নব্য ব্রিটিশ রাজ

নতুন এক সিরিজ, নতুন এক দল; নতুন করে পাল্টে যাওয়া। নতুন অধিনায়ক আর কোচের অধীনে ইংলিশদের নতুন এক গল্পের রচনা। ব্ল্যাকক্যাপদের শক্তিশালী দলের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের একপ্রকার ছেলেখেলা। এই পালটে যাওয়া ইংলিশরা, সমর্থক সহ সবাইকে যেন টেস্ট ক্রিকেটের নতুন এক অধ্যায়ে সবাইকে স্বাগতম জানিয়েছেন। এই অধ্যায়ে হয়তো দেখা মিলবে সাদা পোশাকে ব্যাটারদের বিধ্বংসী রূপের। টেস্ট ক্রিকেটের সংজ্ঞাই হয়তো বদলে যাবে ইংলিশ ক্রিকেটে।

নতুন অধিনায়ক, নতুন কোচ, নতুন প্রতিপক্ষ, নতুন এক সিরিজ – সব নতুনের ভীড়ে দেখা গেল নতুন এক ইংল্যান্ড দলকে। টেস্ট ক্রিকেটে লম্বা সময় ধরে ইংল্যান্ডের বেহাল দশা কারো অজানা নয়। বাইশ গজ ত্রাশ করা দলটা ঘরের মাটিতেও ছিল কোণঠাসা।

একের পর এক ব্যর্থতা যুক্ত হচ্ছিলো সাদা পোশাকের সাথে। এরপর নতুন এক শুরু, নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই সিরিজটা ইংলিশদের জন্য টেস্ট ক্রিকেটের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়ে থাকবে লম্বা সময়।

জো রুট ছাড়া ধারাবাহিক রানে ছিলেন না কেউই। কিন্তু কোচ আর অধিনায়ক বদলাতেই যেন পালটে গেল সব। কোচ হিসেবে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম আর অধিনায়ক হিসেবে বেন স্টোকস দায়িত্ব নেওয়ার পর – প্রথম সিরিজেই দেখা গেল সাদা পোশাকে ইংলিশদের বিধ্বংসী রূপ।

টেস্টে ভয়ডরহীন ক্রিকেটের দেখাটা বেশ কম মিলে। প্রতিপক্ষের বোলারদের সমীহ করে উইকেটে মাটি কামড়ে পড়ে থাকাটাই তো টেস্ট ক্রিকেটের ধর্ম। তবে, কোচ হিসেবে যেখানে ম্যাককালাম – ব্যাটারদের আগ্রাসী রূপ দেখাটাই স্বাভাবিক। টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি – ফরম্যাটের তোয়াক্কা না করে আগ্রাসী ব্যাটিং করাটাই ম্যাককালামের মূল কৌশল। সেই কৌশলেই শান দিতে দেখা গেছে ইংলিশ ব্যাটারদের।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন টেস্টেই চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়া করে জয়। প্রথম দুই টেস্টে তো এক পর্যায়ে হারের মুখেই ছিল ইংল্যান্ড। সেখান থেকে পালটা আক্রমণে অবিশ্বাস্য ম্যাচজয় করে ইংলিশরা। এই সিরিজের আগে সবশেষ ১৭ টেস্টের মাত্র একটিতে জয়। সেখান থেকে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনে নিউজিল্যান্ডকে ঘরের মাটিতে ধবলধোলাই ইংলিশদের।

লর্ডসে ৭৮ ওভারে ২৭৭ রান তাড়া করে জয়, ট্রেন্ট ব্রিজে ৫০ ওভারে ২৯৯ রান তাড়া, হেডিংলিতে ৫৪ ওভারর ২৯৬ রান তাড়া করে জয়। উইকেট পড়েছে, দল চাপের মুখে – তবু থামেনি ব্যাটিং ঝড়। সাদা পোশাকে ইংলিশ ব্যাটাররা এনে দিয়েছেন রঙিন ছোঁয়া। টেস্টে টি-টোয়েন্টি মেজাজের ব্যাটিং। সাদা পোশাকে ইংল্যান্ডের নতুন যুগের সূচনা এর চেয়ে ভাল নিশ্চয়ই হতে পারে না?

ওলি পোপের টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা, সেই সাথে ব্যাট হাতে বেশ ঈর্ষনীয় পারফরম্যান্স; দল থেকে বাদ পড়ার শঙ্কায় থাকা জনি বেয়ারস্টোর দাপুটে এক প্রত্যাবর্তন; পর পর দুই সেঞ্চুরি, বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে সিরিজের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক বনে যাওয়া; মানসিক অবসাদে ভুগতে থাকা স্টোকসের চিরচেনা আগ্রাসী রূপের দেখা পাওয়া, জেমস অ্যান্ডারসন-স্টুয়ার্ট ব্রডের দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন – সব কিছুর দেখা মিলেছে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে।

অ্যাটাক ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স – ক্রিকেটে বেশ পরিচিত একটা টার্ম। ম্যাককালাম তো এটিকে মস্তকে নিয়ে ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালিয়েছেন পুরো ক্যারিয়ারজুড়ে। কোচ হিসেবেও এবার সেই কৌশল রপ্ত করিয়েছেন ব্যাটারদেরও। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে যেন ভয়ডরহীন ক্রিকেট দেখিয়েছেন বেয়ারস্টো-স্টোকসরা। মাথায় কোনো চাপ নেই, প্রতিপক্ষের মনোবল ভেঙে দিতে শুধু পাল্টা আক্রমণ করে গেছেন।

কত ওভার বাকি, দলের অবস্থান, হাতে কয় উইকেট, প্রতিপক্ষের কন্ডিশন কিংবা বোলার – কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে পুরো সিরিজেই আগ্রাসী রূপে বাইশ গজ মাতিয়েছেন ইংলিশরা।

নতুন এক সিরিজ, নতুন এক দল; নতুন করে পাল্টে যাওয়া। নতুন অধিনায়ক আর কোচের অধীনে ইংলিশদের নতুন এক গল্পের রচনা। ব্ল্যাকক্যাপদের শক্তিশালী দলের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের একপ্রকার ছেলেখেলা।

এই পালটে যাওয়া ইংলিশরা, সমর্থক সহ সবাইকে যেন টেস্ট ক্রিকেটের নতুন এক অধ্যায়ে সবাইকে স্বাগতম জানিয়েছেন। এই অধ্যায়ে হয়তো দেখা মিলবে সাদা পোশাকে ব্যাটারদের বিধ্বংসী রূপের। টেস্ট ক্রিকেটের সংজ্ঞাই হয়তো বদলে যাবে ইংলিশ ক্রিকেটে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...