ইতি, স্বর্ণালী সময়

তিনি তা পেরেছেন। তিনি নামকরা খেলোয়াড়দের তাঁর ক্লাবে যেমন ভিড়িয়েছেন ঠিক তেমনি তিনি কাজ করে গেছেন চেলসির অ্যাকাডেমির উন্নয়নেও। সেখান থেকেও যেন খেলোয়াড়দের জোগান পেতে পারে ক্লাব সে ব্যবস্থাটাও করে গেছেন তিনি। হ্যাঁ, গিয়েছেন। ক্লাবটির ইতিহাসে এখন থেকে অতীত হিসেবেই বিবেচিত হবে রোমান আব্রাহামোভিচ। কেননা রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে তাঁকে ছাড়তে হচ্ছে ক্লাবের মালিকানা।

একটা সুন্দর সময়ের অবসান অবশেষে ঘটতে চলেছে। সুখ স্মৃতির একটা বিশাল জায়গা করে নিতে চলেছে সে সময়। কতই না মধুর ছিল! প্রায় দুই দশকে ২১ খানা শিরোপা জেতার স্মৃতি তো আর চাইলেই ভুলে যাওয়া যায় না। আর সে শিরোপা জয়ের পিছনের মানুষটিকেও নিশ্চয়ই ভুলে যাওয়ার উপায় নেই। রোমান আব্রাহামোভিচ কি করেননি চেলসির জন্যে?

তাঁর ফিরিস্তি দেওয়াটা একটু কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে। নিজের সামর্থ্যের সবটুকু করেছেন তিনি চেলসিকে ক্লাব ফুটবলের অন্যতম পরাশক্তিতে পরিণত করতে। ২০০৩ সালের দিকে সবাইকে মোটামুটি অবাক করে দিয়েই ক্লাবটির মালিকানা নিজের করে নিয়েছিলেন আব্রাহোমভিচ। তরুণ একজন একটা ক্লাবের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে নিচ্ছে এ নিয়ে তো পুরো ইংল্যান্ডের ফুটবল পাড়ায় পড়ে যায় সোরগোল।

ক্লাবের দায়িত্ব নেওয়ার পরই তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি ফুটবলকে ভালবাসেন। আর সে ভালবাসা থেকেই তিনি ফুটবলের জন্যে কাজ করে যেতে চান। আর তিনি চেলসিকে আরেকটি ব্যবসা ক্ষেত্র হিসেবে দেখছেন না। তিনি যেন স্রোতের বিপরীতেই হাঁটতে পছন্দ করতেন। হেঁটেছেনও তিনি। নিজের পকেটের টাকা ঢেলে দিয়েছেন তিনি চেলসির সার্বিক উন্নয়নে।

তাঁর সময়কালেই ক্রমাগত উন্নতি হতে থাকে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজের ক্লাবটির। নিয়ম করে প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষ ছয়ে থাকতে শুরু করে। চেলসির শুরুটা আব্রাহামোভিচের হাতে না হলেও, নতুন পরাশক্তি চেলসির স্রষ্টা তিনিই। এ বিষয়ে দ্বিধা করবার যেন উপায়ই নেই। তাঁর সময়েই চেলসি পেয়েছে উন্নতমানের অনুশীলনের সকল সুযোগ-সুবিধা। তিনিই ক্লাবটিকে বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে চেয়েছেন।

তিনি তা পেরেছেন। তিনি নামকরা খেলোয়াড়দের তাঁর ক্লাবে যেমন ভিড়িয়েছেন ঠিক তেমনি তিনি কাজ করে গেছেন চেলসির অ্যাকাডেমির উন্নয়নেও। সেখান থেকেও যেন খেলোয়াড়দের জোগান পেতে পারে ক্লাব সে ব্যবস্থাটাও করে গেছেন তিনি। হ্যাঁ, গিয়েছেন। ক্লাবটির ইতিহাসে এখন থেকে অতীত হিসেবেই বিবেচিত হবে রোমান আব্রাহামোভিচ। কেননা রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে তাঁকে ছাড়তে হচ্ছে ক্লাবের মালিকানা।

রোমান আব্রাহোমিভচ বেঁচে দিচ্ছেন তিলতিল করে আজকের বানানো এই চেলসি ক্লাবে স্বত্তাধিকার। তাঁর মত একনিষ্ঠ একজন ফুটবল সমর্থককে নিশ্চয়ই খুব করে স্মরণ করবে চেলসি। এছাড়া তো আর উপায় নেই। ক্লাব ছেড়ে যাওয়ার আগেও যিনি ক্লাবের কথা চিন্তা করছেন তাঁকে নিশ্চয়ই মন থেকে অতি সহজেই ঝেড়ে ফেলে দেওয়া যায় না।

ইতোমধ্যে বিক্রির সব বন্দোবস্ত হয়ে গেছে। নির্ধারণ করা হয়ে গেছে অর্থের লেনদেনে পরিমাণ। এখন শুধু কাগজে-কলমে লেখালেখির কাজটুকু শেষে দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পালা। সেটাও হয়ে যাবে মে মাসের শেষের দিকে। ৪.২৫ বিলিয়ন পাউন্ডে মালিকানা হস্তান্তর হচ্ছে চেলসির। নতুন মালিকা পর্ষদে থাকছেন টড বোহেলির নেতৃত্বে আরও তিন অংশীদার। বাকিরা হল ক্লিয়ারলেক ক্যাপিটাল, মার্ক ওয়ালটার ও হ্যান্সজোর্গ উইস। এরাই হতে চলেছেন চেলসির নতুন মালিক। 

চেলসির শেয়ার কিনতে তাঁদেরকে প্রথম দফায় খরচ করতে হবে ২.৫ বিলিয়ন পাউন্ড। বাকি থাকা ১.৭৫ বিলিয়ন পাউন্ড যেন তাঁরা খরচ করেন ক্লাবের সার্বিক উন্নয়নে এমন একটা শর্তও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং ক্লাবটার উন্নয়নের পথটায় কোন বাঁধাই আসবে না সেটা প্রায় সুনিশ্চিত হয়েই ক্লাবের শেয়ার বিক্রির কাজটা সেরে ফেলা হয়েছে।

তবে চেলসিকে সাধারণ মানের একটি দল থেকে চ্যাম্পিয়ন দলে পরিণত করার কারিগরকে ছাড়া ক্লাবটা যে পথভ্রষ্ট হবে না সেটা নিয়ে খানিক সংশয় হতেই পারে সমর্থকদের মত। ইউরোপের বাকি ক্লাবগুলোর মত আরও একটি স্রেফ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে না চেলসি সে নিশ্চয়তা তো নেই। এখন সবকিছুর জবাবটা দেবে সময়।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...