প্রোটিয়া গ্রেট থেকে আইপিএলের সব্যসাচী

ভারতের ক্রিকেট অঙ্গণের ভারতীয় খেলোয়াড়দের বাদে ভিনদেশি খেলোয়াড়দের সম্মান করা কিংবা সমীহ করা খেলোয়াড়দের সংখ্যা খুবই নগন্য। কিন্তু একজন ছিলেন যিনি গোটা বিশ্বের পাশাপাশি সমানভাবেই সমাদৃত হয়েছেন ভারতেও। তিনি মিস্টার থ্রিসিক্সটি এবি ডি ভিলিয়ার্স।

সম্প্রতি প্রোটিয়া এই তারকা ব্যাটার ক্রিকেটকে জানিয়েছেন বিদায়। সব ধরণের ক্রিকেট থেকেই যেহেতু নিয়েছেন বিদায় সেহেতু তাঁকে আর দেখা যাবে না আইপিএলের জমজমাট আসরেও। কিন্তু এখান থেকেই তিনি ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকদের কাছ থেকে পেয়েছেন সম্মান। বিদায় যেহেতু নিয়েছেন সেহেতু তাঁর ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারের একটু ঢুঁ মারা হবে না তা হবে কি করে?

তাই আজকে হাজির হলাম ভিলিয়ার্সের আইপিএল খেলা পাঁচটি সেরা ইনিংস নিয়ে। সেই প্রথম আসর থেকেই আইপিএলের পরিচিত মুখ। তবে সবচেয়ে বেশি সময় তিনি কাটিয়েছে রয়েল চ্যালেঞ্জার ব্যাঙ্গালুরুর ডেরায়। সেই ২০০৮ থেকে প্রায় প্রতিটি মৌসুমেই খেলেছেন তিনি। এখন পর্যন্ত খেলা ম্যাচের সংখ্যা ১৮৪। প্রায় ৪০ গড়ে রান তুলেছেন ৫১৬২। স্ট্রাইক রেট ১৫১.৭।

  • অপরাজিত ৭৯ রান ৪৭ বলে গুজরাট লায়ন্সের বিপক্ষে (২০১৬)

২০১৬ সালের প্রথম কোয়ালিফায়ারে গুজরাট লায়ন্সের মুখোমুখি হয়েছিল রয়েল চ্যালেঞ্জার ব্যাঙ্গালুরু। প্রথমে ব্যাট করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটার ডোয়েন স্মিথের ৪১ বলে করা ৭৩ রানের ইনিংসের উপর ভর করে গুজরাট লায়ন্স সংগ্রহ করে ১৫৮ রান।

তারকা ব্যাটারে ভরপুর ব্যাঙ্গালুরুর জন্যে টার্গেটটা সহজ মনে হলেও তা পাহাড়সম কঠিন হয়ে যায়। প্রথম দশ ওভারের মধ্যে ৬৮ রানের বিপরীতে ছয় উইকেট হারিয়ে ব্যাঙ্গালুরু পড়ে যায় চরম বিপাকে। সেখান থেকে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান এবি ডি ভিলিয়ার্স। ৪৭ বলে ৭৯ রান করে অপরাজিত থেকে ম্যাচ শেষ করেই সেদিন ফিরেছিলেন সাঁজঘরে। বিপর্যয় সামলে দলের জয়ের জন্যে প্রয়োজনীয় রান তুলতে ভিলিয়ার্স সমান পাঁচটা করে চার ও ছক্কা হাঁকান।

  • অপরাজিত ৮৯ রান ৪১ বলে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ বিপক্ষে (২০১৪)

ডি ভিলিয়ার্স অধিকাংশ বিধ্বংসী এবং সমানতালে কার্যকরী ইনিংস খেলেছেন যখন তাঁর দল পড়েছিল বিপাকে। খাদের কিনারা থেকে বহুবার তিনি বাঁচিয়েছেন তাঁর দলকে। এমনই আরেক উদাহরণ সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে ২০১৪ সালে খেলা একটি ম্যাচ। আইপিএলের ২৪ তম ম্যাচে আগে ব্যাট করে স্কোরবোর্ডে ১৫৫ রান তুলতে সক্ষম হয় হায়দ্রাবাদ ছয় উইকেটের বিনিময়ে।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে আবার এক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় রয়েল চ্যালেঞ্জার ব্যাঙ্গালুরু। ৯৫ রানের পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেলা ব্যাঙ্গালুরুর জয়ের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন ডি ভিলিয়ার্স। আট ছয় ও ছয়টি চারে তিনি ৪১ বলে ৮৯ রানের এক অনবদ্য অপরাজিত ইনিংস খেলে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছিলেন মিস্টার থ্রিসিক্সটি।

