নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল, কার্তিককে ব্যাটিংয়ে নামতেই দিচ্ছিলেন না রোহিত

কিন্তু নিজের ফিরে আসা জানান দেবার জন্য রুবেলের ওই ওভারটিকেই বেছে নিলেন কার্তিক। ২২ রান নিয়ে ম্যাচটি আবারো ভারতের হাতের মুঠোয় নিয়ে এলেন ৷ এখানেই শেষ নয়, ইনিংসের শেষ বলে যখন ভারতের দরকার পাঁচ রান, তখন ছক্কা মেরে ভারতকে শিরোপা এনে দেন কার্তিক।

‘এভাবেও ফিরে আসা যায়’ গানের এই লাইনটি দীনেশ কার্তিকের ক্ষেত্রে সহজেই ব্যবহার করা যায়। পারফর্মারে ভরপুর ভারতীয় জাতীয় দলে একবার বাদ পড়ার পর আবার ফিরে আসা অনেকটা পাহাড় টপকানোর মতই। সেটিও যদি হয় আবার ৩৪ বছর বয়সের কারো দ্বারা সেটি অবিশ্বাস্য ঠেকাই স্বাভাবিক।

দীনেশ কার্তিক করে দেখিয়েছিলেন সেটিই। প্রত্যাবর্তনের শুরুর দিকেই নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের হাতের মুঠো থেকে বেরিয়ে যাওয়া ম্যাচ একাই বের করে এনেছিলেন এই উইকেট রক্ষক ব্যাটার।

আইপিএলে ফিনিশিং রোলে অতিমানবীয় এক মৌসুম কাটানোর পর দীনেশ কার্তিককে আর উপেক্ষা করতে পারেননি ভারতের নির্বাচকরা। শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত তিন জাতির টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট নিদাহাস ট্রফির দলেও ডাক পেলেন।

পুরো টুর্নামেন্টে তেমন কিছু করার সুযোগই পেলেন না। ভারত ফাইনাল ম্যাচে মাঠে নামলো বাংলাদেশের বিপক্ষে। ১৬৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো হলেও মাঝ পথে এসে খেই হারায় রোহিতের দল। রুবেল, মুস্তাফিজফের দারুণ বোলিংয়ে ম্যাচ থেকে ধীরে ধীরে ছিটকে যায় ভারত।

১৮ নাম্বার ওভারে বোলিং করতে এসে অবিশ্বাস্য এক ওভারে ম্যাচ পুরোপুরি বাংলাদেশের হাতের মুঠোয় নিয়ে আসেন মোস্তাফিজ। ১৮ তম ওভারে মাত্র ১ রান দিয়ে তুলে নেন এক উইকেট।

ভারতের তখন দুই ওভারে প্রয়োজন ৩৪ রান। তখনই ক্রিজে এলেন দীনেশ কার্তিক। ভারতীয় সমর্থকদের বেশিরভাগ ততক্ষনে শিরোপা জয়ের আশা ছেড়েই দিয়েছেন। এদিকে ১৯ তম ওভারে বোলিংয়ে আসলেন ততক্ষন পর্যন্ত ফাইনালে বাংলাদেশের সেরা বোলার রুবেল হোসেন।

কিন্তু নিজের ফিরে আসা জানান দেবার জন্য রুবেলের ওই ওভারটিকেই বেছে নিলেন কার্তিক। ২২ রান নিয়ে ম্যাচটি আবারো ভারতের হাতের মুঠোয় নিয়ে এলেন ৷ এখানেই শেষ নয়, ইনিংসের শেষ বলে যখন ভারতের দরকার পাঁচ রান, তখন ছক্কা মেরে ভারতকে শিরোপা এনে দেন কার্তিক।

পাঁচ বছর আগের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা এই মূহুর্তকে এখনো মনে রেখেছেন কার্তিক। আইপিএলের দল রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর একটি পডকাস্টে কার্তিক বলেন, ‘ম্যাচের প্রথম অংশ আমাদের জন্য ভালো ছিল। বোলাররা ভালো বল করেছে। ম্যাচের দ্বিতীয় অংশে তারা আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিল ৷ তারা আমাদের ওপর আধিপত্য দেখাচ্ছিল এবং আমরা তখন স্ট্রাগল করছিলাম। তখন এমন এক পরিস্থিতি দাঁড়ালো যে দুই ওভার বাকি এবং আমাদের ৩৪ রান লাগবে।’

ফাইনালে ড্রেসিং রুমে অধিনায়ক রোহিত শর্মার সাথে কথোপকথনের কথাও উল্লেখ করেন কার্তিক, ‘আমি প্যাড পড়ে প্রস্তুত ছিলাম। ম্যাচের দ্বিতীয় বা তৃতীয় ওভারেই আমি প্যাড পড়ে রেডি ছিলাম। কিন্তু রোহিত বারবার আমাকে বলছিল, এখন না। ১৫ তম ওভারে উইকেট পড়ার পর আমি নিশ্চিত ছিলাম তখন আমিই ক্রিজে যাব। কিন্তু, রোহিত তখনো আমাকে বসিয়ে রাখে।’

কার্তিক আরো বলেন, ‘১৮ তম ওভারে যখন মনিশ পান্ডে আউট হলো তখন আমি উইকেটে গেলাম। দুই ওভারে ৩৪ রান প্রয়োজন, তার মানে হল প্রায় সব বলেই আমাকে মারতে হবে। আমি বল গুলো হিট করতে শুরু করলাম, ভক্তরা নাগিন নাচ নাচতে শুরু করল এবং আমরা ম্যাচটি জিতলাম।’

মাত্র আট বলে ২৯ রানের সেই অবিশ্বাস্য ইনিংস টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেরই অন্যতম বিজ্ঞাপন হয়ে আছে। কার্তিক বলেন, ‘আমি সেদিন খুব ভালো কিছু শট খেলতে পেরেছিলাম। তারা এমনটা আশাও করেনি কারণ এর আগ পর্যন্ত তারা খুব ভালো খেলছিল। শেষ ওভারের সময় তারা অনেক ইয়োর্কার করছিল। কিন্তু সৌভাগ্যবশত আমি স্ট্রাইক পাই। বোলার যখন রান আপ শুরু করবে তখনই আমি ভেবেছিলাম যখন সে বলটা করবে, আমি মারব। সে খুব ভালো একটি ডেলিভারি করেছিল। অফস্টাম্পের বাইরে ফুল লেন্থের বলটি আমি ব্যাটে লাগাতে পেরেছিলাম সৌভাগ্যবশত। সেই শটটি শেষ পর্যন্ত ছয় হয় এবং আমরা টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতি।’

নিদাহাস ট্রফির ফাইনালের সেই ম্যাচের ১৯ তম ওভারের হাইলাইটসের ভিডিও ইউটিউবে এখনো রেকর্ড করে চলেছে। খেলাধুলা বিষয় ভিডিও হিসেবে ইউটিউবের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিবার দেখা ভিডিও এখন রুবেল হোসেনের করা সেই ১৯ তম ওভারের ভিডিও।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...