বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে উত্থান

প্রতিটি বৈশ্বিক টুর্নামেন্টেই উত্থান ঘটে কোনো এক বিস্ময়বালকের। এক টুর্নামেন্টে দারুণ ফুটবল রাতারাতি প্রচারের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন অনেকেই। দলবদলের বাজারে হুড়োহুড়ি লেগে যায় বড় দলগুলোর মাঝে।

বিশেষ করে বিশ্বকাপ, ইউরো কিংবা কোপা আমেরিকার মত বড় আসরগুলোতে সব সময়ই ক্লাব ফুটবল কর্তৃপক্ষ নজর রাখে। জাতীয় দলের পারফরম্যান্সের সুবাদে অনেকেরই পরে জায়গা হয়ে যায় ক্লাব ফুটবলের কোনো পরাশক্তি দলে। আসুন দেখে নেয়া যাক সেসব ফুটবলারদের যাদের কিনা উত্থান হয়েছিল জাতীয় দলের হয়ে।

  • গিলবার্তো সিলভা (ব্রাজিল)

১৯৯৭ সালে ফুটবলটাই ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন গিলবার্তো সিলভা। পরে এক বন্ধুর পরামর্শে পুনরায় খেলতে শুরু করেন। তৎকালীন ব্রাজিল কোচ কার্লোস আলবার্তো পাহেইরা তাকে সেন্টারব্যাক থেকে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে খেলাতে শুরু করেন। অ্যাতলেটিকো মিনেইরোতে ভালো খেলার সুবাদে সুযোগ পান স্কলারির ২০০২ বিশ্বকাপগামী ব্রাজিল দলে।

২৩ সদস্যের দলে জায়গা পেলেও শুরুর একাদশে গিলবার্তোর সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল খুবই কম, কারণ ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার পজিশনে প্রথম পছন্দ ছিলেন এমারসন। এমনকি দলের অধিনায়কও ছিলেন তিনি কিন্তু গিলবার্তোর কপাল খুলে যায় ট্রেনিং সেশনে এমারসন ইনজুরিতে পড়ে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেলে।

সুযোগ পেয়ে এতটাই ভালো খেলেন তিনি, পুরো টুর্নামেন্টে এক মিনিটের জন্যও তাকে বেঞ্চে বসাননি কোচ স্কলারি। অনবদ্য ফুটবল খেলে ব্রাজিলকে জেতান বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের পর মোড় ঘুরে যায় তার ক্যারিয়ারের, পরবর্তীতে ছিলেন ইনভিন্সিবল আর্সেনালের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।

  • স্যামি খেদিরা (জার্মানি)

জার্মানির ছোট দল স্টুটগার্টের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন স্যামি খেদিরা। তার পজিশনের খেলোয়াড়েরা এমনিতেই ভালো খেলার পরও আলোচনায় থাকেন না। খেদিরাও ছিলেন না, সুযোগ পাননি ২০১০ বিশ্বকাপগামী জার্মানি দলে।

কিন্তু বিশ্বকাপের ঠিক আগমুহূর্তে মাইকেল বালাকের ইনজুরিতে কপাল খুলে যায় খেদিরার। বিশ্বকাপেও দুর্দান্ত খেলেছিলেন তিনি। সামনে মেসুত ওজিল এবং থমাস মুলারকে নিশ্চিন্তে খেলতে দিয়ে প্রতিপক্ষের সব আক্রমণ নস্যাৎ করেছেন একাই। বিশ্বকাপের পারফরমেন্স দেখে তাকে দলে ভেড়ায় স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদ, তাদের হয়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার পাশাপাশি পরের বিশ্বকাপেই জার্মানিকে দিয়েছেন চতুর্থ বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ।

  • রেনাতো সানচেজ (পর্তুগাল)

রেনাতো সানচেজের প্রিয় টুর্নামেন্ট বোধহয় ইউরো। বিগত দুই বছর বাজে পারফরম্যান্সের কারণে ছিলেন না জাতীয় দলের আশেপাশে, অথচ ইউরো ঘনিয়ে আসতেই স্বরূপে রেনাতো। এবারের ইউরোতে রোনালদোর পাশে পর্তুগালের সেরা তারকা রেনাতোই।

তবে তাঁর উত্থানটা হয়েছিল ঠিক আগের ইউরোতে। ২০১৬ ইউরোর আগে ১৭ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডারকে চিনতো না খোদ পর্তুগালের মানুষ। কিন্তু ইউরোতে সুযোগ পেয়ে দেখিয়ে দিলেন নিজের প্রতিভা।

রইলেন ‘বক্স টু বক্স’ মিডফিল্ডারের আদর্শ উদাহরণ, গোল করার পাশাপাশি সমান কার্যকরী ভূমিকা রাখলেন গোল ঠেকাতেও। দলকে ইউরোর শিরোপা জেতানোর পাশাপাশি নিজে জিতলেন সেরা তরুণ ফুটবলারের খেতাব।

  • হামেস রদ্রিগেজ (কলম্বিয়া)

২০১৪ বিশ্বকাপ শুরুর আগে কলম্বিয়ার সেরা খেলোয়াড় রাদামেল ফ্যালকাও ইনজুরির কারণে বিশ্বকাপ মিস করবেন- এমন সংবাদ যখন এলো তখন মনে হচ্ছিলো ১৬ বছর পর কলম্বিয়ার বিশ্বকাপে প্রত্যাবর্তনটা হয়তো সুখকর হবে না।

কিন্তু, ফ্যালকাওয়ের অনুপস্থিতিতে নিজের কাঁধে দায়িত্ব তুলে নেন হামেস রদ্রিগেজ।  মোনাকোর এই তরুণ ফুটবলার পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে অসাধারণ সব গোল করে জিতে নেন গোল্ডেন বুট।

তাঁর অসাধারণ ফুটবলে ভর করেই সেবার কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল কলম্বিয়া। বিশ্বকাপের পরেই ৭৫ মিলিয়ন ইউরোতে তাকে দলে ভেড়ায় রিয়াল মাদ্রিদ। এরপর খেলেছেন বায়ার্ন মিউনিখ, এভারটনের মতো দলে।

  • ওয়েইন রুনি (ইংল্যান্ড)

ইংলিশ ফুটবলের নতুন বিস্ময়বালক তকমা নিয়েই সেবার ২০০৪ সালের ইউরো খেলতে এসেছিলেন ওয়েইন রুনি। কিন্তু অনেকেই সন্দিহান ছিলেন এই তরুণকে নিয়ে। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচেই সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে গোল করে ইউরোর সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতার খেতাব নিজের করে নেন তিনি।

কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকারে পর্তুগালের কাছে হেরে ইংল্যান্ড বিদায় নিলেও রুনি মুগ্ধ করেছিলেন ফুটবলবিশ্বকে, করেছিলেন ৪ ম্যাচে ৪ গোল। যদিও পর্তুগালের বিপক্ষে ম্যাচটি শেষ করতে পারেননি, পায়ের পেশির ইনজুরিতে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। সবার ধারণা সেদিন শেষ পর্যন্ত রুনি মাঠে থাকলে ফলাফল অন্যরকম হতেও পারতো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link