ঢাল নেই, তলোয়ার নেই, মুস্তাফিজ সর্দার

‘আমাদের গিয়েছে যে দিন, একেবারেই কি গিয়েছে?’ এই প্রশ্নটা হয়ত এই বাংলার ক্রিকেট ভক্তদের মনের কোণে বারে বারে উঁকি দেয়। মুস্তাফিজুর রহমান তো ছিল সবার চোখের মণি। তিনি তো ছিলেন একমাত্র কাণ্ডারি। তাঁর হাত ধরেই তো স্বপ্ন দেখেছিল পেস বিপ্লবের। বাংলাদেশের ভঙ্গুর একটা পেস আক্রমণের সেনানী তো ছিলেন তিনি। তাঁরই তো দেওয়ার কথা ছিল নেতৃত্ব।

‘আমাদের গিয়েছে যে দিন, একেবারেই কি গিয়েছে?’ এই প্রশ্নটা হয়ত এই বাংলার ক্রিকেট ভক্তদের মনের কোণে বারে বারে উঁকি দেয়। মুস্তাফিজুর রহমান তো ছিল সবার চোখের মণি। তিনি তো ছিলেন একমাত্র কাণ্ডারি। তাঁর হাত ধরেই তো স্বপ্ন দেখেছিল পেস বিপ্লবের। বাংলাদেশের ভঙ্গুর একটা পেস আক্রমণের সেনানী তো ছিলেন তিনি। তাঁরই তো দেওয়ার কথা ছিল নেতৃত্ব।

তবে না, তিনি আর নেই সে তিনি। মুস্তাফিজ বদলে গেছেন এখন। সমস্যাটা হচ্ছে, তাঁর পরিবর্তনটা কোন অংশেই ইতিবাচকতার বিন্দুমাত্র ইঙ্গিত দেয় না। তিনি বরং বারংবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন- হারিয়ে যাওয়ার মিছিলে আমি হচ্ছি শামিল। সেখান থেকে নিজেকে ফিরিয়ে আনার কোন প্রকার ইচ্ছেই যেন নেই তাঁর। কত আশা নিয়েই তো তাঁকে নিয়ে আরব আমিরাতে হাজির হয়েছিল টিম টাইগার্স।

আরব আমিরাতের স্লো উইকেটে সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর বোলার তো হবার কথা ছিল তাঁরই। তিনি তো একা হাতেই কাবু করে ফেলার কথা বাঘা-বাঘা সব ব্যাটারদের। তিনি সে কাজটা তো আগেও করে এসেছেন। সে কাজটা কি করে করতে হয়ে সেটাও তাঁর নিশ্চয়ই ভালই জানা। অথচ, আশার আলো নিজ হাতেই কেড়ে নিলেন মুস্তাফিজ। এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারের দায় কোন অংশেই এড়াতে পারেন না ফিজ।

দলের বাকি বোলাররা আফগানদের চাপে রেখেছিলেন। আফগানদের ওভারপ্রতি তখন প্রয়োজন দশের বেশি। এমন পরিস্থিতিতে ডেথ ওভারে মুস্তাফিজের চাইতে আস্থা ভাজন আর তো ছিল না কেউ। তবে আস্থার প্রতিদান তিনি দিলেন কই! যেখানে রান আটকে দলকে জয়ের দিকে নিয়ে যাওয়াটাই ছিল মুস্তাফিজের কাজ, সেখানে তিনি ছুটলেন উইকেটের পেছনে। খাটো লেন্থের বল করলেন বেশ কিছু আর তাতে যা হবার তাই হল।

এক ওভারে তিন ছক্কা, ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। এমন বুদ্ধিহীন বোলিংয়ের মানেটা খুব সম্ভবত মুস্তাফিজ নিজেও জানেন না। কিংবা জানেন, জেনেও না জানার ভান ধরেন। কেননা এই ডেথ ওভারে মুস্তাফিজের করুণ দশা, সেটা তো আর নতুন না। অন্তত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের শেষ চার ওভারের মধ্যে তাঁর বোলিংয়ের অবস্থা একেবারে যাচ্ছেতাই।

শেষ ছয় ম্যাচে ১২টি ওভার করেছেন তিনি ১৬-২০ ওভারের মধ্যে। এই সময়ে তিনি রান দিয়েছেন ১০.৯১ ইকোনমি রেটে। মোট ১৩১ রান খরচ করেছেন তিনি। উইকেট পেয়েছেন কেবল দুইটি। এর থেকেও চিন্তার বিষয় এ বছর নয়টি টি-টোয়েন্টিতে তিনি উইকেট পেয়েছেন মাত্র পাঁচটি। অথচ এই নিয়ে তাঁর কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। তিনি নিজের মত করে সময় কাটান, অনুশীলনের প্রয়োজনই মনে করেন না।

এশিয়া কাপের আগে দলের প্রতিটা খেলোয়াড় যখন মিরপুর হোম অব ক্রিকেটে ঘাম ঝড়িয়েছে তখনও তিনি ছিলেন না দৃশ্যপটে। একসময় তিনি ছিলেন ক্ষুরধার। প্রতিপক্ষে ব্যাটারদের ত্রাস। তিনি সে সময় একাই বাংলাদেশের ম্যাচ জয়ের কারিগর ছিলেন। তাই বলে কি এখনও তাঁকে আগলে রাখতে হবে? সেটার খুব বেশি যৌক্তিকতাও তো নেই।

এই যে মুস্তাফিজকে আগলে রাখা হচ্ছে, এই যে মুস্তাফিজ ‘অটোচয়েজ’ খেলোয়াড় হিসেবে একাদশে খেলে ফেলছেন বাজে পারফরমেন্সের পরও। এসব কিছুই তো তাঁকে আরও বেশি আলসেমির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তিনি তো অকপটে স্বীকারই করেছেন, যে তিনি ভাল মানুষ হিসেবে ক্রিকেট পাড়া ছাড়তে চান। তবে এই যে নিজের কাজটাকে তিনি সম্মান করছেন না, তিনি হেয়ালিপনা করে কাটাচ্ছেন সময়, তাতে কি তিনি সেই ভাল মানুষ হওয়ার সম্মানটুকু দিন শেষে পাবেন?

মুস্তাফিজ হয়ত আর কখনোই নিজের সেরা সময়ে ফিরতে পারবেন না। তবে টাইগার সমর্থকদের কষ্টের জায়গাটা বোধহয় তাঁর চেষ্টায় গাফিলতি। মুস্তাফিজ কি এসব বোঝেন? হয়ত বোঝেন না বা বুঝতেও চান না।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...