অভিজ্ঞতার শক্তি, অভিজ্ঞতার দুর্বলতা

বিপিএলের প্লেয়ার ড্রাফটের দিন সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছিল মিনিস্টার ঢাকাকে নিয়ে। ড্রাফট থেকে তিন ‘এ’ ক্যাটাগরির ক্রিকেটারকে দলে ভিড়িয়েছিল এই ফ্র্যাঞ্চাইজি। শুধু এখানেই আলোচনা থামে না। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, তামিম ইকবাল, মাশরাফি বিন মর্তুজা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম অভিজ্ঞ ও সফল  তিন ক্রিকেটার। এই অভিজ্ঞতাই ছিল ঢাকার শক্তি, আদ্যতে ঢাকার দুর্বলতাও।

দল গোছাতে মোটা অঙ্কের টাকাই খরচ করেছে ঢাকা। শুধু ‘এ’ ক্যাটাগরির তিন ক্রিকেটারকে দলে নিতেই দলটি খরচ করেছে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা। এছাড়া পুরো দলটাই অভিজ্ঞদের নিয়ে গড়া। একটু কঠিন করে বললে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সাথে আর মানিয়ে নিতে পারছেন না এমনদের নিয়েই দল গুছিয়েছে তাঁরা।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে অনেকে বলেন তারুণ্যের খেলা। এখানে ইয়াং ব্লাড, এনার্জিটিক ক্রিকেটার প্রয়োজন। তবে বয়স নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। শোয়েব মালিকরা তো ঠিকই এখনো সমানতালে পারফর্ম করে যাচ্ছেন। বলা ভালো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট আসলে পারফর্মারদের খেলা। এই ফরম্যাট আপনাকে খুব বেশি সময়, সুযোগ কোনটাই দিবে না।

মিনিস্টার ঢাকা আসলে এই বয়স, অভিজ্ঞতা আর পারফর্মারের প্যাচেই পড়ে গিয়েছে। তামিম বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম ওপেনার এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটে এখনো তিনি দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তাঁর ব্যাটিং নিয়ে প্রশ্ন ছিল, প্রশ্ন আছে।

তামিম বাংলাদেশের হয়ে শেষ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন প্রায় বছর দুয়েক আগে। এছাড়া সম্প্রতি এভারেস্ট প্রিমিয়ার লিগে খেলেছিলেন। সেখানেও খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছিলেন নিজেই। তামিমের ব্যাটে রান থাকলেও প্রশ্ন ছিল তাঁর স্ট্রাইকরেট নিয়ে।

এবারের বিপিএলেও ঢাকার হয়ে প্রথম দুই ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। তবে পাওয়ার প্লেতে তাঁর ধীরগতির ব্যাটিং ঢাকাকে পিছিয়ে দিয়েছে। ফলাফল, দুই ম্যাচেই হারের মুখ দেখেছে তামিম, রিয়াদরা। আজকে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে দিনে ম্যাচ হওয়ার ১২০-১৩০ রানই অনেক।

ফলে আজ তামিমের অভিজ্ঞতা ব্যবহার করার দিন ছিল। আজ ধীরগতির একটা ৫০ করলেও সেটা দলের কাজে আসতো। তবে আজ ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ডাউন দ্য উইকেটে এসে মারতে গিয়ে নিজের উইকেট দিয়ে এসেছেন। ফলে অভিজ্ঞতা শুধু কাগজে কলমেই থেকে গেল, মাঠে গড়ালো না।

ওদিকে বর্তমানে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আছেন ঢাকার অধিনায়ক হিসেবে। যদিও এই সময়ে এসে  রিয়াদ আর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ফিট করেন কিনা সেই প্রশ্ন আছে। তাঁর ব্যাটে আগের সেই রিফ্লেক্স আর দেখা যায় না। বয়স যেনো তাঁর শরীরকে টেনে ধরে, অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে দেয় না।

ঢাকা এরপর সবচেয়ে বড় চমক হিসেবে দলে ভিড়িয়েছে মাশরাফি বিন মর্তুজা। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম অধিনায়ক। তবে একবছরের বেশি সময় ধরে কোন প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে দেখা যায়নি মাশরাফিকে। বিপিএলে দল পাওয়ার পর অনুশীলনেও তাঁকে বেশ বেগ পোহাতে হয়েছে।

বোলিং করতে কষ্ট হচ্ছিল, বারবার কোমরে হাত দিচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত ঢাকা পর্বে তাঁর আর ম্যাচই খেলা হলো না। যদিও তাঁর জায়গায় খেলা এবাদত হোসেন প্রথম দুই ম্যাচে ভালো বোলিং করেছেন। এখন মাশরাফিকে জায়গা দিতে কী এবাদতকে বসিয়ে রাখবে ঢাকা। অভিজ্ঞতার পাল্লাটা বেশি ভারি হয়ে যাচ্ছেনা কী?

এছাড়া ঢাকার পুরো স্কোয়াডই মোটামুটি অভিজ্ঞদের নিয়ে গড়া।  শামসুর রহমান, জহুরুল ইসলামদে নিয়ে করা হয়েছে বুড়িয়ে যাওয়া এক ব্যাটিং লাইন আপ। ঢাকার ব্যাটিং লাইন আপে একমাত্র শুভাগত হোম এখনো ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করে যাচ্ছেন। এছাড়া জাতীয় দলের হয়ে ধীরগতির ইনিংস খেলা নাঈম শেখও আছেন এই লাইন আপে।

এছাড়া বোলিং ডিপার্টমেন্টে  রুবেল হোসেন, শফিউল ইসলাম কিংবা বিদেশি কোটায় থাকা ইসুরু উদানারাও লম্বা সময় আর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পারফর্ম করতে পারছেন না।  স্পিন ডিপার্টমেন্টের দায়িত্বে থাকা আরাফাত সানিও এখন আর জাতীয় দলের বিবেচনায় নেই। সব মিলিয়ে মিনিস্টার ঢাকায় অনেক বড় বড় নাম আছে।

তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট যে নাম, অভিজ্ঞতা চেনেনা, পারফর্মার চেনে। ঢাকার পারফর্মারটা হবেন কে? হ্যাঁ, শেষ অবধি ঢাকা জিতেছে। অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর আন্দ্রে রাসেল, শুভাগত হোমদের হাত ধরে এসেছে জয়। এর আগে বল হাতে দারুণ করেছেন রুবেল হোসেন। এখানে, আবার পারফরমাররাও অভিজ্ঞা। ফলে, অভিজ্ঞতাটা এখানে শক্তি হয়ে কাজ করেছে ঢাকার জন্য।

আসলে, অভিজ্ঞতা বিষয় না। বিষয় হল মানসিকতা। শুভাগত হোম বা আন্দ্রে রাসেলের যে মেজাজে খেলেছেন – সেটা টি-টোয়েন্টির সাথে যায়। সেই ফলটাই ঢাকা পেয়েছে। অভিজ্ঞতাকে শক্তি হিসেবে কাজে লাগাতে পারলে চলতি বিপিএলে তাঁদের পক্ষে ভাল করা সম্ভব। কিন্তু, অধিকাংশ সময়ই যে অভিজ্ঞতাটা ‘নেতিবাচক’ ভূমিকা রাখছে – তার থেকে মুক্তি মিলবে কবে!

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link