অর্জনশূন্য অভিজ্ঞতা অর্থহীন

আকিব ইলিয়াসের বলে তখন ফিরে যাচ্ছেন সাকিব আল হাসান। যে থ্রোয়ে সাকিবকে মাঠ ছাড়তে হল, সেই থ্রো স্ট্যাম্পে লাগা তিনি দেখেছেন স্ট্যাম্পের খানিকটা দূর থেকে। ডাইভ দিয়ে নিজের মহাগুরুত্বপূর্ণ উইকেট বাঁচাতে সাকিব আল হাসানকে এতটুকুও আগ্রহী মনে হয়নি। তবে সাকিব আল হাসানের এই চিত্রটাকে আপনি চাইলে পুরো বাংলাদেশ দলের প্রতীকি চিত্র বলেও ধরে নিতে পারেন।

শরীরি ভাষা, মাঠের ইগো, আক্রমণাত্নক মনোভাব কিংবা ন্যূনতম একটা ম্যাচ জিততে যতটুকু ইনটেন্ট লাগে- বাংলাদেশ দলের মধ্যে দেখা গেছে তাঁর ছিটেফোটাই। সাকিব আল হাসান ন্যূনতম ইনটেন্ট না দেখিয়ে যেমন স্ট্যাম্পের খানিক দূর থেকে নিজের উইকেট হারাতে দেখেছেন, বাংলাদেশও দেখেছে কিভাবে একটা ম্যাচ আরেকটু হলে চলে যাচ্ছিল তাঁদের হাতের বাইরে!

বাংলাদেশ দল অবশ্য তাতে থোড়াই কেয়ার করে!

সাকিব আল হাসান তাঁর মত থাক, আমরা বরং একটু ফাইয়াজ বাটের কাছ থেকে ঘুরে আসি। সাড়ে সাত ইকোনমিতে বল করে ওমানি এই বোলার পেয়েছেন তিন তিনটে উইকেট। এই তিন উইকেটের মধ্যে আবার মেহেদী হাসানের উইকেটটা তিনি নিয়েছেন নান্দনিক ফলথ্রু ক্যাচ। এই অসাধারণ ক্যাচ নিয়েই ফাইয়াজ বাটকে প্রশ্ন করা হচ্ছিল প্রথম ইনিংসের পর অল্প সময়ের বিরতিতে।

ফাইয়াজ বাট খুব ভাল ইংরেজি পারেন না। ভাঙা ভাঙা শব্দে তিনি যা বলেছিলেন তা হল, ‘আমি প্রথমে দুটো বল একই লেংথে করেছিলাম। তবে তৃতীয় বলটাও ঐ লেংথে করার সময় বলের গতি আগের চাইতে পরিবর্তন করে দিই। ব্যাটসম্যান সেটারই টোপ গিলেছে।’

অখ্যাত ফাইয়াজ বাট যতটুকু পরিকল্পনা নিয়ে বল করেছেন, এতটুকু পরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশি কোন বোলার কি বল করেন। তাসকিন আহমেদের কথাই ধরা যাক। এই টুর্নামেন্টে গতির ঝড় তুলছেন তিনি। তবে গতিতে পারলে কি হবে, ওভারের ছয়টা বলের মধ্যে তাঁর বলের লাইন আর লেংথ ঠিক থাকে গড়ে দুটো বলের। তাসকিন আহমেদের যে গতি আছে, পেস বোলারদের জন্যে এমন গতি থাকা সৌভাগ্যতুল্য। তবে তাসকিনকে তো শুধু গতি তুললেই হবেনা, পেস ভ্যারিয়েশনকে ব্যাবহার করতে হবে। ১৪০+ গতি দিয়ে কাটারকে আরো কার্যকর করতে হবে।

তবে এতটুকু পরিকল্পনা তাসকিন করলে তো!

