টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে পেসার কার্টিস ক্যাম্পফারের দাপুটে বোলিংয়ে বিধ্বস্ত ডাচ শিবির! অগ্নিঝরা বোলিংয়ে নেদারল্যান্ডসের ব্যাটিং শিবির ধসিয়ে দেয় আইরিশ বোলাররা। অবশ্য ক্যাম্পফারের রেকর্ড গড়া বোলিংয়েই মুখ থুবড়ে পড়ে নেদারল্যান্ডসের ব্যাটিং লাইনআপ। নিজের প্রথম বিশ্বকাপ ম্যাচেই করলেন বাজিমাৎ!
টসে হেরে বোলিংয়ে নেমে ব্যক্তিগত প্রথম ওভারে ১২ রান দেন ক্যামফার। এরপর দলীয় ১০ম ওভারে বল করতে এসেই গড়েন অনন্য রেকর্ড। শিকার করেন হ্যাট্রিকসহ চার বলে চার উইকেট! অবশ্য দুইবার অন ফিল্ড আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তের পরেও রিভিউয়ের কল্যানে এই রেকর্ড গড়েন তিনি।
ওভারের দ্বিতীয় বলে লেগ স্টাম্পের বাইরের বল মারতে গিয়ে উইকেটরক্ষকের কাছে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন কলিন অ্যাকারম্যান। অবশ্য প্রথমে আম্পায়ার আউট দেননি! রিভিউ নেওয়ার পর দেখা যায় অ্যাকারম্যানের গ্লভসে লেগেই বল উইকেটরক্ষকের পারের হাতে। এরপরের বলেই ইন স্যুইংয়ে পরাস্থ হয়ে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে আউট রায়ান টেন ডেসকাট।
বিশ্বকাপে প্রথম হ্যাটট্রিকের সুযোগ! স্ট্রাইকে স্কট এডওয়ার্ডস। চতুর্থ বলটিও করলেন একই লেংথে! একই ভাবে পরাস্থ অ্যাডওয়ার্ডসও! জোরালো আবেদন। কিন্তু আবারো আম্পায়ার সিদ্ধান্ত দিলেন নট আউট। সাথে সাথেই রিভিউ নিলেন আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবির্নি। টিভি স্ক্রিনে স্পষ্ট আউট ভেসে উঠতেই হ্যাটট্রিকের উল্লাসে মাতেন ক্যাম্পফার।
বিষয়টা এখানেই থেমে গেলেও কীর্তিটা কম ছিল না। তবে, থামেননি ক্যাম্পফার। কীর্তিটা আরো বড় করেছেন। ওভারের পঞ্চম বলেই বোল্ড রুলফ ভ্যান ডার মারউই! হ্যাটট্রিকসহ টানা চার বলে চার উইকেট!
গড়লেন অনন্য এক রেকর্ড! আয়ারল্যান্ডের ইতিহাসে প্রথম হ্যাট্রিকের কীর্তি গড়েন ক্যামফার। এমনকি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও এটা মাত্র দ্বিতীয় হ্যাটট্রিকের নজীর। ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম হ্যাটট্রিক করেন অস্ট্রেলিয়ার ব্রেট লি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে লাসিথ মালিঙ্গা ও রশিদ খানের পর তৃতীয় বোলার হিসেবে চার বলে চার উইকেট নেওয়ার রেকর্ড! বিশ্বকাপে তিনিই একমাত্র বোলার হিসেবে এই তালিকায় নাম তুলেছেন।
ওই ম্যাজিকেল রেকর্ড গড়া ওভারে অসহায় আত্মসমর্পণ করে ডাচ ব্যাটাররা। ওই ওভারে ২ রানের বিনিময়ে ক্যারিয়ার সেরা চার উইকেট শিকার করেন ক্যামফার। প্রথম ওভারে ১২ রান দিয়ে খেই হারানো ক্যামফার বাকি ৩ ওভারে ১৪ রানে নেন ৪ উইকেট।
৪ ওভারের স্পেলে মোট ২৬ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট শিকার করেন তিনি। ক্যামফারের পেস জাদুতে ৫১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় ডাচরা। পরবর্তীতে ওপেনার ম্যাক্স ওদোদের হাফ সেঞ্চুরিতে একশো’র কোটা পেরোয় দলীয় স্কোর।
চলতি বছর আগস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষিক হন এই পেসার। বিশ্বমঞ্চে আসার আগে খেলেছিলেন মাত্র ৪ টি-টোয়েন্টি। এর মাঝে ১১ ওভার বোলিং করে শিকার করেছিলেন মোটে ৩ উইকেট! তাও আবার এক ম্যাচেই নিয়েছিলেন ৩ উইকেট।
ব্যক্তিগত সেই পারফরম্যান্স ছাপিয়ে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই দেখালেন ক্যারিয়ার সেরা বোলিং! মাত্র ২২ বছর বয়সী এই পেসারের ক্যারিয়ারের এখনো অনেকটা পথ বাকি। কিন্তু বিশ্বমঞ্চে সুযোগ পেয়েই নিজের সেরাটা দিয়ে প্রমাণ করলেন সামর্থ্য। ম্যাজিকেল বোলিংয়ে নাম লেখালেন রেকর্ড বইয়ে।
ব্যাটিংয়েও অবদান রেখেছেন ক্যাম্পফারর। সাত রানে অপরাজিত এই ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকেই এসেছে আইরিশদের জয়সূচক রান। আর এরই মধ্য দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথমবারের মত নেদারল্যান্ডসকে হারালো আয়ারল্যান্ড।