ঝাড়খণ্ডের রাঁচি থেকে চেন্নাইয়ের দুরত্ব পায় দুই হাজার কিলোমিটার। সেই রাঁচি, যেখানটায় মহেন্দ্র সিং ধোনি জন্মেছিলেন। ঠিক তার সহস্র মাইল দূরের এক শহরের ক্রিকেট দেবতা হয়ে ওঠার গল্পটাও ধোনির। আর সেটা কিছুটা বিস্ময়েই ভাসায় বটে।
অবশ্য বিস্ময়ের রেশ আরো তীব্র আকার ধারণ করে যখন দেখা যায়, চেন্নাই থেকে কলকাতা, ব্যাঙ্গালুরু থেকে আহমেদাবাদ, ধোনির উপস্থিতি মানেই যেন স্টেডিয়ামে উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ।
ভারত আর চেন্নাইকে ক্রিকেটের সব দেওয়া ধোনি আবারো জিতেছেন। আইপিএল শিরোপা। চেন্নাইকে পেন্টাজয় এনে দিয়েছেন। আর নিজেও সাফল্যের রাজমুকুটে আরেকটি পালক যোগ করেছেন। ধোনির কাছে এ আর নতুন কী! গোটা ক্যারিয়ার জুড়ে তিনি সাফল্যের ভেলার ভাসছেন।
তবে বয়সটা তো আর কম হলো না। ৪১ পেরিয়ে, ৪২ এ পা দিয়েছেন। ক্রিকেটারদের চল্লিশ পেরোলেই মোটামুটি অবসরের বন্দোবস্ত শুরু হয়ে যায়। কিন্তু দর্শক জনপ্রিয়তার বিড়ম্বনায় ধোনির যেন সেই অবসরটুকুও ভোগের অধিকার নেই। স্টেডিয়াম জুড়ে সমর্থকদের ‘মাহি… মাহি’ চিৎকারও তিনি তাই অগ্রাহ্য করতে পারছেন না।
গুজরাট টাইটান্সকে হারিয়ে এবারের আইপিএল শিরোপা ধোনির চেন্নাইয়ের। আইপিএল ফাইনাল মানেই মহা আয়োজন। আর সেই আয়োজনেরই সবার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ছিলেন ধোনি। কারণটা ঐ চাপা উৎকণ্ঠা, ধোনি কি তাহলে ক্যারিয়ারে যতিচিহ্ন বসাচ্ছেন, নাকি দর্শকদের ভালোবাসায় উদ্বেলিত হয়ে আরো এক মৌসুম বাইশ গজে কাটিয়ে যাবেন?
হার্শা ভোগলে মাইক্রোফোন হাতে অপেক্ষা করছিলেন। চ্যাম্পিয়ন ধোনি আসলেন। এরপর অবশেষে সেই স্বস্তিদায়ক বার্তা। মাইক্রোফোন হাতে ধোনি বলে উঠলেন, চেন্নাইয়ের সমর্থক আর তাঁর নিজের ভক্তদের জন্য আরও একটা মৌসুম আইপিএলে খেলে যেতে চান তিনি।
তবে তাতে জুড়ে দিলেন একটা ‘কিন্ত’। আগামী ৬/৭ মাসে ৪২ বছর বয়সী ধোনির শরীর কতটা সাঁয় দিবে তার উপরেই নির্ভর করছে সব।
চেন্নাইয়ের শিরোপা জয়ের পর ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে জানতে চাইলেন, ‘এখানেই কি তবে শেষ?’ ধোনি হাসলেন। এরপর বললেন, ‘অবসর নেওয়ার জন্য এটাই তো সেরা সময়। এখন সবচেয়ে সহজ হচ্ছে সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে অবসর নেওয়া। কিন্তু কঠিন কাজটা হচ্ছে, আগামী ৮/৯ মাস কঠোর পরিশ্রম করে আরেকটা মৌসুম খেলার চেষ্টা করা। যে ভালোবাসা আমি চেন্নাইয়ের সমর্থকদের কাছ থেকে পেয়েছি, আরও এক মৌসুম খেললে তাদের জন্য আমার পক্ষ থেকে একটা উপহার দেওয়া হবে।’
ধোনি কখনোই তেমন আবেগপ্রবণ নন। নির্লিপ্ত, নির্বিকার। কিন্তু কোয়ালিফায়ারের ম্যাচে এই ধোনিই হয়ে উঠেছিলেন আবেগপ্রবণ।
চেন্নাইতে হওয়া সেই মুহূর্ত টেনে এনে তিনি বলেন, ‘আসলে আবেগপ্রবণ হওয়াটাই স্বাভাবিক। এটাই আমার ক্যারিয়ারের শেষ অংশ। এখান থেকেই সব শুরু হয়েছিল, পুরো গ্যালারি আমার নামে স্লোগান দিয়েছে। তখন আমার চোখ ছলছল করছিল। চেন্নাইতে এমনটাই হয়েছিল। তাদের জন্য যদি আরও এক মৌসুম খেলতে পারি সেটা দারুণ হবে।’
চেন্নাইয়ের আইপিএল শিরোপা জয়ের দিনে আইপিএল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন আম্বাতি রাইডু। এ নিয়ে সর্বোচ্চ ৬ বার আইপিএল শিরোপা জেতা এ ক্রিকেটারকে নিয়ে প্রশংসায় ভাসান ধোনি।
তিনি বলেন, ‘রাইডু যখনই মাঠে নামে, শতভাগ দেয়। আবার এটাও ঠিক যে, ওর জন্য আমরা ফেয়ার প্লে ট্রফি জিতি না। (হেসে)। কারণ ও সব সময় আক্রমণাত্বক থাকে। আমরা একসঙ্গে ভারত এ দলেও খেলেছি। সে স্পিন ও পেস, দুটিই স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে পারে। সব সময় মনে হয়েছে, রাইডু বিশেষ কিছু করবে। আর রাইডুও আমার মতো খুব বেশি ফোন ব্যবহার করতে পছন্দ করে না।’