অ্যামব্রোস আতঙ্ক, ওয়াহ অগ্নি

অ্যামব্রোসের সাথে অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ব্যাটার স্টিভ ওয়াহের একটা দ্বৈরথ ছিল। সচরাচর ক্রিকেট মাঠে যা হয় আর কি। দুই কিংবদন্তির মাঝে ক্রিকেটীয় লড়াই, দুই কিংবন্তির মাঝে স্নায়ুর লড়াই। এই দুইজন একে অপরের মুখোমুখি হয়েছেন বহুবার। কখনো অ্যামব্রোসের শর্ট বলে কাবু হয়েছেন ওয়াহ, আবার কখনো পুল-হুক করে ওয়াহ জবাব দিয়েছেন সকল আক্রমণের। এই দুইজনের মাঠের লড়াইটা ছিল দেখবার মত। তবে, ১৯৯৫ সালের ত্রিনিদাদ টেস্ট যেন ছাড়িয়ে গিয়েছিল সব কিছুকেই।

প্রায় সাড়ে ছয় ফুটের এক দানবীয় বোলার। গুড লেন্থ যেন তাঁর আখড়া, আর তাঁর শর্টবল গুলো যেন দাঁড়িয়ে থাকলে গলা চিড়ে বের হয়ে যাবে। এমন ভয়ানক বোলিংই করতেন কার্টনি অ্যামব্রোস। তিনি বল হাতে কারিকুরি দেখানোর চেষ্টাটা করে যেতেন আপন মনে। কোন রকম বাক্য চালাচালিতে তিনি অভ্যস্ত নন। বাইশ গজে সব কিছুর জবাব তিনি দিতেন লাল সেই গোলক হাতে।

তাঁর সাথে অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ব্যাটার স্টিভ ওয়াহের একটা দ্বৈরথ ছিল। সচারচর ক্রিকেট মাঠে যা হয় আর কি। দুই কিংবদন্তির মাঝে ক্রিকেটীয় লড়াই, দুই কিংবন্তির মাঝে স্নায়ুর লড়াই। এই দুইজন একে অপরের মুখোমুখি হয়েছেন বহুবার। কখনো অ্যামব্রোসের শর্ট বলে কাবু হয়েছেন ওয়াহ, আবার কখনো পুল-হুক করে ওয়াহ জবাব দিয়েছেন সকল আক্রমণের। এই দুইজনের মাঠের লড়াইটা ছিল দেখবার মত। তবে, ১৯৯৫ সালের ত্রিনিদাদ টেস্ট যেন ছাড়িয়ে গিয়েছিল সব কিছুকেই।

হবেই বা না কেন বলুন, তাঁরা দুইজনই তো সেরা নিজেদের জায়গায়। তবে একবার তাঁদের ক্রিকেটীয় লড়াই মোড় নিয়েছিল কঠোর বাক্যবাণ বিনিময়ে। দুইজনের মধ্যকার উত্তপ্ততা আর আটকে রাখা যায়নি। বল-ব্যাটের লড়াইয়ে বিতণ্ডা এসে হাজির হয়েছিল। তবে অ্যামব্রোস কখনোই কথা দিয়ে লড়াই করার মানুষ ছিলেন না। তাঁর বিষয়ে ওয়াহ একবার বলেছেন, ‘কার্টলি অ্যামব্রোস ছিলেন একজন অসাধারণ বোলার। তিনি আমার বেশ কঠিন প্রতিপক্ষ ছিলেন আমি তাঁকে যথেষ্ঠ সম্মান করি। সে কখনো খেলার মাঠে কিছু বলত না, যা কিনা স্লেজিং থেকেও ছিল ভয়াবহ।’

এতটাই নিশ্চুপ একজন বিধ্বংসী ফাস্ট বোলারের দেখা সচরাচর মেলে না। তাছাড়া অ্যামব্রোসের এই নিরবতা বেশ শঙ্কায় ফেলে দিত ব্যাটারদের। ওয়াহ বলেন, ‘আপনি আন্দাজ করতে পারবেন না আসলে সে কি করতে চায়। সে আমাকে কি আউট করবে নাকি আঘাত করবে সেটা বোঝার কোন উপায় ছিল না। এর থেকে কেউ যখন স্লেজিংয়ের ছলেও বলে দেয় যে সে কি করতে চাচ্ছে তাও ঢের ভাল।’

