ব্যক্তিগত জীবনে টানাপোড়েন আর ফিটনেসজনিত সমস্যায় ক্রিকেটটাই ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। জাতীয় দলের পাশাপাশি বাদ পড়েছিলেন কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে। তবে সবকিছু পেছনে ফেলে এবারের আইপিএলে মোহাম্মদ শামি ফিরে এসেছেন, ফিরেছেন আপন মহিমায়।
২০১৩ সালে ভারতীয় ক্রিকেট পাড়ায় আলোড়ন ফেলেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবির্ভাব শামির। তাঁর মতো দুরন্ত গতির পাশাপাশি নিয়ন্ত্রিত লাইন লেংথের পেসার খুব বেশি দেখেনি ভারত জাতীয় দল।
কিন্তু, টানা ইনজুরি আর ফিটনেসজনিত সমস্যায় নিজের প্রতিভার পূর্ণ পরিস্ফুটনের আগেই জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েন এই তারকা। পাশাপাশি স্ত্রীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের ফলে ভুগছিলেন মানসিক অবসাদে।
সবাই ভেবেই নিয়েছিলেন শামির পক্ষে আর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফেরা সম্ভব নয়। তবে শামি হাল ছাড়েননি, ব্যাঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমিতে একা একা ফেরার লড়াইটা চালিয়ে গিয়েছেন।
নিজের বোলিংয়ে পরিবর্তন এনেছেন, চিরকালীন সমস্যা ফিটনেসে উন্নতি করেছেন। বোলিংয়ে নতুন সব অস্ত্র যোগ করে ক্রমেই নিজেকে পরিণত করেছেন বিশ্বসেরা এক বোলারে।
ওয়ানডে কিংবা টেস্টে বর্তমানে ভারতের অন্যতম ভরসার নাম শামি। জাসপ্রিত বুমরাহর ইনজুরির পর থেকে জাতীয় দলের পেস বোলিং লাইন আপের নেতৃত্বভার তাঁর কাঁধেই। বছরের শুরুতেই ঘরের মাঠে স্পিন সহায়ক উইকেটেও শামিকে সামলাতে হিমশিম খেয়েছেন অজি ব্যাটাররা।
ভারতকে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের ফাইনালে তুলতে বল হাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে। মাঝে তাই ফিক্সিংয়ে জড়িতে থাকার অভিযোগ উঠলেও সে দাবি পাত্তা পায়নি।
তবে টি টোয়েন্টিতে শামিকে নিয়ে সমালোচনা ছিল ভীষণ। সমালোচকরা দাবি করছিলেন ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে ততটা কার্যকরী নন এই পেসার। আইপিএল কিংবা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শামির রেকর্ডও যেন তাঁর নামের পাশে খানিকটা বেমানান।
এবারের আইপিএলে তাই যেন নিজেকে প্রমাণের মিশনে নেমেছেন এই পেসার। গত মৌসুমেও গুজরাট টাইটান্সের হয়ে মন্দ করেননি, দলকে চ্যাম্পিয়ন করাতে ভূমিকা রেখেছেন সামনে থেকে।
তবুও, নামটা শামি বলেই কিনা পারফরম্যান্স মন ভরাতে পারেনি। এবারের মৌসুমে তাই যেন সমস্ত আক্ষেপ সুদে-আসলে মিটিয়ে দিচ্ছেন এই তারকা।
কখনো নতুন বলে সুইংয়ের পরাস্ত করছেন ব্যাটসম্যানদের, আবার ডেথ ওভারে ইয়র্কারে উড়িয়ে ফেলছেন স্ট্যাম্প। সবমিলিয়ে শামিকে থামানোর যেন কেউ নেই। প্রতি ম্যাচেই নিজেকে ছাড়িয়ে যাবার মিশনে নেমেছেন এই তারকা।
দিল্লী ক্যাপিটালসের বিপক্ষে ম্যাচে দেখা পেয়েছেন আইপিএলে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগারের। ইনিংসের প্রথম বলেই ফিল সল্টের উইকেট উপড়ে ফেলে ম্যাচ শুরু করেছিলেন। এরপর ছন্দটা ধরে রেখেছেন গোটা ম্যাচজুড়েই, পাওয়ার প্লেতেই একপ্রকার ধবসিয়ে দেন দিল্লীর ব্যাটিং অর্ডার।
তাঁর বোলিংয়ের সামনে মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারেননি কোনো ব্যাটসম্যান। চার ওভারের মাঝে ১৯ বলেই কোনো রানই নিতে দেননি প্রতিপক্ষকে। শেষপর্যন্ত চার ওভারে মাত্র ১১ রান দিয়ে শিকার করেছেন চার উইকেট।
ক্রিকেট ছাড়ার দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে এসেছেন রাজকীয় ভঙ্গিমায়। সামনেই অপেক্ষা করছে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের ফাইনাল। শামি তাই ফর্মটা ধরে রাখতে পারলে ব্যাটসম্যানদের জন্য দুঃস্বপ্নই অপেক্ষা করছে সামনের দিনগুলোতে।