যুব বিশ্বকাপ খেলার আগেই জাতীয় দলে খেলাটা সহজ নয়। আর সেই কঠিন কাজটা করতে পারা ক্রিকেটারের সংখ্যা নেহায়েৎই হাতে গোনা। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা আরো কম। তাঁদেরই একজন এনামুল হক জুনিয়র।
এনামুল হক জুনিয়রকে অবশ্য আরো অনেক ভাবেই পরিচয় করিয়ে দেওয়া যায়। বাংলাদেশের ক্রিকেটে প্রথম টেস্ট জয়ের নায়ক হিসেবে তার নামটি স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২২৫ রানের জয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছিলেন। প্রথম বাংলাদেশি বোলার হিসেবে টেস্টে এক ইনিংসে সাত উইকেট লাভ করেন।
স্পিন বিষে আফ্রিকার দেশটিকে কাবু করে সাদা পোশাকে প্রথম বিজয় কেতন উড়িয়েছিলেন সিলেটের এই বাঁ-হাতি স্পিনার। তবে, এই বাঁ-হাতি স্পিনার পরিচয়টাই ক্যারিয়ার জুড়ে নানা ভাবে তাঁকে বিপদে ফেলে, গোটা ক্যারিয়ার জুড়েই অবহেলার শিকার হন তিনি।
যখন জাতীয় দলে আসেন, তখন দলে ছিলেন দেশের ইতিহাসের সেরা স্পিনার মোহাম্মদ রফিক। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটে বাঁ-হাতি স্পিনারদের পথপ্রদর্শক। সাথে আব্দুর রাজ্জাক যোগ হন কিছুদিন পরেই, আরো আসেন সাকিব আল হাসান। মোহাম্মদ রফিকের সাথে মিলে রাজ্জাক আর সাকিব যখন আলোচনার ঝড় তুলছেন, মাঠে উইকেটের বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন – তখন আড়ালে চলে যেতে বাধ্য হন এনামুল হক জুনিয়র।
আসার যাওয়ার মধ্যে বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট খেলেছেন ১৫ টি, তার বিপরীতে ওয়ানডে খেলার সুযোগ পেয়েছেন মাত্র ১০টি। পনেরো টেস্টে উইকেট পেয়েছেন ৪৪টি, ইনিংসে পাঁচ উইকেট পেয়েছেন তিনবার। ১০ ওয়ানডেতে উইকেট সংখ্যা ১৪, ইকোনমি বেশ ভাল ৪.৩৯। এই পরিসংখ্যানে কোনো ভাবেই তাঁকে উড়িয়ে দেওয়া সম্ভব নয়, তারপরও তিনি বারবারই বঞ্চিত হয়েছেন, তাঁর সমমানের কিংবা সামান্য ভাল কেউ থাকার কারণে।
তবুও লড়াইটা কখনোই থামাননি এনামুল। ঘরোয়া ক্রিকেট, জাতীয় লিগ, ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ, বিসিএল কিংবা বিপিএল – যখন যেখানে সুযোগ পেয়েছেন সেখানে খেলেছেন, নিজেকে প্রমাণ করেছেন।
শুধু জাতীয় দল কিংবা কোনো মাইলফলকে চোখ রেখে নয়, স্রেফ উপভোগের জন্যই ক্রিকেটটা খেলে গেছেন, আজো খেলছেন। এখানেই যেন বাকিদের চেয়ে নিজেকে আলাদা করে ফেলেছেন তিনি। ক্রিকেটের প্রতি মমত্ববোধ, দায়বদ্ধতা কিংবা পেশাদারিত্ব অন্য যেকারো চেয়ে বেশি তাঁর।
সেই ২০০২ সালের ডিসেম্বরে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে অভিষেক এনামুল হক জুনিয়রের। প্রায় দুই দশক পর অবশেষে আজকে তিনি পেলেন প্রথম ৫ উইকেটের স্বাদ। ৩৫ বছর বয়সে এসে ক্যারিয়ারের অনন্য মাইলফলকে পৌঁছালেন তিনি। যেকোনো অর্জনের প্রথম স্বাদই অনন্য, আর এই বয়সে এমন পারফরম্যান্স যেন অর্জনের স্বাদে দিচ্ছে অন্যরকম আনন্দ।
রূপগঞ্জ টাইগার্সের হয়ে মোহামেডানের বিপক্ষে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে এনামুলের শিকার মোহাম্মদ হাফিজ, মাহমুদউল্লাহ, জাহিদুজ্জামান, ইয়াসিন আরাফাত ও নাজমুল অপু।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৫০০ উইকেট শিকারি বাংলাদেশের মাত্র দুই বোলারের একজন তিনি, সাদা পোশাকে ৩৫ বার নিয়েছেন ৫ উইকেট। ঘরোয়া ক্রিকেটের তিনি কিংবদন্তি।
তিনি অসাধারণ একজন ক্রিকেটার বা মানুষই কেবল নন, তাঁর ক্রিকেটের টেকনিক্যাল বোধও বেশ প্রখর। লড়াইটা কেবল মাঠেই নয়, মাঠের বাইরেও করছেন তিনি। দীর্ঘস্থায়ী হোক এনামুল হক জুনিয়রের এই লড়াই।