আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতার সংক্ষিপ্ত তালিকায় নজর দিলে সবার আগেই আপনার চোখে পড়বে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর নাম। এরপর ক্রমান্বয়ে আসবে লিওনেল মেসি, আলী দায়ি। তারপরেই একটা নামে এসে থমকে যাবে চোখ; সেটি সুনীল ছেত্রী, জাতীয়তা ভারতীয়। কখনো বিশ্বকাপ না খেলেও রোনালদো, মেসির সঙ্গে একই কাতারে থাকাটা তাঁর মাহাত্ম্যের ঘোষণা দেয়।
কিন্তু তর্কসাপেক্ষে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা ফুটবলারকে মাঠে দেখা যাবে না আর বেশিদিন। দীর্ঘ ১৯ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানতে যাচ্ছেন তিনি; আগামী জুন মাসের ছয় তারিখে কুয়েতের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে বুটজোড়া তুলে রাখবেন। তাঁর এই অবসর বার্তা শোনার পর মন খারাপ হয়নি এমন ফুটবলপ্রেমী বোধহয় ভারতীয় উপমহাদেশে পাওয়া যাবে না।
ক্যারিয়ার জুড়ে এই স্ট্রাইকার দাপট দেখিয়েছেন প্রতিপক্ষের ডিফেন্স লাইনে; কত কত শক্ত বাঁধা ডিঙিয়ে গোলপোস্টের জালের সঙ্গে আলিঙ্গন করেছেন। তবে বয়সের বাঁধা আর পেরুতে পারলেন না তিনি, ৪০ বছর বয়সে এসে তাই বিদায় বলতে হচ্ছে জাতীয় দলকে।
২০০৫ সালের জুন মাসেই ভারতের হয়ে অভিষেক হয়েছিল ছেত্রীর। এরপর একে একে কেটে গিয়েছে অনেকগুলো বছর, এখন পর্যন্ত ১৫০টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। আর গোল করেছেন সব মিলিয়ে ৯৪ টি, এছাড়া অ্যাসিস্ট রয়েছে দশটির বেশি। আবার ঘরোয়া ফুটবলেও অসংখ্য গোল, অ্যাসিস্ট আছে তাঁর ঝুলিতে।
ট্রফি জয়ের দিক থেকেও পিছিয়ে নেই ভারতের অধিনায়ক। এখন পর্যন্ত চার চারটি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন, যেটিকে দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ ভাবা হয়। তাছাড়া আরো তিনটি আন্তর্জাতিক শিরোপার স্বাদ পেয়েছেন তিনি। আবার ঘরোয়া পর্যায়েও ট্রফির বৃষ্টিতে ভিজতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
অবশ্য সুনীল ছেত্রীকে স্রেফ পরিসংখ্যান দিয়ে বিচার করলে অবমূল্যায়ন হবে। ফুটবল তুলনামূলক কম জনপ্রিয় এমন একটা অঞ্চলের হয়েই ইউরোপীয়ান আর লাতিনদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তিনি। নিজের সঙ্গে করে ভারতের পতাকাকে নিয়ে গিয়েছেন বিশ্বের দরবারে; তাই তো পছন্দ-অপছন্দ নির্বিশেষে সবাই তাঁর বিদায় বেলায় মাথা নুইয়ে কুর্নিশ করতে বাধ্য।