ঠিক এমন নিশ্চুপ আগ্রাসী হয়ে অ্যামব্রোস রাজ করে গিয়েছেন ক্রিকেট বিশ্ব। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ৪০৫টি টেস্ট উইকেট। যার এক একটি পেতে ছক কষতে হয় নতুন করে। এছাড়া ওয়ানডে ফরম্যাটে তিনি নিয়েছিলেন ২২৫ উইকেট। দুই ফরম্যাটেই তাঁর বোলিং গড় বিশের ঘরে। তবে একদফা এই মৌনতা ভেঙে নিজের ভেতর তৈরি হওয়া ক্ষোভ বাইশ গজে ঝেড়েছিলেন অ্যামব্রোস। তাও আবার সেই স্টিভ ওয়াহের বিপক্ষেই।

১৯৯৫ সালের দিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজে সফরত অস্ট্রেলিয়া। চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজের তৃতীয় টেস্টের প্রথম দিনেই ওয়াহ ও অ্যামব্রোস জড়িয়ে পড়েন বাকবিতণ্ডায়। তাঁদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যের বিনিময় হয়। সে ঘটনার স্মৃতিচারণ করে অ্যামব্রোস বলেন, ‘স্টিভ ওয়াহ এবং আমার মধ্যকার দ্বৈরথটা চলেছে বেশকিছু বছর ধরে। সে যথেষ্ঠ শক্ত প্রতিপক্ষ। আমি তাঁকে সম্মানও করি। তবে সেদিন স্টিভ ওয়াহ আমার অপছন্দের একজন হয়ে উঠেছিল।’

ত্রিনিদাদের কুইন্স পার্ক ওভালে সেদিন দুই মহারথীর মাঝের হওয়া তর্কের এক পর্যায়ে অ্যামব্রোস আঘাতের হুমকি দিয়েছিলেন ওয়াহকে। সে নিয়ে অ্যামব্রোস বলেন, ‘প্রথমত আমি তাঁর কথা এড়িয়ে যাই। লড়াইয়ের তাপে আপনি যে কোন কিছুই বলতে পারেন। তবে একটা বিরতির পর আমার মাথায় চট করে কিছু একটা হয়ে গেল। আমি তাঁকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম তুমি কি আমাকে সেটা বলেছ? তুমি কি সত্যিই আমাকে সেটা বলেছ?’

স্টিভ ওয়াহ কিছু একটা বলেছিলেন তবে তা কখনোই আর মাঠের বাইরে প্রকাশ করেননি অ্যামব্রোস। তবে সেদিন ওয়াহের কথাগুলো বেশ তাতিয়ে তুলেছিল অ্যামব্রোসকে। তিনি তাঁর সকল নিরবতার অবসান ঘটিয়ে শাসান ওয়াহকে। অ্যামব্রোস বলেন, ‘সে হ্যাঁ বা না কোন কিছুই না বলেনি, বরং সে বলেছিল সে যা ইচ্ছে হয় তাই বলতে পারে। আমার তখন মনে হয়েছিল আমার আরেকটু বেশি সম্মান প্রাপ্য এবং তাই আমি তাঁকে উত্তর দেই।’

সেদিন অ্যামব্রোস বলেছিলেন, ‘আমার ক্যারিয়ার এই মুহূর্ত থেকে শেষ হয়ে যেতে পারে, তবে সেটা খুব একটা পার্থক্য গড়ে দেবে না। আমার সাথে তোমারও ক্যারিয়ার আজ শেষ হতে চলেছে। কেননা আমি তোমাকে এমনভাবে আঘাত করব যাতে করে তুমি আর খেলতে না পার।’

দুইজন মহারীতির মাঝে ঠিক এতটাই উত্তপ্ততা ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে সেটা মাঠের বাইরে সীমাবদ্ধ ছিল। তাঁরা তাঁদের সে দ্বৈরথকে মাঠের বাইরে অবধি টেনে নিয়ে আসেননি। সেদিন কোন অঘটনও ঘটেনি। তবে ওয়াহ নিজেকে একটু পিঠ চাপড়ে দিয়েছিলেন নিশ্চয়ই। কেননা সেদিন তিনি অ্যামবোসের নীরবতা ভাঙতে পেরেছিলেন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...