প্রতিবার আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আসলেই ইংলিশ মিডিয়া থেকে একটা কথাই বারবার উঠে আসে, এবারে শিরোপা ঘরে ফিরছে। ইংল্যান্ডকে ফুটবলের আতুড়ঘর ধরা বিশ্ব অবশ্য ইংল্যান্ডের এই দল নিয়ে বেশ আশাবাদী।
ইংলিশ মিডিয়া তো বরাবরই দুই ধাপ এগিয়ে। এই কোচের অধীনেই সর্বশেষ বিশ্বকাপের সেমি ফাইনাল খেলেছিল ইংল্যান্ড। তাই এই ইউরোতে তাদের স্বপ্নটাও বেশ বড়।
গোলরক্ষক
ডিন হেন্ডারসন (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), জর্ডান পিকফোর্ড (এভারটন), স্যাম জনস্টন (ওয়েস্ট ব্রমউইচ অ্যালবিওন)
ডিফেন্ডার
হ্যারি ম্যাগুয়ার (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), জন স্টোনস (ম্যানচেস্টার সিটি), কনর কোডি (উলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারার্স), টায়রন মিংস (অ্যাস্টন ভিলা), বেন হোয়াইট (ব্রাইটন) কাইল ওয়াকার (ম্যানচেস্টার সিটি), কিয়েরান ট্রিপিয়ের (অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ), রিস জেমস (চেলসি) বেন চিলওয়েল (চেলসি), লুক শ (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড)
মিডফিল্ডার
জর্ডান হেন্ডারসন (লিভারপুল), ডেকলান রাইস (ওয়েস্ট হাম ইউনাইটেড), ক্যালভিন ফিলিপস (লিডস ইউনাইটেড), জুড বেলিংহাম (বরুসিয়া ডর্টমুন্ড), মেসন মাউন্ট (চেলসি)
ফরোয়ার্ড
রহিম স্টার্লিং (ম্যানচেস্টার সিটি), ফিল ফোডেন (ম্যানচেস্টার সিটি), জ্যাক গ্রিলিশ (অ্যাস্টন ভিলা), জ্যাডন সানচো (বরুসিয়া ডর্টমুন্ড), মার্কাস রাশফোর্ড (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), বুকায়ো সাকা (আর্সেনাল), হ্যারি কেইন (টটেনহাম হটস্পার), ডমিনিক কালভার্ট-লুইন (এভারটন)
কোচ: গ্যারেথ সাউথগেট
অধিনায়ক: হ্যারি কেইন
- শক্তিমত্তা
ইংল্যান্ড ইতিহাসের সর্বকালের সেরা দল বলা হয় একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে আসা দলটাকে। ২০০২ থেকে ২০১০; ইংল্যান্ডের প্রতিটি পজিশনের ছিল সেরা তারকাদের ভীড়। অথচ সেই ভিড়েই নিজেদের হারিয়ে ফেলেছিল তারা। বেকহ্যাম, ল্যাম্পার্ড, জেরার্ড, রুনিদের নিয়ে গড়া দল কিছুই করতে পারেনি।
ইংল্যান্ডের স্বর্ণালি সেই দলের সাথে এই দলেরও বেশ মিল আছে। প্রতিভার দিক দিয়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই সেই দল থেকে। প্রতিটি পজিশোনে ট্যালেন্টের চড়াছড়ি। এক বছর ইউরো পেছানোতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে তারাই। ফোডেন, মাউন্ট, ডিন হেন্ডারসন, গ্রিলিশ, সাকা, বেলিংহামের মতন তারকারা এই মৌসুমেই নিজেদের জাত চিনিয়েছেন।
