ম্যাচ জিতলে সাধারণত মাঠে খেলা এগারোজন প্রচারের আলোয় উদ্ভাসিত হলেও পর্দার আড়ালে থেকে যান কোচেরা। ম্যাচ জিততে ক্রিকেটারদের পাশাপাশি কোচের ভূমিকাও কম নয়। ম্যাচের স্ট্র্যাটেজি এবং জয়ের মূল পরিকল্পনার সিংহভাগ করতে হয় কোচকেই।
আবার দল ব্যর্থ হলে প্রথম ঝড়ঝাপটা সামলাতে হয় দলের কোচকেই। একারণেই দলের জন্য সঠিক কোচ বেছে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আসুন দেখে নেয়া যাক বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বেতনপ্রাপ্ত কোচদের।
- লালচাঁদ রাজপুত, জিম্বাবুয়ে
২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের প্রধান কোচ হিসেবে হিথ স্ট্রিকের স্থলাভিষিক্ত হন লালচাঁদ রাজপুত। জিম্বাবুয়ের কোচ হিসেবে ভারতীয় ঘরোয়া ক্রিকেটে বহুদিন কোচিং করিয়েছেন তিনি। ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় ভারতীয় দলের ম্যানেজার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। যদিও রাজপুত এখনো জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে আমূল পরিবর্তন আনতে পারেননি, তবে পরিবর্তনের ধারাটা শুরু করতে পেরেছেন।
নব্বইয়ের দশকে ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে হারালেও গত দুই দশক ধরে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট। এমনকি ২০১৯ বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে পারেনি দলটি। মাঝেমধ্যে ভালো পারফর্ম করতে পারলেও এখনো ধারাবাহিক হতে পারেনি। রাজপুত জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ড হতে বাৎসরিক বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪২ লক্ষ টাকা পান।
- ফিল সিমন্স, ওয়েস্ট ইন্ডিজ
২০১৯ সালে ফ্লয়েড রেইফারের জায়গায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের কোচ হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে নিযুক্ত হন ফিল সিমন্স। এখনো পর্যন্ত তার অধীনে যথেষ্ট ভালো খেলছে ক্যারিবীয়রা। বর্তমানে ক্যারিবীয়রা র্যাংকিংয়ের নিচের দিকে থাকলেও তারা ধীরে ধীরে ভালো করছে। দলে রয়েছেন কিয়েরন পোলার্ড, শিমরন হেটমায়ার, নিকোলাস পুরান, শেল্ডন কটরেল, ফ্যাবিয়ান অ্যালেনদের মতো ক্রিকেটার যারা কিনা নিজেরদের দিনে একাই ম্যাচ জিতিয়ে দিতে সক্ষম।
ফিল সিমন্সের অধীনে ক্যারিবীয়রা গতবছর ইংল্যান্ডকে হারায় এবং এ বছরের শুরুতেই হারায় বাংলাদেশ এবং শ্রীলংকাকে। ত্রিনিদাদের বাসিন্দা এই সাবেক ক্রিকেটার ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড থেকে বাৎসরিক ৮০ লক্ষ টাকা বেতন পেয়ে থাকেন। আপাতত এই ক্যারিবীয়ানের মূল লক্ষ্য বছর শেষে হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতা।
- মার্ক বাউচার, দক্ষিণ আফ্রিকা
২০১৯ সালের শেষের দিকে ওটিস গিবসনের জায়গায় প্রোটিয়াদের কোচ হিসেবে নিযুক্ত হন সাবেক উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মার্ক বাউচার। এখনো পর্যন্ত বাউচারের অধীনে প্রোটিয়ারা চোখ ধাঁধানো ক্রিকেট খেলতে পারেনি। কোচ হিসেবে নিজের প্রথম সিরিজেই ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের কাছে ৩-১ ব্যবধানে হারে তাঁর দল।
এ বছরের শুরুতেই পাকিস্তানের কাছে সিরিজ হারে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৪৪ বছর বয়সী এই কোচ দক্ষিণ আফ্রিকার সোনালি সময় ফিরিয়ে আনতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ক্রিকেট বোর্ড থেকে বাৎসরিক ১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা বেতন পান তিনি।
- রাসেল ডোমিঙ্গো, বাংলাদেশ
২০১৯ বিশ্বকাপ ব্যর্থতার জের ধরে স্টিভ রোডসকে বরখাস্ত করা হলে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের নতুন কোচ হিসেবে নিযুক্ত হন রাসেল ডোমিঙ্গো। এই সাবেক প্রোটিয়া কোচের ম্যানেজমেন্ট দক্ষতা এবং খেলোয়াড়দের উজ্জীবিত করার ক্ষমতা বিশ্বজুড়ে প্রশংসনীয়।
সাফল্য পেলেও তার অধীনে এখনো ধারাবাহিকভাবে ভালো ক্রিকেট খেলতে পারছে নাহ বাংলাদেশ। ৪৬ বছর বয়সী এই কোচের অধীনে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং শ্রীলংকার বিপক্ষে জিতলেও নিউজিল্যান্ডে গিয়ে সব ফরম্যাটেই বিধ্বস্ত হয় বাংলাদেশ। বিসিবি থেকে বাৎসরিক প্রায় দেড় কোটি টাকা বেতন পান তিনি।
- গ্যারি স্টিড, নিউজিল্যান্ড
