ইংলিশ ব্যাটিং বিপ্লব: টি-টোয়েন্টি কেস স্টাডি

২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ঘরের মাঠে, হাতছাড়া করতে নারাজ ইংল্যান্ড। সেবার তো নানান ঘটনার মঞ্চায়ন করে ওয়ানডে বিশ্বকাপটা নিজেদের করে নিয়েছিল ইংল্যান্ড। কত নাটকীয়তা শেষে ইংলিশরা জিতেছিল সেই কাঙ্ক্ষিত ট্রফি। তবে এরপর একটা মোক্ষম ধাক্কা খেয়েছে ইংল্যান্ড দল। পুরো একটা পঞ্জিকা বর্ষে তাঁরা টেস্ট হারের রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছে।

বাকি দুই ফরম্যাটেও যে খুব একটা ভাল ছিল এই সময়ের পারফরমেন্স সেটা বলবারও সুযোগ নেই। তবে হঠাৎ করেই যেন বদলে যেতে শুরু করে সবকিছু। একেবারে মুদ্রার উল্টো পিঠ হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হাজির ইংল্যান্ড। পেছনের কারিগর বেন্ডন ম্যাককালাম।

তিনি কি এক জাদুর টোটকা দিলেন তাঁর নতুন শিষ্যদের, মুহূর্তেই সবকিছু গেল বদলে। টেস্টে রীতিমত তাণ্ডব শুরু করে ইংল্যান্ড। একের পর এক রেকর্ড গড়া জয়। অপ্রত্যাশিত সব জয় তুলে নিয়ে যেন পুরো ক্রিকেট বিশ্বকে ভাবতে বাধ্য করল ঠিক কতটা বিধ্বংসী রুপ তাঁরা ধারণ করেছেন।

সে বিধ্বংসী রুপটার যেন কোন পরিবর্তন ঘটে না। ফরম্যাট বদলায়, তবুও ইংল্যান্ডের তাণ্ডবলীলা যেন ধ্রুব এক সত্য। এই বিধ্বংসী মনোভাব নিয়েই তাঁরা হাজির হবে চিরচেনা অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। সেখানে তাদের টার্গেট নিশ্চয়ই থাকবে আরও একটাবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের। আর সে লক্ষ্যেই যেন সবকিছু চুরমার করে দেওয়া ব্যাটিং অ্যাপ্রোচের দিকে নজর ‘থ্রি লায়ন্স’-দের।

ইয়ন মরগানের প্রস্থানের পর জশ বাটলারের কাঁধে এসে পড়েছে টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়কের দায়িত্ব। স্বভাবজাতভাবেই বাটলার বেশ মারমুখি একজন ব্যাটার। তিনি নিশ্চয়ই প্রত্যাশা করেন যে তাঁর দল ঠিক তাঁর মত করেই হবে মারমুখি। তেমন ইচ্ছের পালে যেন হাওয়া দিচ্ছেন অ্যালেক্স হেলস।

নানান কারণে জাতীয় দল থেকে দূরে ছিলেন হেলস। প্রায় বছর তিনেক। এরপর তিনি ফিরেছেন। স্বরুপেই ফিরেছেন। হাতখুলে মাঠের চারপাশে আগ্রাসী ব্যাটিংটাই উপহার দিয়ে যাচ্ছেন হেলস। কোন ধরণের ভয়ভীতি যেন ছুঁয়ে যেতে পারছে না তাঁকে। তিনি যেন মেনেই নিচ্ছেন এটা তাঁর দ্বিতীয় জন্ম অথবা শেষ সুযোগ।

খোদ অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অজিদের বিপক্ষেই অর্ধশতক তুলে নিয়েছেন হেলস। ঠিক তাঁর মত করেই যেন মারকুটে ইংলিশ দলে থাকা প্রতিটা ব্যাটার। তাদের ধ্যান-ধারণার পুরোটা জুড়েই রয়েছে মারকাটারি ব্যাটিং। তবে তা অবশ্যই নিয়ন্ত্রিত।

বর্তমান সময়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে অধিক আলোচিত ‘ইম্প্যাক্ট’। ইংল্যান্ডের অধিকাংশ ব্যাটাররাই সেই ইম্প্যাক্টফুল ইনিংস খেলবার প্রয়াস চালাচ্ছেন। কম বল খেলে দলের জন্যের রান সংগ্রহ করবার মানসিকতা স্পষ্ট। অন্যদিকে ব্যাটারদের মানসিকতায় ক্ষুধা বড্ড বেশি। তাঁরা যেন স্বল্প পুঁজিতে কখনোই সন্তুষ্ট নয়।

টেস্ট ক্রিকেটের সংজ্ঞা প্রায় বদলেই দিয়েছে ইংল্যান্ড। তাঁরা গোটা বিশ্বকে যেন বিশ্বাস করাতে চায় চতুর্থ ইনিংস কিংবা পঞ্চম দিনে ঘাবড়ে যাবার কিছু নেই। চাইলেই শেষদিনেও টেস্ট নিজেদের করে নেওয়া যায়। তেমন আগ্রাসী মনোভাবের উপস্থিতি বা বিস্তারও তাঁরা ঘটাতে চাইছেন বাকি থাকা দুই ফরম্যাটে। তবে টি-টোয়েন্টিতে আগ্রাসনটা টের পাওয়া যাচ্ছে।

তাঁরা যেন প্রতিটা ম্যাচের আগেই মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়েই নামেন যে-  আজ অন্তত ছাড়িয়ে যেতে হবে ২০০ রানের গণ্ডি। সবদিন পারবেন তেমনটাও নয়। তবে ইংল্যান্ডের ব্যাটাররা প্রায় অধিকাংশ সময়েই নিজেদের দলীয় টোটালটা নিয়ে যাচ্ছেন ২০০ রানের উপরে। আর এতে করে বোলারদের জন্য ম্যাচ জয়ে ভূমিকা রাখা হয়ে যাচ্ছে আরও সহজ।

ইংল্যান্ড দলের এই আগ্রাসী, বিধ্বংসী ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ সত্যিকার অর্থেই বেশ প্রশংসনীয়। এমন আগ্রাসন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চেও অব্যাহত রাখতে পারলে অন্তত ২০১০ সালের পর আবাও ইংলিশদের হাতে শোভা পেতে পারে টি-টিয়োন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা। সেটাই নিশ্চয়ই ‘আলটিমেট গোল’। আর তাদের এই আগ্রাসন অবশ্যই বিনোদনের খোরাক মেটাবে, আনন্দে ভাসাবে ক্রিকেট সমর্থকদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link