বোথামের প্রথম চিৎকার

সেটা সেই ১৯৭৪ সালের ঘটনা। তখন বেনসন অ্যান্ড হেইজেস কাপের ৫৫ ওভারের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল কাউন্টি ক্রিকেটের দু’দল – হ্যাম্পশায়ার আর সমারসেট। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে তেমন সুবিধে করতে পারল না হ্যাম্পশায়ার।

কোনো রকমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ১৮২ রান করে অল আউট হয়ে গেল পুরো হ্যাম্পশায়ার দল। এক ১৮ বছর বয়সী তরুণ তার ১১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে নিজের উপস্থিতি ভাল ভাবেই জানান দিল।

উত্তরে ব্যাট করতে নেমে সমারসেটের অবস্থাও বিশেষ ভালো নয়। ক্যারিবিয়ান দানব ভিভ রিচার্ডস সহ আট জন প্রধান ব্যাটসম্যান ১৩১ রানের মধ্যে ফিরে গেছেন। বল হাতে আগুন ঝরাচ্ছেন পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাস্ট বলার অ্যান্ডি রবার্টস। তাঁর তূণীরে দুই ধরনের বাউন্সার ছিল – প্রথমটা অন্যান্য ফাস্ট বোলারদের মতো সাধারণ গতির।

এটা দুই একটা দেওয়ার পর তিনি বের করতেন তার দ্বিতীয় বাউন্সারটি। প্রায় রকেটের তীব্রতায় এটি ধেয়ে আসত ব্যাটসম্যানদের মাথা বা বুক লক্ষ্য করে। আগের অপেক্ষাকৃত ধীর গতির বাউন্সার খেলার পর এটির জন্যে একেবারেই প্রস্তুত থাকতেন না ব্যাটসম্যানেরা। মাত্র এক মাস আগেই এরকমই একটি বলে খোদ কলিন কাউড্রেকে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন রবার্টস।

এবার সে রকমই এক বাউন্সার ধেয়ে এল ১৮ বছরের ইয়ান বোথামের দিকে। হুক করতে গিয়ে বল গ্লাভসে লেগে চোয়ালে লাগল। মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন রক্তাক্ত বথাম। সঙ্গে সঙ্গেই দুটো দাঁত খসে পড়ল মুখ থেকে। আরও দুটো দাঁত তুলে ফেলতে বাধ্য হন ডাক্তার পরের দিন। দর্শকেরা ধরে নিল ম্যাচ এখানেই শেষ। আর স্যার ইয়ান বোথামের ক্যারিয়রও।

কিন্তু বোথাম হাল ছাড়লেন না, উঠে দাঁড়ালেন। ৯ নম্বরে ব্যাট করতে পাঠানোর জন্যে এমনিতেই রেগে ছিলেন তিনি। এবার তার রাগ আছড়ে পড়ল রবার্টস সহ হ্যাম্পশায়ারের বোলারদের ওপর। মূলত তাঁর অপরাজিত ৪৫ রানের ওপর ভর করেই এক উইকেটে ম্যাচ জিতল সমারসেট।

আঘাতের ফলে বাকি সময়টা ঘোরের মধ্যে ছিলেন বোথাম, আর তারই ফলে এই ইনিংসের বিশেষ কিছুই মনে নেই তাঁর। এমনকি এটাও নয় যে সেই ম্যাচে তিনি ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন। নিজের আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন, ‘আমি ইনিংসটা নিয়ে খুব গর্বিত, তবে তার তেমন কিছুই আমার মনে নেই।’

তিনি ভুলে গেলে কি হবে, বাকিদের ঠিকই মনে আছে। ক্রিকেট বিশ্ব এই ম্যাচকে আর এই নতুন নক্ষত্রের ইনিংসকে মনে রেখেছে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link