হুঙ্কার চায় অজিরাও

ক্যাঙ্গারুদের ট্রফি ক্যাবিনেট যদি ভালো করে দেখা যায়, দেখা যাবে একটা বড় ট্রফিই তাঁদের অধরা, সেটা হলো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ২০০৭ সালে এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হওয়া ইস্তক অস্ট্রেলিয়া এই অধরা মাধুরী এখনও খুঁজে চলেছে। ২০২১ সালের কুড়ি কুড়ির বিশ্বকাপেও আবার তা পূরণের লক্ষ্যে নামবে, কিন্তু ছুঁতে কী পারবে সেই বিশের বিশ্বকাপের ট্রফি? লাখ টাকার প্রশ্ন সেটাই।

ক্যাঙ্গারুদের ট্রফি ক্যাবিনেট যদি ভালো করে দেখা যায়, দেখা যাবে একটা বড় ট্রফিই তাঁদের অধরা, সেটা হলো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ২০০৭ সালে এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হওয়া ইস্তক অস্ট্রেলিয়া এই অধরা মাধুরী এখনও খুঁজে চলেছে। ২০২১ সালের কুড়ি কুড়ির বিশ্বকাপেও আবার তা পূরণের লক্ষ্যে নামবে, কিন্তু ছুঁতে কী পারবে সেই বিশের বিশ্বকাপের ট্রফি? লাখ টাকার প্রশ্ন সেটাই।

সাম্প্রতিক যা ফর্ম ২০২১ এ অস্ট্রেলিয়া দেখিয়েছে, সেখানে তাদেরকে নিয়ে বিরাট কোনো আশার কারণ নেই, ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা বাংলাদেশ দু’জায়গাতেই ৫ ম্যাচের সিরিজে কচুকাটা হতে হয়েছে ক্যাঙ্গারুদের, তার সাথে আছে আবার বাংলাদেশের কাছে ৬২ রানে অলআউটের লজ্জা।

যদিও এ বছরের অনেক ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়া কখনো ওয়ার্নার, ম্যাক্সওয়েল, স্মিথ কিংবা ফিঞ্চদের ছাড়া নামতে বাধ্য হয়েছে, আর এই সাম্প্রতিক পারফরমেন্স এ তাঁদের রিজার্ভ বেঞ্চ যে আর আগের মত মোটেই শক্তিশালী নয় তা বিলক্ষণ বোঝা গেছে। টি ২০ বিশ্বকাপে চোটমুক্ত থাকলে আশা করা যায় সবাই মাঠে নামতে পারবেন, আর সেটা হলে ২০১০ সালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ডের কাছে ফাইনালে হারার পর এবারের কাপযুদ্ধে অস্ট্রেলিয়া অবশ্যই তাদের সেরা পারফরমেন্সটা তুলে ধরতে মরিয়া থাকবে।

  • শক্তিমত্তা

অস্ট্রেলিয়ার শক্তির সবচেয়ে বড় জায়গা যদি বলা যায় সেটা হলো তাদের বোলিং। ৩ ফাস্ট বোলার স্টার্ক, কামিন্স ও হ্যাজেলউড এবং দুই স্পিনার জাম্পা ও অ্যাশটন আগার যদি তাঁদের সেরাটা দিতে পারেন, অজি বোলিং সামলানো বিপক্ষের কাছে যথেষ্টই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

আরব আমিরশাহীতে হতে চলা টি ২০ বিশ্বকাপের পিচ ও কন্ডিশন উপমহাদেশের মতোই থাকবে ধরে নেওয়া হচ্ছে, সেক্ষেত্রে টুর্নামেন্ট যত গড়াবে পিচ স্লো হয়ে আসতে থাকবে, তখন আগার ও জাম্পা আরো বেশি কার্যকরী হতে পারেন, তৃতীয় স্পিনার হিসেবে থাকছেন মিচেল সোয়েপসন, বিগ ব্যাশ লিগে ব্রিসবেন হিটের হয়ে বা সম্প্রতি বাংলাদেশেও ভালো বোলিং করেছেন এই লেগ স্পিনার। খানিকটা অপরিচিত এই লেগ স্পিনার কিন্তু অধিনায়ক ফিঞ্চের এক বড় অস্ত্র হতে পারেন।

ব্যাটিং এর ক্ষেত্রে বলা যায় ফিঞ্চ – ওয়ার্নার ওপেনিং জুটি ও মিডল ওভারে ম্যাক্সওয়েলের ওপর অনেকটাই নির্ভর করবে অস্ট্রেলিয়া। আন্তর্জাতিক টি২০ তে প্রায় ১৪০ স্ট্রাইক রেটের ওয়ার্নার কিংবা ১৫৯ স্ট্রাইক রেটের ম্যাক্সওয়েল যত বড় ইনিংস খেলতে পারবেন অস্ট্রেলিয়ার সম্ভাবনা ততই বাড়বে।

  • দুর্বলতা 

বোলিং যদি অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় শক্তি হয় সেখানে ব্যাটিং এর দিকে অজিরা কিছুটা পিছিয়েই বলা চলে, আরো ভালো করে বললে স্পিন এর সামনে অজি ব্যাটিং এর আত্মসমর্পন যথেষ্টই চোখে লাগে। অজিরা যে গ্ৰুপে আছে সেখানে বেশ ভালো মানের স্পিনার কিন্তু বিশ্বকাপে তাঁদের খেলতে হবে।

