তিনি ঠিক জাতীয় দলে আসার আগেই হৈচৈ ফেলে দেয়া প্রচন্ড সম্ভাবনাময় কোন ক্রিকেটার না। একবার ব্যাটিং দেখেই তাঁর প্রেমে পড়ে যাবেন ঠিক এমনও না। তবুও পরিশ্রম, ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা তাঁকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। যদিও বাংলাদেশের ক্রিকেট এই পরিশ্রমের মূল্য দিয়েছে কমই।
প্রয়োজন হলে ব্যবহার করেছে আবার কখনো ছুড়েও ফেলেছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তরাও কখনো মোহাম্মদ মিঠুনকে আপন করে নেননি। তবে মিঠুন আপন করে নিয়েছিলেন ক্রিকেটটাকে, তাঁর প্রথম ভালোবাসাকে।
ক্রিকেটের জন্য যেকোন কিছু করতেই তিনি প্রস্তুত। বাংলাদেশ দলের জন্যও তাঁর ভালোবাসাটা অবিরাম। যখন যে কন্ডিশনে, যে পজিশনে প্রয়োজন হয়েছে মিঠুন তৈরি ছিলেন। কেউ ইনজুরিতে পড়লো, কেউ অফ ফর্মে, কোনো একটা পজিশন খালি এই সব সমস্যারই সহজ সমাধান ছিলেন মিঠুন। সেটা যে পজিশনই হোক!
ব্যাটিংটা দেখে প্রেমে পড়ার মত না হলেও সব কোচই তাঁকে মোটামুটি পছন্দ করতেন টেকনিকের আর পরিশ্রমের জন্য। ফলে কখনো কোথায় সুযোগ থাকলেই মিঠুনকে ডেকে পাঠানো হতো। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপে কঠিন কন্ডিশনে গিয়ে পারফর্ম করে এসেছিলেন। এরপর থেকেই চান্দিকা হাথুরুসিংহের ভরসার পাত্র হয়ে উঠেছিলেন।
মোহাম্মদ মিঠুন তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় সুযোগটা পেয়েছেন ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে। সেই বিশ্বকাপের প্রথম থেকেই তিনি পরিকল্পনাতে ছিলেন। প্রথম তিন ম্যাচ খেললেও সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি। সেই দোষের শাস্তিও মিঠুন কম পাননি। যতটুকু না অপরাধ ছিল তারচেয়ে অনেক বেশি ট্রলের শিকার হয়েছেন সেই সময়।
তবে মিঠুন হাল ছেড়ে দেননি। প্রথম ভালোবাসা কী আর এত সহজে ভোলা যায়। ফলে তিনি তাঁর কাজটা করে গিয়েছেন, ক্রিকেটটা খেলে গিয়েছেন। এরপরের বাংলাদেশের প্রয়োজনে বিভিন্ন সময়েই তাঁর ডাক পড়েছে।
মিঠুনকে যখন, যেখানে প্রয়োজন সেখানেই ব্যবহার করার কথা বলছিলাম। তাঁর সর্বশেষ উদাহরণটি দেয়া যাক। গতবছর শেষের দিকের ঘটনা। টেস্ট ক্রিকেটে তখন কোনভাবেই একটা ওপেনিং জুটি পাওয়া যাচ্ছেনা। সাদমান ইসলাম, সাইফ হাসান সবাই হতাস হতাশ করে চলেছেন।
তখন বাংলাদেশের হেড কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো একটা জুয়া খেলতে চাইলেন। খুব স্বাভাবিকভাবেই তিনি জুয়াটা খেলেছেন মিঠুনকে নিয়েই।
যতটুকু জানা যায়, এই কোচ মিঠুনকে হঠাত একদিন বলে বসেছিলেন,’ মিঠুন, তোমাকে আমার প্রয়োজন। তুমি ওপেন করবে?’ মিঠুন মোটামুটি আকাশ থেকেই পড়েছিলেন। কেননা ক্যারিয়ারে কখনোই তিনি নতুন বল খেলেননি। তবুও মিঠুন ভয় পেলেন না। বলছিলাম না, ছেলেটা ক্রিকেটের জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত?
ক্যারিয়ারের এতটা সময় পার করে ফেলার পর মিঠুন নতুন এই চ্যালেঞ্জটা নিলেন। প্রথমবারের মত বিসিএলে ওপেন করতে নেমে গেলেন। আর নেমেই রীতিমত হইচই ফেলে দিয়েছিলেন। প্রথমত এই আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকারী ছিলেন তিনি। দুইটা সেঞ্চুরি সহ মোট ৪৬৮ রান করেন তিনি। এরপর ওপেন করতে নেমে রীতিমত রেকর্ড করে ফেলেছিলেন। মিজানুর রহমানকে সাথে নিয়ে গড়েছিলেন ৩২৭ রানের ওপেনিং জুটি।
তবে এরপর তামিম ইকবাল ফিরেছেন কিংবা মাহমুদুল হাসান জয়দের মত সম্ভাবনাময় ক্রিকেটাররা এসেছেন। ফলে মিঠুনকে আর প্রয়োজন মনে করা হয়নি। তাঁকে ছুড়ে ফেলা হয়েছে। অবশ্য বিসিএলে অমন তান্ডবের একটা পুরষ্কার তিনি পেয়েছিলেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে গ্যারি কারস্টেনের একাডেমিতে টেস্ট ক্রিকেটারদের স্কিল ক্যাম্পের ব্যবস্থা করেছিল বিসিবি। স্কোয়াডে না থাকলেও সেই ক্যাম্পে মিঠুনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
শোনা যায় ওই ক্যাম্পে মিঠুনের ব্যাটিং টেকনিক মনে ধরেছিল জেমি সিডন্সের। তাই মিঠুনকে দলে রাখার জন্য বিসিবিতে একটা লিখিত রিপোর্টও পাঠিয়েছিলেন তিনি। তবে সেই ফাইল হয়তো কখনো খুলেই দেখা হয়নি। মিঠুনেরও আর জাতীয় দলে ফেরা হয়নি।
হয়তো তিন,চার নাম্বার পজিশনের এই জটিল সমস্যা সমাধানেও আবার মিঠুনের কাছেই যাবে বাংলাদেশ। তিনি অবশ্য এতকিছু ভাবেননা। আপাতত বাংলাদেশ টাইগার্সের ক্যাম্পই তাঁর সব। নিজেকে প্রস্তুত রাখছেন যেকোন পরিস্থিতির জন্য। কেননা ক্রাইসিস মোমেন্টেই মিঠুনদের ডাক পড়ে। নাকি মিঠুনদের দিয়েই সব ধামাচাপা দেওয়া সহজ হয়!