বাংলাদেশের রশিদ-ভীতি নাকি আত্মবিশ্বাস

ক্রিকেটে সহজ বলে কিছু নেই; প্রতিটা রান নিতে কিংবা একটা উইকেট তুলতে বাইশ গজে করতে হয় সংগ্রাম। আর সেই সংগ্রাম খুব ছোট বেলা থেকেই দেখে এসেছেন আফগানিস্তান ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন রশিদ খান। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত এক দেশে তাঁর জন্ম, এরপর শরণার্থী শিবিরে বেড়ে ওঠা।

জীবনের সাথে লড়াই করা রশিদ খানের জন্য তাই হয়তো ক্রিকেটের মাঠে লড়াই করা একটু সহজই। কি অনায়াসে তিনি ঘায়েল করে চলছেন বর্তমান বিশ্বের সেরা সব ব্যাটসম্যানদের। আন্তর্জাতিক থেকে ফ্রাঞ্চাইজি; রশিদের দাপুটে পারফরম্যান্সে ভাটা পড়েনি। তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে এই লেগির রেকর্ড একটু বেশিই উজ্জ্বল।

এখন পর্যন্ত নয়টি ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশের মুখোমুখি হয়েছেন রশিদ খান। এরই মাঝে পকেটে পুরেছেন পনেরোটি উইকেট অর্থাৎ প্রতি ম্যাচে ১.৬৬ জন ব্যাটারকে সাজঘরে ফিরিয়েছেন তিনি। বোলিং গড় মাত্র ২২.৮৭ আর স্ট্রাইকরেট ৩৫.৬।

আর ইকোনমিক্যাল বোলিংয়ে এই ডানহাতি ছাড়িয়ে গিয়েছেন প্রত্যাশাকেও। পঞ্চাশ ওভারের ফরম্যাটে যেখানে বোলাররা ওভার প্রতি পাঁচের কম রান খরচ করলেই আত্মতুষ্টিতে ভোগেন; বাংলাদেশের বিপক্ষে সেখানে রশিদের ওভারপ্রতি খরচ মাত্র ৩.৮৫। এই তারকাকে এত রয়েসয়ে খেলার কারণে অন্য প্রান্ত থেকেও উইকেট তোলা সহজ হয়ে যায় আফগানিস্তানের জন্য।

টি-টোয়েন্টিতে আরো বিপদজনক রশিদ খান। মারকাটারি এই ফরম্যাটেও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের বোতলবন্দী করে রেখেছেন তিনি। আট ম্যাচ খেলেই তুলে নিয়েছেন সতেরোটি উইকেট। অর্থাৎ প্রতি দেখাতেই দুইয়ের বেশি উইকেট তুলে নেন এই বোলার। এছাড়া তাঁর বোলিং গড় দশেরও কম আর স্ট্রাইক রেট ১০.৫৯।

রানের খেলা টি-টোয়েন্টিতে রান আটকানোর কাজও দারুণভাবে করেন রশিদ খান। টিম টাইগার্সের বিপক্ষে ৫.৫৩ ইকোনমিতে বোলিং করেছেন তিনি। তাই তো রশিদের বিপক্ষে হাত খুলে রান করাই বাংলাদেশী ব্যাটারদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

এমন কি বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলা একমাত্র টেস্টেও রশিদ খান ছিল অপ্রতিরোধ্য। একাই দুই ইনিংস মিলিয়ে এগারো উইকেট তুলে বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছিলেন লজ্জাজনক এক পরাজয়।

সর্বশেষ টেস্ট ম্যাচ না খেললেও রঙিন পোশাকে বাংলাদেশের বিপক্ষে ঠিকই মাঠে নামবেন আফগান সুপারস্টার। তাই এবার আরেকবারের মত রশিদ নামক অগ্নি পরীক্ষায় নামতে হবে তামিম, সাকিবদের সেটি নিশ্চিত। রশিদ নিজেও হয়তো টেস্ট ম্যাচ না খেলার শোধ তুলতে চাইবেন সাদা বলে।

এশিয়া কাপের আগে আফগানিস্তান সিরিজ বাংলাদেশের জন্য মহাগুরুত্বপূর্ণ; একই কথা বলা যায় আফগানিস্তানকে নিয়েও। দুই দলের কাছেই তাই এবারের লড়াইটা একটু বিশেষ। আর এই বিশেষ দ্বৈরথে ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন একজন রশিদ খান। সতীর্থ মুজিব-উর-রহমানের সঙ্গে জুটি গড়ে বাংলার ব্যাটারদের স্পিন ঘূর্ণিতে বোকা বানানোর পরিকল্পনাই এখন করছেন তিনি।

বিশ্বকাপ স্বপ্নে বিভোর বাংলাদেশকে এবার সামলাতে হবে রশিদ খানের মত একজন বিশ্বমানের স্পিনারকে। এই সিরিজে ভাল করতে তাই আলাদা করে ভাবতে হবে এই আফগানকে নিয়ে। রান পেলে তো ভালোই, ছন্দে থাকা শান্ত, হৃদয়রা পাবেন আত্মবিশ্বাস। কিন্তু ব্যর্থ হলে তাঁদের সামর্থ্য নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠবে।

বিশ্বসেরা ব্যাটারদের বোকা বানানো রশিদ খানকে সামলানো মোটেই সহজ হবে না বাংলাদেশের জন্য সেটি তো পরিসংখ্যানেই পরিষ্কার। তবে খেলা কাগজে কলমে হয় না, খেলতে হয় বাইশ গজে। তাই পুরনো পরিসংখ্যান ঘেঁটে ‘রশিদ জুজু’তে আক্রান্ত হয়ে লাভ হবে না কিছুই।

বরং ইতিবাচক মানসিকতা নিয়েই রশিদ খানদের বিপক্ষে খেলা উচিত; ভয় না পেয়ে রশিদ বাধা জয় করতে পারলেই মিলবে আফগানকে উড়িয়ে দেয়ার স্বাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link