ভবিষ্যৎ না ভাবা এক বোমা
দলের ওপেনার চোটে পড়ে গেলেন। এমন সময় উপায় কি? ওপেন তো করতে হবে। অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন দীপক হুদাকে। যাও বাইশ গজে, দেখাও তোমার কেরামতি। এমনই হয়ত ছিল বার্তা। হুদা গেলেন, হুদা দেখালেন আর হুদা মন জয় করে নিলেন।
দলের নিয়মিত ওপেনার চোটে পড়ে গেলেন। এমন সময় উপায় কি? ওপেন তো করতে হবে। অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন দীপক হুদাকে। যাও বাইশ গজে, দেখাও তোমার কেরামতি। এমনই হয়ত ছিল বার্তা। হুদা গেলেন, হুদা দেখালেন আর হুদা মন জয় করে নিলেন।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বৈরি কন্ডিশনে ১২ ওভারে ম্যাচ শেষ করে নিয়ে আসলেন দীপক হুদা। নিজে খেললেন ২৯ বলে ৪৭ রানের অপরাজিত এক ইনিংস। না তাতে তিনি বিন্দুমাত্র সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি যেন সুযোগ কোন ক্রমেই হাতছাড়া করতে নারাজ। ভারত জাতীয় দলের হয়ে খেলতে পারাটাই তো একটা চ্যালেঞ্জ। আর টিকে থাকা যেন এভারেস্ট চড়া।
দীপক সেটা জানতেন। তাইতো আয়ারল্যান্ডের সাথে টি-টোয়েন্টি সিরিজ চলাকালীন সময়ে তিনি বলেন, ‘ভারত জাতীয় ক্রিকেট দলে একটা জায়গা খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন এবং এরপর এখানে টিকে থাকা যেন আরও কঠিন।’ চলমান আয়ারল্যান্ড সিরিজের আগে কেবলমাত্র তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছিল দীপক হুদার। দুই ম্যাচে তো ব্যাট হাতে নিজেকে প্রমাণের সুযোগটুকুও পাননি।
সে সুযোগের অপেক্ষাই যেন করছিলেন। আর সুযোগ পেয়েই নিজেকে প্রমাণ করলেন। তাও আবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ যখন কড়া নাড়ছে দরজায়। কি অনবদ্য! কি দুর্দান্ত! নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক হাফ সেঞ্চুরিকে তিনি নিয়ে গেছেন সেঞ্চুরি অবধি। নীল জার্সি গায়ে কেবল চতুর্থ ব্যাটার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে শতক করলেন দীপক হুদা। সুযোগের সদ্ব্যবহার।
জশ লিটলের অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল আলতো খোচায় ঠেলে দিয়ে তুলে নেন শতক। এরপরও তাঁর উদযাপন ছিল বড্ড সাদামাটা। যেন তিনি এমন কীর্তি প্রতিনিয়ত করতে পারেন বা করেন। ভাবলেশহীন এক শতক। অথচ পুরোটা সময় ধরে তিনি আইরিশ বোলারদের বেধম পিটিয়েছেন। আউট হওয়ার আগ অবধি রান করে গেছেন ১৮২ এর বেশি স্ট্রাইকরেট।
ছয়টা ছয়, আর নয়টা চার মেরেছেন তিনি। তবে ভাবলেশহীন এই ক্রিকেটার নিজের এমন কীর্তির পরও ছিলেন একেবারেই স্বাভাবিক। পরিপক্কতা বলতে যা বোঝায় আরকি। এমন দূর্দান্ত পারফরমেন্সের পরও তিনি নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করছেন না। বরং দীপক প্রতিটি ম্যাচে নিজের সামর্থ্য উজার করে দিতেই চান। দূর ভবিষ্যতে তিনি ভারত দলে থাকবেন কি-না, এমন জটিল চিন্তায় মগ্ন হতে চাননা।
তিনি বলেন, ‘একজন ক্রিকেটার হিসেবে একটু দেরীতে হলেও আমি জেনেছি যে, খুব দূরের চিন্তা করা উচিৎ নয়। একটা সময়ে একটা ম্যাচ নিয়েই চিন্তা করা উচিৎ। যদি আমার কাজের নীতি ঠিক থাকে এবং আমার মাথা যদি শান্ত থাকে আমি রান করবোই। এটাই আমার চিন্তাধারা। সবসময় সবকিছু সরল রাখা। বর্তমানে থাকার চেষ্টা করা। সেই সাথে ভালভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া। ফলাফল অটোমেটিকালি চলে আসবে, আজ নয়ত কাল।’
নিজের পারফরমেন্সের উপরই সবটুকু নজর রাখতে চান দীপক হুদা। খুব বেশি ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করতে চান না তিনি। নিজের কাজে মনোযোগ রেখেই একাই আইরিশদের হারিয়ে দিলেন। নাম লিখিয়ে ফেললেন ‘এলিট’ তালিকায়। যেখানে তাঁর সঙ্গী রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল ও সুরেশ রাইনা। দীপকের আগে এরাই ভারতের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শতক করেছিলেন।
তাছাড়া ছেলে বেলার বন্ধু স্যাঞ্জু স্যামসনকে সাথে নিয়ে ভারতের হয়ে নতুন একটি রেকর্ডেও নিজের নামটি বসিয়ে নিলেন দীপক। ভারতের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রানের জুটি এখন স্যামসন ও দীপকের দখলে। এই দুইজন মিলে জড়ো করেছেন ১৭৬ রান মাত্র ৮৭ বল থেকে। তাঁরা পূর্বে রোহিত ও লোকেশ রাহুলের ১৬৫ রানের রেকর্ড ভেঙে ফেললেন।
সিরিজ সেরার পুরষ্কার বাগিয়ে নিয়ে দীপক হুদা যেন ভারতের নির্বাচকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিলেন। এখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে দীপক হুদার টিকিট কাটা হবে কি না এটা হয়ত সময়ই বলে দেবে।