গতকাল সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক মুমিনুল হক জানিয়েছিলেন তাঁরা ওপেনিংয়ে ডান-বাম কম্বিনেশন রাখতে চান। ফলে ধারণা পাওয়া যাচ্ছিল সাইফের জায়গায় ডানহাতি ওপেনার হিসেবে অভিষিক্ত হতে পারেন মাহমুদুল হাসান জয়। আজ ঢাকায় দ্বিতীয় টেস্টের সকালে তাঁর প্রমাণই মিললো। বাংলাদেশের ৯৯তম টেস্ট খেলোয়াড় হিসেবে অভিষিক্ত হলেন জয়।
মাহমুদুল হাসান জয় গতবছর অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলটার ব্যাটিং স্তম্ভ ছিলেন। জয়কে কেন্দ্র করেই সাজানো হতো দলটার ব্যাটিং লাইন আপ। তবে বিশ্বকাপে জয় খেলেছিলেন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে। বিশ্বকাপে দারুণ ক্রিকেট খেলায় এরপর থেকেই বিসিবি নজর রাখে এই ব্যাটারের উপর। মাঝে করোনার কারণে জয়রা তেমন একটা ম্যাচ খেলতে পারেননি। তবে এবছরের শুরুতে আয়ারল্যান্ড উলভসের বিপক্ষে ম্যাচ খেলতে নামেন জয়রা। সেখানে জয় আবার ব্যাটিং করেছিলেন তিন নম্বর পজিশনে।
এদিকে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে জয়কে ডাকা হয় ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে। চট্টগ্রাম টেস্টের আগে সংবাদ সম্মেলনে সেরকমই বলেছিলেন মুমিনুল হক। চট্টগ্রামে ম্যাচের আগেও জয়কে ঘিরে দেখা গিয়েছিল বাড়তি মনোযোগ। ফলে ভাবা হচ্ছিল চট্টগ্রামেই বোধহয় অভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন তিনি। তবে প্রথম টেস্টে সাইফ হাসানকেই সুযোগ দেয় বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে না হলেও ঢাকা টেস্টে ঠিকই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের নাম লিখালেন ২১ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান।
এর আগে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। এবছরই চিটাগাং ডিভিশনের হয়ে অভিষিক্ত হন। তবে যেই ৮ টি ম্যাচ খেলেছেন সেখানে নিজের টেকনিক ও টেম্পারমেন্টের পরিচয় দিয়েছেন জয়। প্রথম শ্রেণির ৮ ম্যাচে ৪১ গড়ে ব্যাটিং করে করেছেন ৫৭৪ রান। এরমধ্যেই দুইটি সেঞ্চুরি ও দুইটি হাফ সেঞ্চুরিও আছে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজের প্রথম আসরেই চমক দেখিয়ে জায়গা করে নিয়েছেন জাতীয় দলে।
তবে বয়স ভিত্তিক দল, ঘরোয়া ক্রিকেট কোথায়ই নিয়মিত ওপেন করেননি জয়। বয়সভিত্তিক দলে মিডল অর্ডারে ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলেছেন তিন নম্বর পজিশনে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অবশ্য জয় শুরু করতে চলেছেন ওপেনার হিসেবে। টেস্ট ক্রিকেটে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করবেন নতুন বলে শাহীন শাহ আফ্রিদি, হাসান আলীদের মোকাবেলা করে। সেভাবে নিয়মিত ওপেন না করা জয়ের জন্য এটা বাড়তি চাপ হয়ে যায় কিনা সেটাও ভাবনার বিষয়।
তবে নিজের ক্রিকেটীয় জীবনে জয় যখনই চাপের মুখে পড়েছেন তখনই নিজের সেরাটা দিয়ে বেরিয়ে এসেছেন। অনুর্ধ্ব-১৯ দলেও ব্যাটিং লাইন আপের পুরো চাপ নিজে সামলেছেন। দলটার নিউক্লিয়াসের মত ছিলেন তিনি। কখনো পুরো ম্যাচ ধরে খেলেছেন কখনো আবার আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে প্রতিপক্ষকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছেন। ফলে ম্যাচের পরিস্থিতি ও দলের চাহিদা মিটিয়ে ব্যাটিং করার অভ্যাসটা জয়ের আগে থেকেই আছে।
এখন শুধু ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে সেই স্পর্ধাটা আরেকবার দেখানো। এবার দায়িত্ব বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপকে আগলে রাখা। জয় হয়তো কাজটা পারবেন। তবে আগামী কয়েকমাস তাঁর সামনে কঠিন পরীক্ষা। পাকিস্তানের বিপক্ষে এই ম্যাচের পর জয়কে ওপেন করতে হতে পারে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধ কন্ডিশনে। সেখানে কিউই পেসারদের সামলে যদি নিজের বিপ্লবটা আরেকবার তুলে ধরতে পারেন তাহলেই তো আসবে জয়।