২০১১ সালে ভারত, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কায় যৌথভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্বকাপ। তিন দেশেই সমানতালে উন্মাদনা সৃষ্টি হয়েছিল সেই আসরকে ঘিরে। অথচ এক যুগ পর ২০২৩ সালে ভারত এককভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন করলেও পুরো দেশে তেমন কোন উচ্ছ্বাস চোখে পড়ছে না – স্পষ্ট যে ওয়ানডে ক্রিকেট আসলে সময়ের সাথে সাথে দর্শক হারাচ্ছে।
ক্রিকেটের এই সংস্করণ নিয়ে প্রচলিত একটি সমালোচনা হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ। এই ম্যাচগুলো প্রকৃত পক্ষে ওয়ানডেকে অর্থহীন করে তুলেছে। এছাড়া টি-টোয়েন্টির রোমাঞ্চকর লড়াইয়ের কারণে এখন পঞ্চাশ ওভারের দ্বৈরথকে বড্ড সাদামাটা মনে হয়।
এ ব্যাপারে ইয়ান চ্যাপেল লিখেছেন যে, ‘বিশ্বকাপের বছরেই শুধু ওয়ানডে ফরম্যাটের গুরুত্ব থাকে।’ অন্যদিকে, আরেক গ্রেট শচীন টেন্ডুলকার মনে করেন এই সংস্করণ ‘বোরিং’ হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘খেলাটা এখন অনুমানযোগ্য হয়ে গিয়েছে। ১৫ থেকে ৪০ ওভার – এই সময়টাতে এটি মোমেন্টাম হারাচ্ছে, ফলে বিরক্তিকর অনুভব হয়।’
তবু আইসিসির সূচিতে ওয়ানডে ম্যাচ একটু বেশিই থাকে। এখনো ক্রিকেটপ্রেমীদের বিনোদনের বড় উৎস এই পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচ। আর সেজন্য গত এক দশকের বেশি সময় ধরে পরিকল্পনায় বেশ বড়সড় পরিবর্তন আনতে হয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে পিচগুলোকে আরো বেশি ব্যাটিং বান্ধব করা হয়েছে, বাউন্ডারির দূরত্বও কমানো হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে।
পরিসংখ্যানেই বোঝা যায় সেটা, এখন পর্যন্ত ওয়ানডে ইতিহাসে দলীয় রান ৪০০ পেরিয়েছে মাত্র ২৪ বার, যেখানে ২০১১ সালের পরেই ১৫বার এমনটা ঘটেছে। তিন দেশের যৌথ আয়োজনের সেই বিশ্বকাপের ফাইনালে ২৭৫ রানের টার্গেট ভারত জিতেছিল মাত্র দশ বল হাতে রেখে। কিন্তু বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড ২০১৬ সালে একটা ম্যাচে করেছে ৪৪৪, ২০১৮ সালে করেছে ৪৮১ এবং ৪৯৮ রান – স্বাভাবিকভাবেই ২৭৫ রানের লক্ষ্য এখন মোটেই চ্যালেঞ্জিং মনে হয় না।
ব্যাটাররা সুবিধা ফেলেও সবসময় যে রান উৎসব হয় এমনও না। অনেক ম্যাচেই বোলাররা রাজত্ব করেন; এই যেমন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৫ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেললেও নির্ধারিত ৩৪ ওভারে ২২৬ রান তুলেছিল ইংল্যান্ড। শেষ পর্যন্ত তাঁরা জয় পেয়েছিল ৭৯ রানের বড় ব্যবধানে।
সব মিলিয়ে তাই ওয়ানডে ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে। এমসিসির সভাপতি মার্ক নিকোলাস মনে করেন শুধু মাত্র বিশ্বকাপেই ওয়ানডে ম্যাচ থাকুক। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ খেলাটা এখন কঠিন। অনেক দেশেই বর্তমানে গ্যালারি ভর্তি দর্শক হয় না।’
এই ক্রিকেট কর্তা আরো যোগ করেন, ‘অন্যদিকে, টি-টোয়েন্টিতে দর্শক টানার অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা রয়েছে। আর এই মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে টাকাই জিতবে। খেলোয়াড়রা সেটা বুঝতে পারছে এবং তাঁরা এটার সাথেই থাকতে চায়। তাই টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে একসাথে সূচি করা ওয়ানডে ক্রিকেটকে সমাপ্তির দিকে টেনে নিবে।’