ট্যাক্সি চালক-পাদ্রী-চোরাকারবারি-ক্রিকেটার

যেকোনো ক্রীড়াবিদের জন্যই অবসরের সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সহজ নয়। কথাটা ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রেও সত্য। কেউ কেউ মাঠের ক্রিকেট ছাড়লেও থেকে যান ক্রিকেটের সাথেই। কোচ হন, ধারাভাষ্যকার হন। ইমরান খান, অর্জুনা রানাতুঙ্গা বা মাশরাফি বিন মুর্তজাদের মত কেউ রাজনীতি করেন। কেউ বা যোগিন্দর শর্মাদের জন্য পুলিশের মত চ্যালেঞ্জিং পেশাতেও আসেন। গানবাজনা করে কাটিয়ে দেওয়া কিংবা বিনোদনের জগতেও দেখা গিয়েছে অনেককে।

যদিও, সবার গল্পটা এমন সহজ ও সুন্দর নয়। তাই তো কাউকে কাউকে কঠিন পরিশ্রমের পেশাও বেছে নিতে হয়। পেটের দায় বলেও তো একটা ব্যাপার আছে। তেমনই কয়েকজনকে নিয়ে এবারের আয়োজন।

  • আরশাদ খান (পাকিস্তান) – ট্যাক্সি চালক

পাকিস্তানের হয়ে পেশোয়ারের এই অফ স্পিনার নয় টেস্টে ৩২ টি উইকেট নিয়েছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে তিনি দলে ডাক পান। এর পরের বছর তিনি ঢাকার মাটিতে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচটাও খেলেন। সেবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল পাকিস্তানই। ২০০১ সালে তিনি দল থেকে বাদ পড়েন। ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফরম্যান্সের সুবাদে আরশাদকে ২০০৫ সালে ওয়ানডে দলে ডাকা হয়। যদিও এবারও তিনি বলার মত কিছু করতে পারেননি।

কখনোই দলে তাঁর শক্ত অবস্থান ছিল না। আগে ভাগেই অবসর নিয়ে তিনি চলে যান অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানে সিডনিতে গেল ২০১৫ সালে তাঁকে ট্যাক্সি চালাতে দেখা যায়। ৫৬ টি ওয়ানডে উইকেটের মালিক আরশাদ অবশ্য এর আগেই নিষিদ্ধ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগে (আইসিএল) খেলেন লাহোর বাদশাহস-এর হয়ে।

  • ডেভিড শেফার্ড (ইংল্যান্ড) – চার্চের পাদ্রী

না, ধরতে পারেননি। তিনি খ্যাতনামা আম্পায়ার ডেভিড শেফার্ড নন। তিনি হলেন ইংল্যান্ডের হয়ে ২২ টি টেস্ট খেলা সাসেক্সের ক্রিকেটার ডেভিড শেফার্ড। প্রথম শ্রেণির সমৃদ্ধ ক্যারিয়ারে ২৩০ টি ম্যাচে ৪৫ টি সেঞ্চুরি করেন তিনি। বোঝাই যাচ্ছে, তিনি কাউন্টি ক্রিকেটের কিংবদন্তি ছিলেন।

খেলোয়াড়ী জীবন শেষে তিনি ধর্মভীরু জীবন শুরু করেন। চার্চের পাদ্রী হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে তিনি লিভারপুলের বিশপ হিসেবে নির্বাচিত হন। ক্যান্সারের সাথে দীর্ঘ লড়াই শেষে ২০০৫ সালে তিনি মারা যান। তাঁর নামে এখন ইংল্যান্ডে একটা চার্চও আছে।

  • ক্রিস ওল্ড (ইংল্যান্ড) – ফিশ অ্যান্ড চিপস রেস্টুরেন্টের মালিক

৭০-৮০’র দশকে ইংল্যান্ডের বোলিং আক্রমণের পরিচিত ‍মুখ ছিলেন ডান হাতি এই মিডিয়াম পেসার। ১৯৭২ সালে ভারতের বিপক্ষে ডিসেম্বরে তার অভিষেক হয়। প্রথম এসেই সুনিল গাভাস্কারের উইকে নিয়ে হৈচৈ ফেলে দেন। প্রথম ম্যাচে ছয় উইকেটের সাথে ব্যাটিংয়ে দুই ইনিংসেই হাফ সেঞ্চুরি করেন। এমন অভিষেকের পরও ম্যাচটায় ২৮ রানে হারে ইংল্যান্ড।

ওল্ড আরেকটা কারণে বিখ্যাত। ১৯৮১ সালের অ্যাশেজে তিনি ইয়ান বোথামের সাথে নবম উইকেট জুটিতে ৬৭ রান যোগ করেন। এছাড়া সেবার অ্যালান বোর্ডানের ‍গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটিও তিনি নেন। খেলোয়াড়ী জীবন শেষ করে তিনি স্ত্রী লেইটার সাথে কর্নওয়ালের প্রা স্যান্ডসে একটা ফিশ অ্যান্ড চিপস রেস্টুরেন্ট চালান।

ক্রিস লুইস (ইংল্যান্ড) – চোরাকারবারি

অলরাউন্ডার ক্রিস লুইসকে তাঁর ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে বলা হত ‘নেক্সট ইয়ান বোথাম’। কিন্তু, দারুণ শুরুটা তিনি ধরে রাখতে পারেননি। ক্যারিয়ারটা অবশ্য মন্দ ছিল না। ৩২ টি টেস্ট খেলে তিনবার পাঁচ উইকেট সহ নিয়েছিলেন ৯৩ টি উইকেট। ১৯৯৩ সালে নিজের জন্মদিনে ভারতের চেন্নাইয়ে করেছিলেন সেঞ্চুরি। এমন পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারলে নি:সন্দেহে বিশ্ব ক্রিকেটেরই বড় তারকা হতে পারতেন লুইস। সেটা হয়নি। ১৯৯৬ সালের আগস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ টেস্ট খেলে ফেলেন তিনি।

তবে, মাঠের পারফরম্যান্সের চেয়েও খেলোয়াড়ী জীবন শেষ করার পরেই বরং বেশি আলোচনার ঝড় তোলেন লুইস। কোকেইন চোরাকারবারের দায়ে ২০০৯ সালে তাঁর ১৩ বছরের জেল হয়। ক্রিকেট কিট ব্যাগে ফলের জুস রাখার কৌটায় যে কোকেইন তিনি ব্রিটেনে নিয়ে এসেছিলেন তাঁর মূল্যমান ছিল এক লাখ ৪০ হাজার পাউন্ড।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link