একটা খুব প্রচলিত উক্তি রয়েছে অস্ট্রেলিয়া সাবেক ক্রিকেটার ও অধিনায়ক এবং অন্যতম সেরা ধারাভষ্যকার রিচি বেনোর। তিনি বলেছিল, ‘৯০% ভাগ্য আর ১০% দক্ষতার সংমিশ্রণ অধিনায়কত্ব। তবে কেউ সেই ১০% ছাড়া অধিনায়ক হওয়ার চেষ্টা কর না।’
এর অর্থ একটাই দাঁড়ায়। আপনার একজন অধিনায়ক হিসেবে ম্যাচের গতিপথ পড়ার সক্ষমতা থাকতে হবে। আপনি যতই ভাগ্যের ভরসায় কোন সিদ্ধান্ত নেন না কেন। বুঝতে হবে পরিস্থিতি, সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মাঝে মাঝে ঝুঁকি নিতে হবে। মাঝে মাঝে যেমন চলছে তেমন চলতে দিতে হবে। ঠিক কখন কোন কাজটা করতে হবে সেটা মাথায় থাকা প্রয়োজন। সে সিদ্ধান্তটা নেওয়ার সক্ষমতা, দক্ষতা থাকা প্রয়োজন একজন অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হলে।
ঠিক এই জায়গাটায় হয়ত খানিকটা পিছিয়ে রয়েছেন চেন্নাই সুপার কিংসের সদ্য সাবেক হওয়া অধিনায়ক রবীন্দ্র জাদেজা। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের এবারের আসরে প্রথমবারের মত অধিনায়কের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন জাদেজা। তবে তিনি পুরোপুরি ব্যর্থ সে বিষয়ের সন্দেহের খুব বেশি অবকাশ নেই। প্রথম আট ম্যাচের ছয়টিই হেরেছে তাঁর ছায়াতলে থাকা দল। তাছাড়া তাঁর পারফরমেন্সেও অধিনায়কের কঠিন দায়িত্বের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
এ নিয়ে খোদ মহেন্দ্র সিং ধোনি বলেন, ‘অধিনায়ক হওয়ার সাথে সাথে অনেক ধরণের চাহিদার একটা চাপ এসে পড়তে শুরু করে। কিন্তু সে চাহিদা তাঁকে (জাদেজা) প্রভাবিত করেছে সময়ের সাথে। আমি মনে করি অধিনায়কত্ব তাঁর জন্যে একটা বোঝা হয়ে গেছে এবং তা তাঁর প্রস্তুতি ও পারফরমেন্সের প্রভাব ফেলছে।’
হয়ত তেমনটাই হয়েছিল। রবীন্দ্র জাদেজাকে ধরা হয় বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারদের একজন হিসেবে। তবে এবারের আইপিএলে তাঁর কাছ থেকে বলার মত তেমন কোন পারফরমেন্সের দেখা মেলেনি এখন অবধি। তাছাড়া অধিনায়ক হিসেবেও তিনি নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন সেটা বলার সুযোগও নেই। এমনকি প্রথম দুই ম্যাচে মহেন্দ্র সিং ধোনি জাদেজাকে মাঠে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিতে সহয়তা করেছেন।
তবে কতদিন ধোনি তাঁকে আগলে রাখবেন। আর সময়ের সাথে অধিনায়কের দায়িত্ব নেওয়া তো শিখতে হতোই। ধোনি বলেন, ‘এটা একটা ধারাবাহিক পরিবর্তন। চামচ দিয়ে খাইয়ে দেওয়াটা আসলে অধিনায়কদের খুব বেশি সাহায্য করে না। মাঠে আপনাকে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয় এবং সে সিদ্ধান্তগুলোর দায়িত্বও আপনাকেই নিতে হয়।’
সে দায়িত্বটা যেন এবার আবার ধোনি নিয়ে ফেললেন। মহারাজ যেন ফিরলেন আবার তাঁর আসনে। মহারাজ ফিরেই কুপকাত করলেন প্রতিপক্ষকে। যেন তিনি এসেই একটা বার্তা দিয়ে দিতে চাইলেন, ‘অস্ত্র জমা দিয়েছি, ট্রেনিং নয়।’
রবীন্দ্র জাদেজা তাঁর অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর জায়গায় আবার অধিনায়কের দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছেন বিশ্বক্রিকেটের সবচেয়ে সফলতম অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি।
এসেই সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে জয় তুলে নিয়েছে ধোনির নেতৃত্বাধীন চেন্নাই সুপার কিংস। ঐ যে ধোনি মানেই ৯০% ভাগ্য ও ১০% দক্ষতা। তিনি ফিরেছেন অধিনায়কের দায়িত্বে অন্যদিকে রুতুরাজ গায়কড় ফিরেছেন রানে। রেকর্ড গড়া জুটি হয়েছে ওপেনিংয়ে। তবে তাতে অনায়াসে জয়ের মুখ দেখতে পারেনি চেন্নাই। ১৩ রানের একটা জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ধোনির সতীর্থরা।
তবে ধোনির তো বয়স হয়েছে। ৪০ বছর বয়সের একজন ক্রিকেটার আর কতটুকুই বা দিতে পারবেন। চেন্নাইকে অতি দ্রুতই একজন অধিনায়ক তালাশ করতে হবে। রবীন্দ্র জাদেজা যে একজন অধিনায়ক হিসেবে চেন্নাই ফ্রাঞ্চাইজির প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে না তা মোটামুটি বলে দেওয়া যায়। এখন হয়ত নতুন অধিনায়কের তালাশে নামবে চেন্নাই সুপার কিংস।
তবে সেদিক থেকে ঠিক কোন পথে হাটবে চেন্নাই সেটা আরেকটা বড় প্রশ্ন। আইপিএলে দুই ধরণের মতাদর্শ দেখা যায় ফ্রাঞ্চাইজিভেদে। কেউ হয়ত অভিজ্ঞতার দিকে ছোটেন, কেউ আবার তারুণ্যের। তবে চেন্নাই সুপার কিংস ঠিক কোন পথে হাটবে তা অনুমেয়। চেন্নাই বরাবরই অভিজ্ঞতার প্রাধান্য দিয়েছে বেশি। সে বিবেচনায় জাদেজার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল অধিনায়কত্বের দায়িত্ব। আবারও হয়ত অভিজ্ঞতার পথেই হাটবে তাঁরা।
এই মৌসুম হয়ত কাজ চালিয়ে নিয়ে যাবেন ধোনি। তবে ধোনি থাকতে আরও একজন অধিনায়ক গড়ে দেওয়ার কাজটা হয়ত করা হয়ে উঠল না। পরিকল্পনার সবটুকু তো কখনোই বাস্তবায়ন করা যায় না।