ইউরেকা ইউরো

ফুটবলের অন্যতম সেরা টুর্নামেন্ট ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ, যার শুরুটা হয়েছিল ১৯৬০ সালে। অনেকে আবার বলেন যে এই টুর্নামেন্ট নাকি বিশ্বকাপের চেয়েও বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। কারণ, দলগুলোর মধ্যে শক্তিমত্তার পার্থক্য খুবই কম।

ফুটবলের অন্যতম সেরা টুর্নামেন্ট ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ, যার শুরুটা হয়েছিল ১৯৬০ সালে। অনেকে আবার বলেন যে এই টুর্নামেন্ট নাকি বিশ্বকাপের চেয়েও বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। কারণ, দলগুলোর মধ্যে শক্তিমত্তার পার্থক্য খুবই কম

এরকম একটা টুর্নামেন্ট করার ধারণা দেন ফ্রান্স ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি হেনরি দালাউনে। কিন্তু তার জীবদ্দশায় এই টুর্নামেন্টের আয়োজন সম্ভব হয়নি। তার মৃত্যুর পর(১৯৫৮), তার নামেই প্রথম টুর্নামেন্টটি চালু হয়েছিল যা আজকের ইউরো নামে পরিচিত। তবে টুর্নামেন্টটির আসল নাম ছিল ‘ইউরোপিয়ান নেশনস কাপ’।

প্রথম টুর্নামেন্টে সোভিয়েত ইউনিয়ন ২-১ গোলে যুগোস্লাভিয়াকে হারিয়ে দেয় প্যারিসে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে দুটো দেশই পরবরতীকালে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। এই টুর্নামেন্টে স্পেন কোয়াটার ফাইনালে সোভিয়েতের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলা থেকে বিরত থাকে রাজনৈতিক কারণে। প্রথম ও দ্বিতীয় টুর্নামেন্টে পশ্চিম জার্মানি যোগদান করেনি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে প্রিলিমিনারি রাউন্ড ও ফাইনাল টুর্নামেন্ট আলাদাভাবে হত।

যাইহোক,এই টুর্নামেন্ট নিয়ে কিছু জানা অজানা তথ্য দেখে নেওয়া যাক।

১. ১৯৬৮ সালের (তৃতীয়) ফাইনালে আয়োজক ইতালি ও যুগোস্লাভিয়ারর মধ্যে ম্যাচ ড্র হয় ১-১ ব্যবধানে। ম্যাচ আবার খেলা হয় (Replay), যেখানে ইতালি জিতে ২-০ ব্যবধান। তবে আয়োজক হিসেবে প্রথম টুর্নামেন্ট জয়লাভ করে স্পেন ১৯৬৪ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নকে(২-১) হারিয়ে।

২. এই টুর্নামেন্টে কেবলমাত্র একটা ম্যাচই টসের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। ১৯৬৮ এর সেমিফাইনালে টসে ইতালি হারায় সোভিয়েত ইউনিয়নকে। নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ ০-০ তে ড্র হয়েছিল। আসলে তখন পেনাল্টি শ্যুট আউটের নিয়ম চালু হয়নি তাই এক্সট্রা টাইম,রিপ্লে বা টসই ছিল উপায় মাত্র। পেনাল্টি শ্যুট আউট চালু হয় ১৯৭০ থেকে।

৩. ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত আসল টুর্নামেন্ট ৪ টি দলের হ’ত। ১৯৮০ সাল থেকে ৯২ সাল পর্যন্ত টুর্নামেন্ট ৮ টি দলের ছিল। ১৯৯৬ থেকে ২০১২ পর্যন্ত এই টুর্নামেন্টের দল সংখ্যা ছিল ১৬টি। ২০১৬ থেকে টিমের সংখ্যা হয় ২৪।

৪. টুর্নামেন্টটি সবচেয়ে বেশি ৩ বার করে জিতেছে স্পেন ও জার্মানি। দু বার ফ্রান্স।

৫. একমাত্র দেশ হিসেবে স্পেন পরপর দু’বার (২০০৮,১২) এই টুর্নামেন্ট জিতেছে। শুধু তাই নয় স্পেন এই দু’বার জেতার মাঝে বিশ্বকাপও জিতেছে।

৬. পরপর বিশ্বকাপ ও ইউরো জেতার দেশগুলো হ’ল ফ্রান্স (১৯৯৮,২০০০) ও স্পেন(( ২০১০, (০৮ ও ১২))।

৭. সোভিয়েত ইউনিয়ন, চেকোস্লোভাকিয়া, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক ও পর্তুগাল যারা ইউরো জিতেছে কিন্তু বিশ্বকাপ জেতেনি।

৮. একমাত্র আয়োজক দেশ হিসেবে পর্তুগাল ফাইনালে(২০০৪) উঠেও জিততে পারেনি। এর আগে স্পেন (১৯৬৪), ইতালি (১৯৬৮) ও ফ্রান্স (১৯৮৪) যা আগে করে দেখিয়েছিল।

৯. ১৯৭৬ ফাইনাল একমাত্র যা পেনাল্টি শ্যুট আউটে নিষ্পত্তি হয়। এই ম্যাচে চেকোশ্লোভাকিয়া পশ্চিম জার্মানিকে হারায় ২-২ গোলে ড্র হওয়ার পর ৫-৩ ব্যবধানে।