বলতে গেলে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় শক্তিমত্তাই হলো এই তারুণ্যনির্ভর দল। দলের প্রতিটি পজিশনে লড়াই করার মতন খেলোয়াড় রয়েছেন। রয়েছেন জর্ডান হেন্ডারসনের মতন অভিজ্ঞ সেনানী অধিনাতক হিসেবে। তবে সবচেয়ে বড় যে বিষয়টা আগের স্বর্ণালি দলকে উপরে উঠতে দেয়নি, সেটা এবার কিছুটা হলেও কম।
ইংলিশ দলগুলোর মধ্যে সবসময়ই একটা দা-কুমড়ো সম্পর্ক। দলের সেই সম্পর্কটা ইংল্যান্ড দলে খেলার মধ্যেও চলে আসে। স্পেনে ক্যাসিয়াস-পুয়োল কিংবা রামোস-পিকে যেভাবে রাইভাল হয়েও স্বাচ্ছন্দ্যে খেলেছেন, সেটা কখনই করতে পারেননি বেকহ্যাম-ল্যাম্পার্ড-জেরার্ডরা।
কিন্তু এই দলটার মধ্যে তা নেই। প্রতিটি খেলোয়াড়ই নিজেদের ক্লাব সত্ত্বাকে বাইরে রেখে এসে এরপর ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে দেন। যে কারণে দলটার সমন্বয়ও অন্যরকম।
- দুর্বলতা
কিছু পজিশনে কাকে রেখে কাকে খেলাবেন ভাবতে যেমন সাউথগেটের কপালে চিন্তার বলিরেখা চলে আসে, তেমনি কিছু পজিশনে কে খেলবেন ভাবতেই দিন পার হয়ে যায়। এতদিন পরে এসেও গোলকিপার পজিশন ঠিক করতে পারেননি তিনি। পিকফোর্ড ছিলেন মন্দের ভালো। অন্যদিকে ডিন হেন্ডারসনের অভিজ্ঞতার অভাব। দুয়ে মিলে বেশ চিন্তাতেই আছেন তিনি।
সেই সাথে মাঝমাঠে খেলোয়াড় নেওয়ার ব্যাপারে একটু ইতস্তত বোধ করেছেন তিনি। ফলে মাঝমাঠ নিয়ন্ত্রন করতে পারেন এমন খেলোয়াড় নেই বললেই চলে। জর্ডান হেন্ডারসন ফিরেছেন অনেকদিন পরে ইনজুরি থেকে।
তাঁকেই সামলাতে হবে মিডফিল্ড, যেটা ব্যাকফায়ার করতে পারে। এমনকি ডিফেন্সেও তাদের প্রথম কয়েকটা ম্যাচ তাকে খেলতে হবে হ্যারি ম্যাগুইয়ারকে ছাড়া। ইংল্যান্ডের জন্য দু;সংবাদ এটিও।
তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা কোচ সাউথগেট নিজেই। কোচ হিসেবে ট্যাক্টিক্যালি খুব একটা ফ্লুইড নন তিনি। যে কারণে বিশ্বকাপেও ভুগতে হয়েছিল ইংল্যান্ডকে। প্ল্যান ‘বি’ বলতে তেমন কিছু নেই তার। যেটি ব্যাকফায়ার করতে পারে ইংল্যান্ডকে।
- সম্ভাব্য একাদশ
আক্রমণভাগে এক হ্যারি কেইন ছাড়া কারোর জায়গাই নিশ্চিত নয়। দুইপাশে খেলার মতন খেলোয়াড়ের অভাব নেই। গ্রিলিশ, সাকা, রাশফোর্ড, সানচো, স্টার্লিং সবাই লড়বেন দুই পজিশনের জন্য। গোলরক্ষক হিসেবে পিকফোর্ড আর হেন্ডারসনের মধ্যে একটু দোটানা থাকবে। হ্যারি ম্যাগুইয়ার ও জর্ডান হেন্ডারসনের ফেরত আসার উপর নির্ভর করছে কে খেলবেন তাদের পজিশনে।
প্রতিপক্ষ ও ম্যাচ: (বাংলাদেশ সময়)
ক্রোয়েশিয়া, ১৩ জুন, সন্ধ্যা ৭টা
স্কটল্যান্ড, ১৯ জুন, রাত ১টা
চেক প্রজাতন্ত্র, ২৩ জুন, রাত ১টা
(রাত ১২টার পর পরবর্তী দিন ধরা হয়েছে)
ইংল্যান্ডের সামনে জেতার মত এত বড় সুযোগ আগেও এসেছে। কাজে লাগাতে পারেনি তারা কোনোবারই। অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে নবিশ এই দলের ভরসা তরুণদের উপরে। তারা ভালোকিছু করে দেখাতে পারলে সেমি খেলাটা অসম্ভব কিছু হবে না।