গত কয়েকবছরে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দল ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলে আসছে, নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠা করেছে বিশ্বের অন্যতম সেরা দল হিসেবে। গ্যারি স্টিডের অধীনেই ২০১৯ বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলে কিউইরা। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের ফাইনালেও উঠে গেছে তার অধীনেই। কিউইদের সামনে সুবর্ণ সুযোগ ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের জানান দেবার।
কেন উইলিয়ামসন, রস টেলর, ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদিদের পাশাপাশি বিজে ওয়াটলিং, টম ল্যাথাম, নিল ওয়াগনাররা নিয়মিত পারফর্ম করায় কোচ হিসেবে স্টিডের কাজ কমেছে অনেকটাই। ক্রিকেট বোর্ড থেকে বাৎসরিক দুই কোটি টাকা বেতন পান তিনি।
- মিসবাহ উল হক, পাকিস্তান
২০১৯ বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর মিকি আর্থারকে বরখাস্ত করা হলে পাকিস্তানের প্রধান কোচ হিসেবে স্থলাভিষিক্ত হন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক এবং ব্যাটসম্যান মিসবাহ উল হক। শুরুতে প্রধান কোচের পাশাপাশি প্রধান নির্বাচকের দায়িত্বে থাকলেও পরবর্তীতে পদত্যাগ করেন নির্বাচকের পদ থেকে।
সম্প্রতি তাঁর অধীনে পাকিস্তান বেশ ভালো পারফরম্যান্স করছে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে দেশে এবং দেশের বাইরে। এছাড়াও বাংলাদেশ এবং শ্রীলংকার বিপক্ষে জিতেছে হেসেখেলেই। সাবেক এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান পিসিবির কাছে থেকে বেতন পান প্রায় ২কোটি ২০ লাখ টাকা।
- মিকি আর্থার, শ্রীলঙ্কা
দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেয়া মিকি আর্থার কোচিং ক্যারিয়ারে দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং পাকিস্তানকে কোচিং করানোর পর ২০১৯ এর শেষদিকে দায়িত্ব নেন শ্রীলংকা দলের। তিনি দায়িত্ব নেবার বেশ আগে থেকেই শ্রীলংকা দল ট্রাঞ্জিশন পিরিয়ডের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি প্রথমবারের মতো সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশের সাথে। লংকান ক্রিকেট বোর্ডের কাছে থেকে বাৎসরিক প্রায় চার কোটি টাকা বেতন পান তিনি।
- ক্রিস সিলভারউড, ইংল্যান্ড
২০১৯ অ্যাশেজ সিরিজের পর ট্রেভর বেইলিস ইংল্যান্ডের কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়ালে নতুন কোচ হিসেবে নিযুক্ত হন ক্রিস সিলভারউড। সাবেক এই পেসারের অধীনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জিতলেও ইংল্যান্ড হেরে গেছে অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতের কাছে। তাই আগামী অ্যাশেজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ সিলভারউডের চাকরি টিকিয়ে রাখতে। ইসিবির কাছে থেকে বছরে প্রায় ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা বেতন পান তিনি।
- জাস্টিন ল্যাঙ্গার, অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ওপেনার জাস্টিন ল্যাঙ্গার ছিলেন অজিদের সোনালি সময়ের সেনানী। ম্যাথু হেইডেনকে নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন দারুণ এক জুটি। ২০১৮ সালে স্যান্ডপেপার কেলেংকারিতে টালমাটাল এক অজি দলের দায়িত্ব পান ল্যাঙ্গার।
তবে দলকে হারানো আত্নবিশ্বাস ফিরে পেতে দারুণ ভূমিকা রাখেন তিনি। তার অধীনেই ২০১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলে অজিরা। দুই যুগ পর ধরে রাখতে সক্ষম হয় অ্যাশেজের ট্রফি। যদিও সম্প্রতি ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ হার সম্মুখীন করেছে নানা প্রশ্নের। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া কাছ থেকে বছরে প্রায় ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা বেতন পান তিনি।
- রবি শাস্ত্রী, ভারত
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ডের কোচ রবি শাস্ত্রী বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া কোচ। ২০১৬ সালে অনিল কুম্বলের স্থলে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পান তিনি। আইসিসি টুর্নামেন্ট জিততে না পারলেও শাস্ত্রী ভারতকে টেস্ট ক্রিকেটে শক্তিশালী দলে পরিণত করেছেন।
বিশেষ করে দেশের বাইরে খেলার জন্য শক্তিশালী এক পেস বোলিং লাইনআপ তৈরি করেছেন। সম্প্রতি নিয়মিত অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে ছাড়াই সিরিজ জিতেছেন অস্ট্রেলিয়ার মাঠে গিয়ে। বিসিসিআই থেকে বাৎসরিক প্রায় ১২ কোটি টাকা বেতন পান তিনি।