১০. ১৯৯৬ ও ২০০০ এর ফাইনালের নিষ্পত্তি হয় গোল্ডেন গোলে।

১১. সবচেয়ে বেশি ক্লিনশিটের (৯) এবং সবচেয়ে বেশি মিনিট (৫০৯) গোল না খাওয়ার রেকর্ডও ক্যাসিয়াসের দখলে। সবচেয়ে বেশি(২১) গোল খেয়েছে পিতর চেক। একটা টুর্নামেন্টে(২০০০) সবচেয়ে বেশি(১৩) গোল খেয়েছে যুগোস্লাভিয়ার ইভিকা কার্ল

১২. টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বেশি গোল ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর (১৪)।

১৩. একটি টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি গোল (৯) মিশেল প্লাতিনির (১৯৮৪), এরপরই গ্রিজম্যানের (৬)। ৫ টির বেশি গোল এই ২জন ফরাসিই করতে পেরেছে।

১৪. টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি (২) হ্যাটট্রিক প্লাতিনির দখলে তাও একটা টুর্নামেন্টেই।

১৫. টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি গোল দেওয়া(৭৮) ও গোল খাওয়ার(৫৫) রেকর্ড দুইই জার্মানির দখলে।

১৬. সবচেয়ে কম বয়সী গোল স্কোরার রেনারে স্যাঞ্চেজ (১৮ বছর ৩১৭ দিন,২০১৬ পর্তুগাল বনাম পোল্যান্ড)।
সবচেয়ে কম বয়সে হ্যাটট্রিক করেন পিত্রো অ্যানাস্তসি ( ২০ বছর ৬৪ দিন, ১৯৬৮, ইতালি বনাম যুগোশ্লোভাকিয়া)

১৭. ১টা টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি(১৪টি) গোল ফ্রান্সের দখলে (১৯৮৪)। এছাড়াও ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ড (২০০০), ফ্রান্স(২০১৬) ১৩ টি গোল করে। ২০০৮ ও ২০১২ সালে স্পেন ১২ টি করে গোল করে।

১৮. টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি(৫৩) ম্যাচ খেলা ও বেশি(২৭) ম্যাচ জয়ের রেকর্ডও জার্মানির দখলে।

১৯. টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি(১৬) হারের রেকর্ড ডেনমার্ক ও রাশিয়ার দখলে।

২০. টুর্নামেন্টের দ্রুততম(৬৭ সেকেন্ড) গোলের রেকর্ড রাশিয়ার দিমিত্রি কিরিচেঙ্কোর (বনাম গ্রিস, ২০০৪) দখলে।

২১. ১৯৯৬ সালে এনরিকো কিয়েসা ইতালির হয়ে চেক প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে গোল করে, ২০২০ তে তার ছেলে ফেডরিকো কিয়েসা অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে গোল করে। পিতাপুত্রের এই যোগের রেকর্ড শুধুমাত্র এদেরই দখলে।

২২. পিটার স্কিমিচেল (১৯৯২) ও ক্যাসপার স্কিমিচেল(২০২০) একমাত্র গোলকিপার পিতাপুত্র যারা ইউরো খেলেছেন।

২৩. এবারেই (২০২০) প্রথম ইউরোতে ভিএআর চালু হয়েছে।

২৪. টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি (৬) ম্যাচ সেরার রেকর্ড আন্দ্রে ইনিয়েস্তা (২০০৮,২০১২,২০১৬) ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর (২০০৮,২০১২,২০১৬,২০২০) দখলে। এরপরই(৪) আছে জিনেদিন জিদান (২০০০, ২০০৪) ও আন্দ্রে পিরলো(২০০৮,২০১২)।

২৫. ১৯৯৬ সাল থেকে অফিসিয়ালি গোল্ডেন বল বা প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট পুরষ্কার দেওয়ার পর একমাত্র গ্রিজম্যানই (২০১৬) একসঙ্গে গোল্ডেন বল ও গোল্ডেন বুট পায়। এর আগে আন অফিসিয়ালি একসঙ্গে দুটো পায় মিশেল প্লাতিনি(১৯৮৪) ও মার্কো ভ্যান বাস্তেন (১৯৮৮)।

২৬. গ্রিজম্যান একমাত্র বিজিত দলের হয়ে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট জিতেছে।

২৭. একমাত্র প্লেয়ার যে বিশ্বকাপ(২০০৬) ও ইউরোতে(২০০০) গোল্ডেন বল জিতেছে সে হ’ল জিনেদিন জিদান।

২৮. একমাত্র ক্যাপ্টেন (২০০০) ও কোচ (২০১৬) হিসেবে ফাইনাল খেলার রেকর্ড দিদিয়ের দেশঁ-এর দখলে। এর মধ্যে ক্যাপ্টেন ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপও জিতেছে৩১ দেশঁ।

২৯. এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি(৯) গোল ফ্রান্স(৪-৫) যুগোস্লাভিয়া ম্যাচে(১৯৬০)। এরপরই(৮) আছে স্পেন -ক্রোয়েশিয়া (৫-৩)ম্যাচ (২০২০)।

৩০. ২০২০ ইউরোর একমাত্র ইউরোপের বাইরের রেফারি ফার্নান্দো আন্দ্রে রাপাল্লিনি (আর্জেন্টিনা)।

৩১. সবচেয়ে বেশি গোলে জয় – ৫-০: ফ্রান্স – বেলজিয়াম (১৯৮৪), ডেনমার্ক – যুগোস্লাভিয়া (১৯৮৪), সুইডেন: বুলগেরিয়া(২০০৪), স্পেন – স্লোভাকিয়া(২০২০) ও ৬-১: নেদারল্যান্ড – যুগোস্লাভিয়া (২০০০)

(বি.দ্র. মহামারীর কারণে এবারের ইউরো ২০২১ এ হলেও এটা ইউরো-২০২০ বলেই বিবেচিত)

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...