সবাইকে অবাক করে দিয়ে সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসেরের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন পর্তুগিজ তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। ইউরোপ এবং আমেরিকার বিভিন্ন ক্লাব তাঁকে দলে ভেড়াতে আগ্রহী থাকলেও রোনালদো বেছে নিয়েছেন নাসরকেই। কিন্তু দলে যোগ দেবার পরপরই সৌদি আইনের বেড়াজালে খানিকটা অস্বস্তিতে সিআর সেভেন এবং তাঁর পরিবার।
বিগত কয়েক মাস রোনালদোর জন্য ছিল রোলার কোস্টার রাইড। মৌসুমের শুরুর দিকে রোনালদোর সদ্যোজাত ছেলে মারা যান। পিয়ার্স মরগ্যানে দেয়া সাক্ষাৎকারের পরই নিশ্চিত হয়ে যায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে থাকছেন না তিনি।
নিজের সম্ভাব্য শেষ বিশ্বকাপটাও ভালো কাটেনি, তরুণ গনসালো রামোসের কাছে জায়গা হারিয়েছেন। দলও বাদ পড়েছে বিশ্বকাপের শেষ আট থেকেই। এরপরই ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে রোনালদো কোন ক্লাবে যান এ নিয়ে গুজব ডালপালা মেলেছে বিস্তর। ইউরোপ, আমেরিকা, ব্রাজিল এমনকি অস্ট্রেলিয়া থেকে অফার থাকলেও রোনালদো নতুন চ্যালেঞ্জের খোঁজে শেষতক এসেছেন এশিয়ার লিগেই।
ইউরোপের ক্যারিয়ার শেষের পাশাপাশি দীর্ঘদিনের সঙ্গী এজেন্ট হোর্হে মেন্ডেসের সাথেও সম্পর্কের ইতি টেনেছেন তিনি। রোনালদোর ক্যারিয়ারের একদম শুরুর দিন থেকে তাঁর এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
সৌদিতে আসার পরই সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন নিজের লক্ষ্যের কথা। রোনালদোর পাশাপাশি তাঁর পরিবার অর্থাৎ জর্জিনা রদ্রিগেজ এবং তাঁদের সন্তানেরাও সৌদিতে নতুন নিবাস গড়ছেন। তাতেই ঘটেছে বিপত্তি, সৌদি আইনে একসাথে থাকতে বাঁধার সম্মুখীন রোনালদো এবং তাঁর পরিবার।
পর্তুগিজ সুপারস্টার এবং জর্জিন এখনো বিয়ে করেননি। ইউরোপের সংস্কৃতিতে এমনটা অহরহ দেখা গেলেও মধ্যপ্রাচ্যের ব্যাপারটা এমন নয়। রক্ষণশীল সৌদি আইন অনুযায়ী অবিবাহিত দুজন নারী এবং পুরুষ একত্রে একই ছাদের তলায় থাকতে পারবেন না।
এই আইনেই মূলত ঝামেলায় পড়েছেন এই তারকা। তবে ক্লাবের সাথে চুক্তির সময়েই এই ব্যাপারে কথা বলেন রোনালদো। সে কারণেই এই সমস্যা সমাধানে ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে ক্লাবও। সৌদির দুইজন প্রখ্যাত আইনজীবি রোনালদোর ব্যাপারটা দেখভাল করছেন।
আইনজীবিরা বলেন, ‘যদিও আইনে উল্লেখ আছে বিবাহ বর্হিভূত দুজন বিপরীত লিঙ্গের মানুষ একসাথে থাকতে পারবেন না। তবে কর্তৃপক্ষ ব্যাপারটা ভাবছে যেহেতু দুজনের সম্মতিই আছে এবং কারো ক্ষতি হচ্ছে না। আইন তখনই প্রযোজ্য হওয়া উচিত যখন কোনোপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক আইনজীবি বলেন, ‘আজকের দিনে দাঁড়িয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষ বিদেশিদের ক্ষেত্রে এই আইন কার্যকর করবে না ধরেই নেয়া যায়। তবে দেশের মানুষের জন্য এই আইন বলবৎ থাকবে।’ আইন ভঙ্গ করলেও রোনালদোর তাই শাস্তি পাবার কোনো সম্ভাবনা নেই।
২০১৬ সাল থেকেই সুপার মডেল জর্জিনা রদ্রিগেজ এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো একত্রে থাকছেন। রিয়াল মাদ্রিদ থেকে জুভেন্টাস, কিংবা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সব খানেই রোনালদোর সঙ্গী হয়েছেন জর্জিনা। এই দম্পতির ছয় মাস বয়সী এক মেয়ে রয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে রোনালদোর ক্ষেত্রে এই আইনটা কার্যকর হবে না। নামটা যেহেতু ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, সুতরাং বিশ্বের যেকোনো প্রান্তেই এতটুকু সুবিধা তিনি পেতেই পারেন। এছাড়া আইনজীবিদের পাড়ায় একটা কথা তো ভীষণ প্রচলিত, নিয়ম দুই ধরনের হয় – একটি যাদের টাকা আছে তাঁদের জন্য এবং অন্যটি যাদের টাকা নেই।