তাসকিন পরিকল্পনা করেননি। খুব সম্ভবত পরিকল্পনা না করার এই ব্যাপারটা তিনি শিখেছেন নিজের দলের অধিনায়কের কাছ থেকেই। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ নিজের ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে কিভাবে পরিকল্পনা সাজান সেটা সম্ভবত তিনি নিজেও জানেন না। প্রথম ম্যাচের কথাই ধরা যাক।  বিশ্বকাপ শুরুর আগে পুরো সময়টা তিনি ওপেনিংয়ে খেলিয়েছেন নাঈম শেখকে। অথচ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই তিনি নামিয়ে দিয়েছেন সৌম্য সরকারকে।

সৌম্য সরকারকে নামানোর আগে প্রথম ম্যাচের শুরুতে অবশ্য প্রেস কনফারেন্সে জোরেশোরেই তিনি বলেছিলেন, ‘ওপেনিং বা তিন নংয়ের পরিকল্পনায় আছেন সৌম্য।’

রিয়াদ সম্ভবত ‘পরিকল্পনা’ শব্দটার অর্থ জানেন না। আমি যদি ধরেও নিই, বিশ্বকাপের আগেই হুট করে আদর করে সাজানো নাঈম শেখের বদলে রিয়াদের পরিকল্পনায় ঢুকে গেছেন সৌম্য, তাহলে দ্বিতীয় ম্যাচেই সৌম্যকে বসিয়ে দেওয়ার কি ব্যাখ্যা থাকতে পারে রিয়াদের কাছে? এভাবে ‘উঠ ছেড়ি তোর বিয়ে’ কিংবা ‘উবু দশ বিশ ত্রিশ …’  করে যেকোন একজনকে ওপেনিংয়ে পাঠিয়ে দিলে তো হবেনা, সেটার পেছনে একটা ব্যাখ্যা তো থাকতে হবে।

ওপেনিং ছেড়ে একটু পরের পজিশনে ফেরা যাক। নাঈম আর লিটন যখন রীতিমত ধুকছে, তখন ক্যামেরায় দেখা গেল ব্যাট প্যাড পরে বসে আছেন সাকিব আল হাসান। অনুমিত ভাবেই তিনি তিন নম্বরে নামবেন ভাবা হচ্ছিল এমনটাই। অথচ হুট করেই নেমে গেলেন মেহেদী হাসান।

টি-টোয়েন্টিতে তিন নম্বরের মত মহাগুরুত্বপূর্ণ একটা জায়গাতে মেহেদী হাসান নামার জন্যে প্রস্তুত ছিলেন কিনা কিংবা কখনও এমন পজিশনের জন্যে মেহেদীকে প্রস্তুত করা হয়েছিল কিনা সেই ব্যাখ্যা কি রিয়াদের কাছে আছে?  হ্যাঁ, একটা ব্যাখ্যা হতে পারে যে – মেহেদী পিঞ্চ হিটার হিসেবে নামানো হয়েছে। তবে, সেই পরিকল্পনাও ভেস্তে গেঠে বাংলাদেশের।

আবার এই যে রিয়াদ আর মুশফিক হুট করেই স্লগ ওভারে নেমে গেলেন এরই বা কি ব্যাখ্যা থাকতে পারে রিয়াদের কাছে? রিয়াদ কিংবা মুশফিক কেউই কি স্লগার? কিংবা মুশফিক-রিয়াদের পারফরম্যান্স ফর্ম কি এতটাও ভাল যাচ্ছিল যে তাঁরা স্লগ ওভারে ব্যাট করতে নেমে যাবেন? বা, স্লগার হয়ে  নামার পুঁজি হিসেবে দুজনের কাছে স্রেফ ‘অভিজ্ঞতা’ ছাড়া আর কি কিছু ছিল? এতসব প্রশ্নের উত্তর কে দেবে!

লেখক পরিচিতি

আদ্যোপান্ত স্টোরিটেলার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link