শ্রীলঙ্কা প্রিলিমিনারী রাউন্ডের বাঁধা টপকাবে আশা করা যায়, সেক্ষেত্রে হাসারঙ্গাকে সামলাতে হবে কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে শামসি – লিন্ডে জুটি আবার ইংল্যান্ডের আদিল রশিদ বা ওয়েস্ট ইন্ডিজের হেডেন ওয়ালশ জুনিয়রের মতো ভালো মানের সব স্পিনার দের সামলানোটা অজি ব্যাটসম্যানদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষত রাতের আলোয় যদি ১৬০+ রান চেস করতে হয় সেখানে এই কোয়ালিটি স্পিনারদের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়া ব্যাটসম্যানরা কেমন খেলবেন, তার ওপরই বলা যায় অনেকটা নির্ভর করবে তাঁদের কাপ ভাগ্য।

এছাড়া ওয়ার্নার, ম্যাক্সওয়েল বা কামিন্সদের দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে থাকাটা একটা সমস্যার হয়ে উঠতে পারে বড় মঞ্চে এসে। এমনিতে স্মিথ বা কামিন্স এঁরা টেস্ট বা একদিনের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার জার্সি গায়ে যে পারফরমেন্স দেখান টি-টোয়েন্টি তে সেরকম আহামরি এখনও হয়ে ওঠেননি। এই বিশ্বকাপে ভালো ফল করতে তাই স্মিথ ও কামিন্স এর ছন্দে থাকাটা ভীষণই জরুরি।

  • অস্ট্রেলিয়া দল ও তাঁদের সম্ভাবনা 

অস্ট্রেলিয়া স্কোয়াডের দিকে যদি তাকানো যায় দেখা যাবে খাতায় কলমে যথেষ্টই শক্তিশালী। ওপেনিং এ ওয়ার্নার আর ফিঞ্চের বড় রানের যুগলবন্দী অস্ট্রেলিয়ার জন্য খুবই ভাইটাল হতে চলেছে। তিন ও চার নম্বরে স্মিথ ও মিচেল মার্শ এর ব্যাটের দিকেও অস্ট্রেলিয়া তাকিয়ে থাকবে।

এই বছরে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং এ ধারাবাহিকতার শেষ কথা যদি কেউ হন, সেটা হলেন মিচেল মার্শ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও বাংলাদেশ সিরিজে ১০ ম্যাচে ৩৭৫ রান করেছেন,৩টে হাফ সেঞ্চুরি সমেত। টি২০ বিশ্বকাপেও মার্শ এর দারুন ফর্ম অস্ট্রেলিয়ার আশীর্বাদ হতে পারে, এর পাশাপাশি পঞ্চম বোলারের কাজটাও মার্শ আর ম্যাক্সওয়েলকে ভাগাভাগি করে নিতে হতে পারে।

ব্যাটিংয়ে ফিনিশার হিসেবে ম্যাক্সওয়েল ও ম্যাথিউ ওয়েডকে অনেক বেশি কার্যকরী ভূমিকা নিতে হবে অজিদের বড় ইনিংস গড়তে। তবে একজন খেলোয়াড়ের দিকে অবশ্যই নজর থাকবে, দলের নতুন মুখ জশ ইংলিস। ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যাট হাতে ঝড় তুলতে সিদ্ধহস্ত এই জশ ইংলিস, আন্তর্জাতিক মঞ্চে কেমন ছাপ ফেলেন সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।

সদ্য ইংল্যান্ডে টি-টোয়েন্টি ব্লাস্ট ‘এ’ লেস্টারশায়ারের হয়ে দুটো সেঞ্চুরি করে হইচই ফেলে দেওয়ার পরেই এই মারকুটে উইকেট কিপার ব্যাটসম্যানকে বিশ্বকাপের দলে নেয় অস্ট্রেলিয়া। ইংলিশের দিকে অবশ্যই চোখ থাকবে এই বিশ্বকাপে। এর পাশাপাশি দুর্দান্ত বোলিং ব্রিগেড অস্ট্রেলিয়ার কাপ সম্ভাবনাকে আরো উস্কে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

অজিদের আসল পরীক্ষা হবে গ্ৰুপে ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে এই তিনটে ম্যাচে। এর ওপরই নির্ভর করবে আদৌ গ্ৰুপ লিগের বাঁধা টপকে সেমি ফাইনালে পৌঁছাতে পারবে কিনা। এর মধ্যে অন্তত দুটো ম্যাচে না জিততে পারলে আবারও সেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপশূন্য ট্রফি ক্যাবিনেটই দেখতে হবে অজিদের।

  • অস্ট্রেলিয়া স্কোয়াড 

অ্যারন ফিঞ্চ (অধিনায়ক), ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভ স্মিথ, মিশেল মার্শ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, ম্যাথু ওয়েড, জশ ইংলিস, অ্যাশটন অ্যাগার, প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, অ্যাডাম জাম্পা, জশ হ্যাজেলউড, কেন রিচার্ডসন, মিশেল সোয়েপসন, মার্কাস স্টোয়িনিস।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...