৬০, ১২৭, ৫৩, ৩৩ এবং আজকে ১৮৪ রানের ইনিংস। প্রথমেই হয়তো এই সংখ্যাগুলো আপনার বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে। তবে এই অবিশ্বাস্য সংখ্যাগুলোই বাস্তব রূপ পেয়েছে এনামুল হক বিজয়ের ব্যাটে চড়ে। এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে ব্যাট হাতে এখন পর্যন্ত তাঁর খেলা পাঁচটি ইনিংসের স্কোর উপরের এই সংখ্যাগুলো।
ডিপিএলে বরাবরই ভালো পারফর্ম করেন এনামুল হক বিজয়। তবে এবারের ডিপিএলে যেন সবকিছুকেই ছাপিয়ে যাচ্ছেন এই ব্যাটসম্যান। সাভারের বিকেএসপির মাঠ গুলোতে বজয় নামা মানেই যেন ব্যাট হাতে শটের ফুলঝুরি। আজ ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিপক্ষে খেলতে নেমে তুলে নিয়েছেন এবারের লিগে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি।
এখন পর্যন্ত প্রাইম ব্যাংকের হয়ে মোট ৫ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেললেন। সেখানে সবমিলিয়ে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৪৫৭ রান। এখন পর্যন্ত ডিপিএলে তিনি ব্যাটিং করেছেন ৯১.৪০ গড়ে। আজ ব্রাদ্রার্স ইউনিয়নের বিপক্ষে অবশ্য শুধু সেঞ্চুরিই করেননি। খেলেছেন ১৮৪ রানের বিশাল এক ইনিংস।
এই ইনিংস খেলে ডিপিএলে সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহকদের তালিকায়ও নিজেকে সবার উপরে নিয়ে গিয়েছেন বিজয়। ওদিকে চার ম্যাচে ৪০২ রান করে তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন নাঈম ইসলাম। তবে দুই সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে আজ নাঈমকে ছাড়িয়ে গেলেন বিজয়।
এর আগে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেও ১২৭ রানের বিশাল এক ইনিংস খেলেছেন এনামুল হক বিজয়। শুধু তাই না, এর আগে এবারের বিপিএলেও দারুণ ফর্মে ছিলেন বিজয়। এবছর বিজয় ব্যাট হাতে নামা মানেই যেন রানের ফুলঝুরি। বিপিএলেও ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের একজন।
সবমিলিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে এখন এনামুল হক বিজয়ের জয় জয়কার। বিপিএল, ডিপিএল সব টুর্নামেন্টেই তাঁর ব্যাট থেকে রান আসছে। একসময় বাংলাদেশের হয়েও তিনি এমন ঝড় তুলবেন বলেই স্বপ্ন ছিল।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে অবশ্য শুরুটা ভালোই করেছিলেন। একসময় রঙিন পোশাকের ক্রিকেটে বাংলাদেশের ভবিষ্যত ভাবা হতো তাঁকে। এনামুল হক বিজয়ের বয়স তখন ১৬ বছরও পেড়োয়নি যখন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষিক্ত হয়েছিলেন। তাঁর প্রতিভা নিয়েও কোন সংশয় ছিল না। মাত্র বিশ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসেও বড় স্বপ্নই দেখিয়েছিলেন। তবে এরপর শুধুই পিছন পানে ছুটে চলার গল্প।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথমদিককার তারকা তিনি। এনামুলদের হাতে ধরেই এই ফরম্যাটটায় উপরে উঠতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। সেই ভরসার প্রতিদানও দিয়েছিলেন। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের মাটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দারুণ কিছু ইনিংস খেলেছিলেন। তবে এরপর আর সেই এনামুলকে কখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। এনামুল একসময় হারিয়েই গেলেন। যদিও ক্যারিয়ারের শেষ টি-টোয়েন্টি মাচে ৫১ বলে ৪৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন।
মনে হচ্ছিল এবার বুঝি দেশের ক্রিকেটে একজন ওপেনারের অভাব মিটবে। তবে সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। দ্রুতই নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে আর সেভাবে প্রমাণ করতে পারেননি। ফলে মাত্র ৩ টি ওয়ানডে সেঞ্চুরিতেই থেমে আছে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার।
তবুও ২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেই বিজয়কে এখনো দেশের ক্রিকেট মনে করে। সেই পুরনো স্মৃতি হাতড়ে বেড়ায়। ঘরোয়া ক্রিকেটে বিজয়ের ব্যাটে এমন রান দেখে সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে, হারানো বিজয়ের কথা মনে পড়ে। দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের আক্ষেপও বাড়ে।