  • অপরাজিত ১০৫ রান ৫৪ বলে চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে (২০০৯)

২০০৯ আসরে ভিলিয়ার্স ছিলেন দিল্লি ডেয়ারডেভিলস শিবিরে। চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ এক ম্যাচে আগে ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়ছিলো দিল্লি। তবে ইনিংসের শুরুতে বীরেন্দ্র শেবাগ ও গৌতম গম্ভীর আউট হয়ে গেলে ডি ভিলিয়ার্সের উপর দায়িত্ব আসে বিপর্যয় সামাল দেবার। সাবেক লঙ্কান তারকা তিলকারত্নে দিলশানকে সঙ্গে নিয়ে তিনি সামাল দেন।

মাত্র ৫৪ বলে ১০৫ রান করে ডি ভিলিয়ার্স আদায় করে নিয়েছিলেন আইপিএলে নিজের প্রথম শতক। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে পাঁচটা চার ও ছয়টা ছক্কা মেরে তিনি দলকে এনে দিয়েছিলেন স্বস্তির টোটাল। পরবর্তীতে তাঁর ব্যাটিং অবদানেই নয় উইকেটের জয় তুলে নিতে সক্ষম হয় দিল্লি ডেয়ার ডেভিলস।

  • অপরাজিত ১২৯ রান ৫২ বলে গুজরাট লায়ন্সের বিপক্ষে (২০১৬)

২০১৬ সালে লিগ পর্বের ম্যাচেও রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু মুখোমুখি হয়েছিল গুজরাট লায়ন্সের বিপক্ষে। ২০১৬ সাল ব্যাঙ্গালুরুর জন্য ছিলো সাফল্যের একটি বছর। তাঁর পেছনে কারণ হিসেবে রয়েছে বিরাট কোহলি ও ডি ভিলিয়ার্সের সচল রানের চাকা।

লিগ পর্বের সেই ম্যাচে রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু আগে ব্যাট করে মাত্র দুই উইকেট খরচায় রান তুলেছিল ২৪৮। সেই ম্যাচে বিরাট এবং ভিলিয়ার্স দুই জনই পেয়েছিলেন শতকের দেখা। যেটা কি না টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে খুবই বিরল দৃষ্টান্ত। বিরাট না পারলেও ডি ভিলিয়ার্স অপরাজিত থেকেই ইনিংস শেষ করেন ৫২ বলে ১২৯। তাঁর সেই ঝড়ের তাণ্ডবে ছিল বারোটি ছক্কা ও দশটি চার।

  • অপরাজিত ১৩৩ রান ৫৯ বলে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে (২০১৫)

আইপিএলের সেবারের আসরের ৪৬তম ম্যাচে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে সেই ম্যাচের পরই হয়ত মিস্টার থ্রিসিক্সটি উপাধিটা পুরোপুরি এঁটে যায় ডি ভিলিয়ার্সের সাথে। সেদিন তিনি মাঠের প্রায় প্রতিটি কোণে বল পাঠিয়েছিলেন। অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে সাথে নিয়ে সেদিন ডি ভিলিয়ার্স দলের জন্যে সংগ্রহ করেছিলেন ২৩৫ রান। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট বিবেচনায় এটা বিশাল বড় সংগ্রহ।

সেদিন প্রায় ২২৫ স্ট্রাইকরেটে রান তুলেছিলেন ভিলিয়ার্স। ইনিংসের শেষ অবধি টিকে থেকে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল ১৩৩ রান মাত্র ৫৯ বলে। এই ঝড়ো ইনিংস খেলতে তিনি মাত্র চারটি ওভার বাউন্ডারির সাহায্য নিয়েছিলেন। বাকি অধিকাংশ রান এসেছে তাঁর মারা ১৯টি চার থেকে।

উইকেটে চারপাশে খেলতে পারার এই নান্দনিক দক্ষতা নিসঃন্দেহে মিস করবে করবে ভারত থেকে শুরু করে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। এবি ডি ভিলিয়ার্সের মতো কাওকে পেতে ক্রিকেটকে অপেক্ষা করতে হবে বহুকাল। হতেও পারে তা অনন্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link