাধ্য হয়ে উঠলো দলের সবচেয়ে ইনফর্ম ব্যাটার নাজমুল শান্ত কোন রান করতে না পারায়। এর আগে অবশ্য তরুণ ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম আউট হয়েছেন ১ রানের মাথায়। এই দুই বাঁ-হাতির শিকারী রিচ টপলি ছাড় দেননি সাকিবকেও, বোল্ড করে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান তাঁকে।
আরো একবার মিডল অর্ডারে সুযোগ পেলেও এবার সফল হতে পারেননি মিরাজ, মার্ক উডের এক্সপ্রেস গতির বিরুদ্ধে কোন জবাব জানা ছিল না তাঁর। সতীর্থদের এমন আসা যাওয়ার মধ্যেও লিটন দাস ছিলেন অবিচল, দারুণভাবে সামলেছেন ইংলিশ পেস এটাককে। দলের রান ৬৫ হতেই ফিফটির স্বাদ পেয়ে যান তিনি।
মুশফিকুর রহিমও চেষ্টা করেন এই ওপেনারকে সঙ্গ দিতে। দুইজনের ব্যাটে ভর করে প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠে টিম টাইগার্স। তবে লিটনের বিদায়ে দুজনের ৭২ রানের জুটি ভাঙ্গে, সেই সাথে সব আশা শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের। এরপর শুধুই পরাজয়ের ব্যবধান কমানোর লড়াই, আর সেই লড়াইয়ে মুশফিকের অবদান ৫১ রান, আর তাওহীদ হৃদয় করেন ৩৯।
শেষ পর্যন্ত সবকয়টি উইকেট হারিয়ে ২২৭ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। আফগানিস্তানকে হারিয়ে উড়তে থাকা সাকিবরা হঠাৎ করেই বাস্তবে ফিরে এলেন যেন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের আগে এমন ধাক্কা নি:সন্দেহে বাংলাদেশকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে।